মাজার-জাতীয় সংগীত ও দিনাজপুরে মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা
‘মসজিদ, মন্দির, মাজার ভাঙা গর্হিত কাজ। যারা এ সমস্ত কাজ করে, তারা মানবতার শত্রু। তারা ক্রিমিনাল’ — এমন মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমাদের জানালে মুহূর্তের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এছাড়া আসন্ন পূজার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মাদরাসার ছাত্রদের পূজার সময় সম্পৃক্ত করা হলে তারা মন্দির পাহারা দেবে। দুর্গাপূজা আমরা প্রতিটি জায়গায় স্ট্রাইকিং ফোর্স দেব। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করব। তাহলে আমার মনে হয় কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না।’
শনিবার দুপুরে রাজশাহী ইসলামিক ফাউন্ডেশন চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, জাতীয় সংগীত বিতর্ক, দিনাজপুরে মন্দিরের জায়গায় মসজিদ নির্মাণচেষ্টা, হজ ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয় এসময় আলোচনায় উঠে আসে। পরে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।
এসময় জাতীয় সংগীত পরিবর্তন নিয়ে সাম্প্রতিক তর্ক-বিতর্ক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কোনো জায়গায় হাত দেবে না সরকার। এগুলো বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও বারবার বলেছেন, বিতর্ক সৃষ্টি হয় এমন কোনো জায়গায় আমরা হাত দেবো না। আমরা হলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশনকে রিস্টোর করা। পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি এনসিওর করা।’
দেশের ডলার রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইকোনমিতে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ফরেন এক্সচেঞ্জ এসেছে। আরও আসছে। এটাকে যদি আমরা আরও বেশি বাড়াতে পারি, একটা কনজিনিয়াল অ্যাটমোস্ফিয়ার যদি তৈরি হয়, যখনই তৈরি হয়—আমরা নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত দলকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা বিদায় নেব।’
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলার বিচ্ছিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে ড. খালিদ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে বিজয় এসেছে, এরপরে বিদেশি মিডিয়াতে বলা হচ্ছে এখানে সনাতন ধর্ম, বৌদ্ধধর্ম—এসব ধর্মের মানুষের ঘরবাড়ি-উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে। হামলা যে একেবারে হয়নি, সেটা বলব না। তবে সেটা একেবারে বিক্ষিপ্ত। এটা খুব বেশি গুরুত্ব রাখে না।’
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘আমার চিফ অ্যাডভাইজারসহ আমরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছি। একবার না, আমি দুবার গিয়েছি। মতিঝিলে সেনা কল্যাণ সংস্থার পাশে শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ জিও মন্দির একটা দেবোত্তর সম্পত্তি ছিল। আমরা সেটা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উদ্ধার করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের দিয়েছি। স্পষ্ট বলছি, কোনো দেবোত্তর সম্পত্তি যদি কেউ দখল করে, সে যত শক্তিশালীই হোক, আমরা সেটা উদ্ধার করব। অতএব, হামলার ঘটনা সত্য নয়। বিক্ষিপ্ত ঘটনা হতে পারে।’
সম্প্রতি দিনাজপুরে মন্দিরের জমিতে (দেবোত্তর সম্পত্তি) মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘দিনাজপুরের কান্তজি মন্দির, ওখানে কিছু লোক মসজিদ করবে। আমি সকাল ১০টায় জানলাম ডিসির মাধ্যমে খবর পাই যে কিছু লোক ওখানে এসেছে মসজিদ করবে। আমি এক মিনিটের ভেতরে আমাদের অ্যাডভাইজার গ্রুপ আছে, আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। মুহূর্তের মধ্যে র্যাব গিয়ে ঘিরে ফেলেছে। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যুগ যুগ ধরে ধারণ করে আসছি, এটা অটুট থাকবে। আমি শুধু মুসলমানদের উপদেষ্টা নই।’
হজের প্যাকেজ মূল্য কমানোর পরিকল্পনা আছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘হজের সময় হাজিরা যে টাকা দেন, তার একটি পয়সাও আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ে রাখি না। তাদের সঙ্গে আমরা ৮০ জন ডাক্তার, আরও ২০-৩০ জন নার্স সঙ্গে রাখি। ফাস্ট এইড চিকিৎসা দিই। সৌদিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। এই খরচগুলো আমরা হাজিদের কাছ থেকে নিই না। হজের মূল যেটা খরচ বিমান ভাড়া, সৌদি আরবে থাকা-খাওয়া এবং নিরাপত্তার জন্য সৌদি আরবকে একটা টাকা দিতে হয়। এ মাসেই সৌদি হজমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হবে। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছি, তখন টাকা কমিয়ে জনগণের কাছে একটা গ্রহণযোগ্য প্যাকেজ ঘোষণা করতে চাই।’
বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ-ভারতের সুসম্পর্ক বহাল রাখতে চাই। রাজনাথ মন্ত্রীর বক্তব্য আমরা শুনেছি। কিন্তু বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট দল ভারতে গেলে হামলা করবে, এ রকম খবরও মিডিয়াতে আসছে। এটা নিয়ে আমাদের আলাদা ক্রিকেট বোর্ড আছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে—ওনারা এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।’
ধর্ম উপদেষ্টা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে করণীয় নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এই সভার আয়োজন করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আলমগীর রহমান, স্থানীয় সরকারের বিভাগের পরিচালক পারভেজ রায়হান ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর মাওলানা জামাল উদ্দিন সন্দীপী।
(ঢাকাটাইমস/০৭সেপ্টেম্বর/এসআইএস)