আমাদের পরিচয় একটাই, আমরা সবাই বাংলাদেশি: তারেক রহমান

দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের পুরনো খেলার পুনরাবৃত্তি করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ‘সংখ্যালঘুর কার্ড দিয়ে অনেক খেলা হয়েছে। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু স্পর্শকাতর বিষয়, আর নির্যাতনের কল্পকাহিনি ফেঁদে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা দেশে-বিদেশে বারবার কারা করেছে, সেটা সবাই জানে। এই পুরোনো খেলার পুনরাবৃত্তি এ দেশে আর করতে দেওয়া হবে না। আসুন, আমরা এগুলোকে হয় কবর দিয়ে নিশ্চিহ্ন করি, নয়তো চিতায় পুড়িয়ে ভস্ম করে দিই।’
দেশব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের এক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে এক ধর্মের উপাসনালয় আরেক ধর্মের অনুসারীরা ঐতিহ্যগতভাবে যুগ যুগ ধরে রক্ষা করছে উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারা (জনগণ) বারবার প্রমাণ করেছে, এ দেশে সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই। আমাদের সবারই এক ও অভিন্ন পরিচয়—আমরা সবাই বাংলাদেশি। শুধু কথায় নয়, কাজেও এর প্রমাণ দিতে হবে যখনই প্রয়োজন হবে।’
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে আর দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে তারা যুগ যুগ ধরে এই সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরুর স্পর্শকাতর বিষয়ে নির্যাতনের কল্পকাহিনি বলে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অপচেষ্টা করেছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কেউ মসজিদে যাই, কেউ মন্দিরে বা প্যাগোডায় কিংবা গির্জায়। তেমনি কারো উৎসব ঈদ, কারো বা দুর্গাপূজা কিংবা বড়দিন অথবা বৈশাখী পূর্ণিমা। সেটাও আমার আপনার সবার অভিন্ন পরিচয় নয়। বাংলাদেশের মানচিত্রে আপনার ঠিকানা হতে পারে পাহাড়ে, কারো আবার সমতলে, কেউ-বা থাকেন হাওরে আবার কেউ ছোট্ট দ্বীপে, নয়তো উপকূলের প্লাবন ভূমিতে কিংবা সুন্দরবনের পাশে। সব ক্ষেত্রে পরিচয় আমাদের একটাই, আমরা সবাই বাংলাদেশি।’
এ দেশে কেউ সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস আর অনুশাসনকে পুঁজি করে যারা ধর্মীয় স্থাপনায় রাজনীতি করবে, বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা ধর্ম-বর্ণের বিভক্তিকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে, নিজ নিজ এলাকায় ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের প্রতিহত করতে হবে।’
কর্মীদের আত্মতুষ্টিতে না ভুগে জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘বিজয় এখনো অনেক দূরে। আমরা গত ১৭ বছর বিরোধী দলে ছিলাম, আজও আছি। এখন আত্মতুষ্টির সময় নয়, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সংকটকালে যেমন দলের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের জনমানুষের প্রত্যাশার ভাষা বুঝে তাদের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করলে বিএনপি দেশের মানুষকে একটা নতুন বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে।’
‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, বেগম খালেদা জিয়ার ত্যাগ, আর শতসহস্র নেতা-কর্মীর আত্মত্যাগের বিনিময়ে বিএনপি জনগণের আস্থা আর বিশ্বাসের যে জায়গায় পৌঁছেছে, কিছু বিপথগামীর হঠকারিতায় সেটা বিনষ্ট হতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে দল আপসহীন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে দল সেটার প্রমাণ রেখেছে’ বলেন তিনি।
রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষনেতা বলেন, ‘প্রায় দুই বছর আগে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছে। যেটা সংশোধন ও পরিমার্জনের জন্য এখনো উন্মুক্ত। যারা যে সংস্কারের প্রস্তাবনাই আনুন, আমাদের সংস্কার প্রস্তাবে সেগুলোর সবই অন্তর্ভুক্ত আছে।’
(ঢাকাটাইমস/০৩সেপ্টেম্বর/জেবি/এসআইএস)

মন্তব্য করুন