শেখ হাসিনার কাছে প্লট চেয়ে জয়ের সেই আবেদন আবার ভাইরাল
এক দশক আগের ঘটনা। ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্লট চেয়ে আবেদন করেছিলেন বিতর্কিত উপস্থাপক এবং অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়। তার সেই আবেদন আবার ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
পাঁচ বছর আগেও একবার জয়ের সেই আবেদন ভাইরাল হয়েছিল। তখন ছিল আওয়ামী লীগ সরকার। আর এবার ভাইরাল হলো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর। সে যাই হোক, সেই আবেদন নিয়ে কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্চেন জয়।
ওই আবেদনে দেখা যায়, শেখ হাসিনাকে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ নেত্রী ও আদর্শ মা সম্মোধন করেছেন জয়। লিখেন, ‘আপনার সুযোগ্য পুত্রের নামের আরেক পুত্র শাহরিয়ার নাজিম জয়ের সালাম রইল আপনার প্রতি। আমি জয়, বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় নায়ক (টিভি ও চলচ্চিত্র)। আপনার দোয়ায় গত ১৭ বছর ধরে আমি বাংলাদেশের জনগণের বিনোদনের অন্যতম উৎস হয়ে আছি টিভি পর্দায় এবং সুস্থ চলচ্চিত্রে।’
‘আপনি অত্যন্ত দরদী এবং বাংলার মানষের বিপদের বন্ধু। শুধু তাই নয়, গত নির্বাচনকালীন সময়ে আপনি যে বলিষ্ঠ সাহসী এবং জ্ঞানদীপ্ত আদর্শের উপর বলীয়ান ছিলেন তা আমাদের মতো মানুষকে আজীবন আপনার নেতৃত্বকে স্যালুট জানানোর অঙ্গীকার করিয়েছে।’
‘মা, আপনার নিকট একজন শিল্পীর আবেদন, আমার সমসাময়িক সকল শিল্পীই পূর্বাচলে ১০ কাঠা ৫ কাঠা প্লট পেয়েছে। আমি দেশের বাইরে শুটিংয়ে থাকার জন্য অ্যাপ্লাই করতেই পারিনি। পরবর্তীতে ঝিলমিলে অ্যাপ্লাই করলে লটারিতে তা পাইনি।’
‘মা, পূর্বাচলে একটা জমি আমার স্বপ্ন— আমার সন্তানের ভবিষ্যত। আমি আপনার কাছে আবদার করলাম, আপনি আপনার এই সন্তানের আবদার ফেলে দেবেন না আমি জানি (ইনশাআল্লাহ)।
আবেদনের ওই কপি থেকে জানা যায়, সে সময়কার যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের রেফারেন্সে ২০১৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে তিনি সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া আবেদনের উপরে তৎকালীন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর সিল-স্বাক্ষরও দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘মুজিব— একটি জাতির রূপকার’ সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে গত বছর পূবাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পান নায়ক আরিফিন শুভ। একই এলাকায় তিন কাঠার একটি প্লট দেওয়া হয় সিনেমাটির প্রযোজককেও। তবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সম্প্রতি এই প্লট দুটির বরাদ্দ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক।
এদিকে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করে হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে শাহরিয়ার নাজিম জয়কে। এসব ঘটনার পর নতুন করে ভাইরাল প্লট চেয়ে শেখ হাসিনার কাছে করা তার ১০ বছর আগের আবেদন।
এর আগে ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এই বিষয়টা। সে সময় রাজধানীর বনানীর একটি বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে পানির পাইপ চেপে ধরে হিরো বনে যায় নাঈম ইসলাম নামে এক শিশু। তার সাহসিকতা এবং কাজে খুশি হয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি নাঈমকে পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেন।
এ ঘটনা আলোচনায় আসার পর শাহরিয়ার নাজিম জয় একান্ত সাক্ষাৎকার নেন বনানী ট্র্যাজেডির বীর নাঈম ইসলামের। ছেলেটির সঙ্গে তার মা-বাবাও জয়ের ওই সাক্ষাৎকারে ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর পুরস্কারের টাকা নেবে কি না, যদি নেয় সেগুলো কোথায় কীভাবে খরচ করবে— নাঈমকে সেসময় এমনই প্রশ্ন করেছিলেন উপস্থাপক জয়। জবাবে নাঈম জানিয়েছিল, টাকাগুলো সে এতিমখানার অনাথ শিশুদের জন্য দান করে দিতে চায়। ছেলের এ জবাবে সায় দেন তার মা-বাবাও।
এতিমখানায় কেন টাকা দিতে চায়- এমন প্রশ্নের উত্তরে নাঈম বলেছিল, কয়েক বছর আগে খালেদা জিয়া এতিমের টাকা লুট করে খেয়েছে, তাই এই টাকা সে এতিমদের দিতে চায়।
সে সময় শিশু নাঈমকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের প্রশ্ন করেছিল বলে বিতর্ক শুরু হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নেটজনতা বলেছিলেন, শিশুটি নিজ থেকে এসব কথা বলেনি। উপস্থাপক জয় তাকে কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে শিশুটির কথা বলার ধরনেই তা স্পষ্ট।
এই পোস্টের পর সামাজিকমাধ্যমে অনেকেই তখন বলেছিলেন, শেখ হাসিনার নজরে পড়ে পূর্বাচলে প্লট বাগানোর জন্যই সাক্ষাৎকারে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিশু নাঈমের মুখ থেকে খালেদা জিয়ার এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মন্তব্যটি বের করেছিলেন জয়।
(ঢাকাটাইমস/১২সেপ্টেম্বর/এজে)