জামালপুর প্রতিপক্ষের হামলায় ইউপি সদস্য খুন

জামালপুর সদর উপজেলার নান্দিনার কাছে লক্ষ্মীচর গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলা ও ছুরিকাঘাতে একজন ইউপি সদস্য আছান আলী মেম্বার খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের আহত হয়েছেন আরো চারজন।
শনিবার দুপুরে ও রাতে উপজেলার লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের লক্ষ্মীরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, পূর্ববিরোধের জের ধরে শনিবার দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় একাধিক দোকানপাট ও বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। নিহত ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন বলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত হয়েছেন আছান আলী মেম্বারের ছোট ভাই কামাল হোসেন (৫৬), আব্দুস সামাদের ছেলে আলী হোসেন (৩৫), হারুন মাস্টারের ছেলে সম্রাট হোসেন (৩০) ও সুমন (২৫)। আহতদের মধ্যে আলী হোসেনকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। অন্যদের জামালপুর ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল ও জামালপুর সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও লক্ষ্মীরচর গ্রামের বাসিন্দা আছান আলী মেম্বার টিসিবির পণ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম তদারক করতে মোটরসাইকেল যোগে বারুয়ামারী বাজারে যান। টিসিবির পণ্য বিতরণ শেষে দুপুরে বারুয়ামারী থেকে মোটরসাইকেলে বাড় ফেরার পথে রায়েরচর মোল্লাপাড়া এলাকায় ২৫-৩০ জনের একটি দল তার মোটরসাইকেল থামিয়ে হামলা চালায় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে আছান মেম্বারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেযোগে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ময়মনসিংহ থেকে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। শনিবার রাত ৮টার দিকে আছান মেম্বার ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান।
এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। নিহত মেম্বারের বিক্ষুব্ধ লোকজন রামদা ও লাঠিসোটা নিয়ে নৌকাযোগে লক্ষ্মীরচর থেকে নান্দিনা বাজারে আসে এবং আব্দুস সামাদের ছেলে আলী হোসেনকে (৩৫) ছুরিকাঘাত ও মারধর করে। এ ছাড়া নাজিম, সম্রাট, সুমনের দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
এরপর অস্ত্রধারী বিক্ষুব্ধরা নান্দিনা পশ্চিম বাজারস্থ অনন্ত সিনেমা হল সংলগ্ন লক্ষীরচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন কবীরের পাকা বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে। এ ঘটনা চলাকালে নান্দিনা বাজারের সব দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুর্হুতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নিহত আছান আলী মেম্বারের ছোটভাই আকবর আলী ও বকুল মিয়া অভিযোগ করেন, ‘লক্ষ্মীরচর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন কবীর, ভাতিজা লাজু, বড়ভাই হারুন মাষ্টার গংদের নির্দেশে ও তাদের সহযোগিতায় সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী একটি দল আমার বড় ভাই আছান আলী মেম্বারকে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক কুপিয়ে হত্যা করে।’ ওদিকে বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন কবীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আছান মেম্বারের সাথে এলাকার অনেকের নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তাকে কে বা কারা কুপিয়ে আহত করেছে আমরা তা জানি না।’
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘আকবর আলী, বকুলসহ তাদের সংঘবদ্ধ একটি দল আমার পরিবারের লোকজনের ওপর ও আমার বাড়িতে এসে হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে।’
এ ঘটনায় জামালপুর সদর থানায় খবর দেয়া হলে থানা থেকে পুলিশের একটি দল নান্দিনায় এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং অভিযোগ নিয়ে গেছেন।
(ঢাকাটাইমস/১সেপ্টেম্বর/মোআ)

মন্তব্য করুন