বিসিএসের শূন্যপদে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দাবি নন-ক্যাডারদের
৪৩তম বিসিএসের বৈষম্যমূলক নন-ক্যাডার ফলাফল বাতিল করে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু ক্যাডার বঞ্চিত এমন প্রার্থীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা। একইসঙ্গে ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত শূন্য পদগুলোতে নন ক্যাডার প্রার্থীদের সুপারিশ এবং ২০১৪ এর নন-ক্যাডার বিধি অনুযায়ী পরবর্তী চলমান বিসিএসগুলোতে নন-ক্যাডার নিয়োগের দাবি করেছে ৪৩তম বিসিএসে ভাইভা উত্তীর্ণ বঞ্চিত নন ক্যাডার প্রার্থীরা।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান ৪৩ তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রত্যাশীরা।
৪৩ তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রত্যাশীদের সমন্বয়ক সংগঠক মারুফ হোসেনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সাদিয়া তানজিম, ফারুক হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জন প্রার্থী। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তিন বছর পর এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। তবে এই বিসিএসে প্রথমবারের মতো ক্যাডার পদের সঙ্গেই নন-ক্যাডার পদেরও ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলে এতে অধিকাংশ প্রার্থীকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়।
প্রার্থীদের অভিযোগ, আগের বিসিএসগুলোতে বিপুলসংখ্যক প্রার্থী নন-ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। সর্বশেষ ৪১তম বিসিএস থেকে ৪ হাজার ৫৩ এবং ৪০তম বিসিএস থেকে ৪ হাজার ৪৭৮ জনকে নন-ক্যাডারে নিয়োগের জন্য পছন্দের তালিকা দেওয়া হয়েছিল।
অথচ ৪৩তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারে ১ হাজার ৩৪২ পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও ফল প্রকাশ করে মাত্র ৬৪২ জনকে সুপারিশ করা হয়। বাকি পদগুলো বিশেষায়িত হওয়ায় সেগুলো যোগ্যপ্রার্থী না থাকায় শূন্য থাকে। এছাড়া সাধারণ প্রার্থীদের ৫৪টি পদও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে সাধারণ প্রার্থীদের জন্য নবম ও দশম গ্রেডের পদ বাকি ছিল মাত্র ৭৫টি। এতে অধিকাংশ প্রার্থীই চাকরি থেকে বঞ্চিত হন।
তারা বলছেন, ১ হাজার ৩৪২ পদের মধ্যে ৮৮৮টি পদই ৪১তম থেকে ফেরত আসা। সেই হিসাবে নতুন পদ এসেছে মাত্র ৪৫৪টি। অথচ ৪৩তম নন-ক্যাডার প্রার্থীদের সুপারিশের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অধিযাচনের প্রেক্ষিতে ২৯২১টি পদের তালিকা পাঠানো হয়। কিন্তু অদৃশ্য কোনো এক কারণে এসব পদের অধিকাংশই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। যা প্রার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ ও প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।
তাদের দাবি, বিসিএস উত্তীর্ণদের থেকে ৯ম-১২তম গ্রেডে নিয়োগের জন্য নন-ক্যাডার নিয়োগের পূর্বেও উদ্যোগটি ভালো ছিল। বিধি অনুযায়ী, প্রতিটি বিসিএসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর প্রার্থীদের কাছ থেকে নন-ক্যাডারে আবেদন নেয়া হতো। পরের বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগপর্যন্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে যত চাহিদা আসত, সেই অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হতো। এভাবেই নন-ক্যাডারে বিপুলসংখ্যক মেধাবী ছেলেমেয়ে চাকরি পেয়েছেন। তবে ২০২৩ সালের জুন মাসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করা হয়, যা নন-ক্যাডার বান্ধব নয়। পাশাপাশি ২০২০ সালে প্রকাশিত ৪৩তম বিসিএসের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য নয়। পিএসসি নিজেও ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার সময় নতুন বিধি মানেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগের ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকটা বন্ধ হয়েছে। তাই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৯ম থেকে ১২তম গ্রেড পর্যন্ত পদগুলোতে বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়া হলে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধের পাশাপাশি মেধাবীদের যোগ্য স্থানে পদায়নের সুযোগ তৈরি হবে। এতে বৈষম্য ও দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে। তাই আইন বা বিধিমালা তৈরি করে বেশি প্রার্থীর চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে বেশি নিয়োগ দিতে পারে পিএসসি।
এসব বিবেচনায় সংবাদ সম্মেলন থেকে ৪৩তম বিসিএসে নন-কাডারের যোগ্যপ্রার্থীরা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে শূন্যপদে নিয়োগের দাবি জানান।
(ঢাকাটাইমস/০৯সেপ্টেম্বর/জেবি/এসআইএস)