বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও রাষ্ট্র-সংস্কার প্রসঙ্গ

ডা. মো. গোলাম মোস্তফা
 | প্রকাশিত : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫০

দীর্ঘদিন ধরে চলমান সকল প্রকার বৈষম্য ও সামাজিক অনিয়ম-অবিচার ও অসাম্য দূর করে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়গ্রহণ করার সময় এসেছে আজ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রথমে কোটা-সংস্কার আন্দোলন হলেও পরবর্তীতে এটা দেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে গত ৫ই আগস্ট এক গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের টানা পনেরো বছরের শাসনামলের নিদারুণ পতন ঘটে। বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। তাদের অভিষ্ট লক্ষ্য এখন রাষ্ট্র সংস্কার। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। আমি মনে করি, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে এ ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব সংস্কারই সফলভাবে করতে পারবে- এটা নিয়ে সংশয় থাকা মোটেও অমূলক নয়।

বর্তমান সরকার কী করতে পারবে সেটা ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে- তবে এই সরকার গঠনের সাথে সাথে কিছু দল ও গোষ্ঠীর ব্যাপক দখল বাণিজ্য, শিক্ষক পদত্যাগের নামে ছাত্রদের চরম নেতিবাচক আচরণ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, চুরি, ডাকাতি, কিশোর গ্যাং ও টোকাই শ্রেণির আধিপত্য বিস্তারের ব্যাপক প্রতিযোগিতা দেশে ব্যাপক অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আমি মনে করি, দেশে অরাজগতা সৃষ্টি করে কোনোক্রমেই চলমান বৈষম্য দূর করা যাবে না। আমরা কী দেখলাম! শেখ হাসিনার পদত্যাগের সাথে সাথে গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পবিত্র সংসদ ভবনসহ আরো অনেক সরকারি ভবনে হামলা, লুটপাট ও নজিরবিহীন তাণ্ডব চালায় কিছু কিছু দুর্বৃত্ত।

জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-এর ভাস্কর্যসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সকল ভাস্কর্য একেবারে ধ্বংস করে ফেলা হয়। এসব ধ্বংসযজ্ঞ দুটি কারণে হতে পারে। ইসলাম ধর্মে ভাস্কর্য নির্মাণ নিষিদ্ধ- এ যুক্তিতে ইসলামী উগ্রবাদীদের দ্বারা এটা হতে পারে। কিংবা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে জাতিরজনক হিসেবে না মানা থেকে হতে পারে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট মনে রাখতে হবে- মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ও জাতির জনকের ভাস্কর্য ধ্বংস করা মানে এদেশের মানুষের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৩ বছরের মুক্তির সংগ্রাম স্বাধীনতাযুদ্ধকে ও মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে পরোক্ষভাবে অস্বীকার করা। প্রশ্ন জাগে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের নেতৃত্ব দেওয়া কি অপরাধ ছিল? বিএনপিসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো মুখে যাই বলুক তাদের কাজকর্মে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাধিত নেতা জাতির জনক শেখ মুজিবের বিরোধিতা সর্বজনবিদিত। আমি ব্যক্তিগতভাবে রাষ্ট্র-সংস্কারের পক্ষে; তবে কী ধরনের সংস্কার চাই, সে বিষয়ে এখন আমার মতামত তুলে ধরতে চাই। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও অবকাঠামো অনুসারে নিম্নলিখিত সংস্কারসমূহ আবশ্যক বলে মনে করি।

স্বল্প মেয়াদি সংস্কার:

নির্বাচন ব্যবস্থাসহ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ লক্ষ্যে নির্বাচনটি হতে হবে অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে এবং সৎ-শিক্ষিত লোকদের ইলেকশনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরিতে পেশশক্তি বর্জন ও অবৈধ টাকার ব্যবহার চিরতরে বন্ধ করে একটি লেবেল প্লেইং ফিল্ডের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করতে হবে। আরপিও সংশোধন করে অবাধ অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকালে কোনো বিশেষ বাহিনীর পক্ষপাতিত্বের সুযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে প্রচার ও অন্যান্য খরচ নির্বাচন কমিশনকে একা বহন করতে হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ভিতর তাদের অভ্যন্তরীণ নিজস্ব সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি থাকার বিধান করা যেতে পারে। ধর্মকে রাজনীতি ও নির্বাচনে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। ভোট কেনা-বেচার সংস্কৃতি দূর করতে হবে। মিথ্যা গুজব রটিয়ে প্রচারণার বিরুদ্ধে নির্বাচনের পূর্বেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের বিধান থাকতে হবে। ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনি পরিবেশ সবার জন্য সমান এবং এ ক্ষেত্রে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। মিডিয়া ক্যু যাতে না করতে পারে কেউ তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা বহাল রাখতে হবে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংস্কার ও নির্বাচন পরিচালনার জন্য সকল রাজনৈতিক দলের আনুপাতিক হারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।

আইন সংস্কার:

সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভসমূহ কোনোক্রমেই পরিবর্তন করা উচিত হবে না। সংস্কার কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংযোজন-বিয়োজন করা যেতে পারে। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে ২৩ বৎসরের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কোনো আইন করা যাবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহিদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হারানোর বিনিময়ে অর্জিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র’ (আর্কাইভে সংরক্ষিত) অনুসারে লিখিত সংবিধানের প্রস্তাবনাসহ সকল ইতিহাস অপরিবর্তিত রাখতে হবে। বৈষম্যমূলক কালাকানুনগুলো বাতিল করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে খুব দ্রুততার সাথে মুক্তিপ্রাপ্ত টপ-টেররদের দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পাওয়ার প্রক্রিয়া আইনানুগ কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। কর-ভীতি দূর করতে সহজ ও স্বেচ্ছায় যথাযথভাবে ন্যূনতম রেটে কর প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমে কম লেখালিখিতে কর পরিশোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রশাসনিক ব্যবস্থার সংস্কার:

জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে রুলস অব বিজনেস সংশোধন করতে হবে। পেশাভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। নিয়োগ কার্যক্রমে নারী, মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা কোটা বহাল করতে হবে। জনগণের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সরকারি কাজে লালফিতার দৌরাত্ম্য, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করতে হবে। সকল প্রকার জেলা কমিটিতে ডিসিদের একচ্ছত্র আধিপত্যবিস্তার বন্ধ করতে হবে। জেলা নিয়োগ কমিটিগুলোতে স্ব-স্ব বিভাগের জেলাপ্রধানদের সভাপতি করতে হবে। সর্বোপরি দেশ ঘুস ও দুর্নীতিমুক্ত করতে দ্রুত ক্রিয়াশীল বিভাগীয় সুষ্ঠু কার্যক্রম পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিগুলোতে প্রতিষ্ঠান ও পদ অনুসারে যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে আমেরিকা, কানাডা, জাপান বা যেকোনো উন্নত দেশের মডেল ফলো করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে কয়েকটি মডেল সংগ্রহ করে আমাদের দেশের উপযোগী মডেল বা সিস্টেম চালু করা যেতে পারে।

শুধু শুধু চাকুরিকালীন প্রশিক্ষণ না দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থা চাকুরিমুখী অর্থাৎ যুগোপযোগী তথা প্রয়োজনমুখী করা আবশ্যক। চাকুরি ক্ষেত্রে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে। জেলা ও উপজেলা সমন্বয়সভার সভাপতির দায়িত্ব জনপ্রতিধিকে করতে হবে এবং গৃহীত রেজুলেশন বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনশৃংখলা বাহিনী- বিশেষ করে পুলিশকে যেকোনো মূল্যে দেশের সেবক, কঠোর নিরপেক্ষ আইন প্রয়োগকারী করতে তাদের দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। পুলিশ বাহিনী ভালো হলে দেশের অর্ধেক সমস্যা এমনিতেই দূর হয়ে যাবে বলে মনে করি। স্থানীয় সরকারব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে এরশাদ সরকারের মডেলে উপজেলা পরিষদ কোর্টসহ আনুষাঙ্গিক আবার পূর্ণাঙ্গগভাবে চালু করা যেতে পারে।

নতুন নতুন উপজেলা সৃষ্টি করতে হবে। প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সকল নিয়োগ ও বদলি নিয়মিত ও স্বচ্ছ-নিরপেক্ষভাবে করতে হবে। সকল ধরনের তদবির ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। গণসেবাসমূহ হয়রানিমুক্ত ও দ্রুত সেবা দিতে সকল ক্ষেত্রে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে রোগী আনয়নকারী ও কর্মচারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ, চিকিৎসকদের প্রশাসনিক ক্ষমতাবৃদ্ধিসহ সহায়ক সকল কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে। গণমুখী, নির্ভেজাল দুর্নীতিমুক্ত সহায়ক প্রশাসন গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে হবে।

বিচার বিভাগ সংস্কার:

দেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত করতে হবে। সুস্পষ্ট আইন ও পদ্ধতির মাধ্যমে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে উচ্চ ও নিম্নআদালতে বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। বার কাউন্সিলগুলো দলনিরপেক্ষ করতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণে কাস্টডিতে থাকাকালীন অভিযুক্তের উপর নির্যাতনের সীমাহীন নজির সৃষ্টিকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করার পরিবেশ করতে হবে। কার্যকরভাবে দুর্নীতি দমন কমিশন বাস্তবায়ন করে অর্থ পাচার আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিংসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার প্রকাশ্য অবৈধ ইনকামের পথ চিরতরে বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের বিগত বছরগুলোর সমস্ত দুর্নীতির বিচার করতে হবে।

দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কার:

দেশে শিক্ষা সংস্কার কমিশন করতে হবে। বর্তমানের মানহীন উচ্চশিক্ষা পদ্ধতি, ভর্তি প্রক্রিয়া ও কারিকুলাম সংস্কার করে মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সকল সরকারি ও বেসরকারি ভার্সিটিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া উন্নত, কঠোর, যুগপোযোগী ও কর্মমুখী করতে হবে। কোনোক্রমেই ছাড় দিয়ে ভর্তি করা যাবে না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট ভালো দেখাতে বেশি নম্বর দেওয়ার প্রবণতা আছে বিধায় নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি সিস্টেম বাদ দিতে হবে। ডিগ্রি সমমান পদ্ধতিকে চালুকরণের বিষয়ে নতুনভাবে ভেবে দেখতে হবে।

দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন বিভাগ খুলতে হবে। অযথা উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা বৃদ্ধি না করে নির্ধারিত বিষয়ের আসন বিন্যাস নির্ধারণ করতে হবে। গবেষণা ও ব্যাবহারিক শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। উচ্চশিক্ষায় নৈতিকতা, সততা, দেশপ্রেম ও জনসেবার মানসিকতার বিকাশ উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রম মুল্যায়নে চূড়ান্তরূপে পরিগণিত না হওয়া ব্যতীত সনদপ্রদান করা যাবে না। শুধুমাত্র মানহীন, অসৎ, লোভী ও অমানবিক হওয়ায় প্রায় ১৮% উচ্চশিক্ষিত ছেলে-মেয়ে বেকার থেকে যাচ্ছে দেশে। এজন্য দেখা যাচ্ছে- দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে বিদেশিদের নিয়োগ দিতে বাধ্য হচ্ছে এ ক্ষেত্রে। শুধু চাকুরির জন্য উচ্চশিক্ষাগ্রহণ নিরোৎসাহিত করে উদ্যোক্তা ও গবেষক তৈরি করতে হবে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এক্সট্রা কারিকুলামসম্পন্ন যোগ্যতা অর্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্লোবালাইজেশন-এর যুগে দেশ ও বিদেশের চাহিদা মোতাবেক নতুন নতুন বিভাগ চালু করে মেরিন, সমুদ্রবিজ্ঞান এবং আইসিটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ শিক্ষিত শ্রেণি গড়ে তুলতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা মূলত কারিগরি ও প্র্যাক্টিক্যাল জব অরিয়েন্টেড হতে হবে।

সামাজিকতা ও মাতাপিতার প্রতি কর্তব্যবোধ জাগ্রত করতে হবে শিক্ষার্থীদের চেতনায়। ছাত্রকে শারীরিক শাস্তিসহ কঠোর শাসন করার অধিকার শিক্ষকের থাকতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় প্রবেশে কঠোর নিধিনিষেধ প্রয়োগ করতে হবে। দক্ষতা ও মানসম্পন্ন শ্রমিক শ্রেণি গড়ে তুলে দেশে এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সহজে ও সরকারিভাবে স্বচ্ছতার সাথে দক্ষ শ্রমিক বিদেশে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে হবে। বহুমুখী চাকুরির জন্য কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কৃষিখাত বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের সব চেয়ে বড়ো ব্যয়ের খাত। সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিব্যবস্থা আধুনিক করে এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিনামূল্যে এলাকাভিত্তিক বিতরণ করতে হবে। কৃষকদের নিয়মিত লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার ও নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ সম্পর্কে বিনামুল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্প শিক্ষিত উদ্দোক্তাদের ব্যাপক ট্রেনিং ও ব্যাংক-ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সর্বজনীন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতি ও দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রাথমিক ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে- ব্যক্তি পর্যায়ের প্রাত্যহিক কর্মঅভ্যাস আচার-আচরণ, পার্সোনাল হাইজিন, ধর্ম শিক্ষা, নৈতিকতা, মানবিকতা ও দেশপ্রেমের বুনিয়াদ গড়ার স্তর হলো প্রাথমিক শিক্ষার স্তর। সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন ও শিশু মনোবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত শিক্ষককে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হতে হবে। সুষ্ঠু নিয়োগ ও বদলিতে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষর্থীদের পরীক্ষাভীতি দূর করে প্র্যাক্টিক্যাল শিক্ষায় জোর দিতে হবে। ‘এসো খেলি ও শিখি’ নীতি অবলম্বন করতে হবে। দলগত শিক্ষা, খেলাধুলা, সাঁতার, রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতাগুলো নিয়মিত যাতে হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিকতা, পরোপকার, পিতামাতার প্রতি কর্তব্যবোধ সৃষ্টি করার চেতনা জাগ্রত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর সিস্টেম অনুসরণ করতে হবে। দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের সমৃদ্ধ জাতি ও দেশ গঠনে জাতির ভবিষ্যৎ নতুন কর্ণধার হিসেবে শিক্ষার্থীদের তৈরিতে যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

ডা. মো. গোলাম মোস্তফা: লেখক ও চিকিৎসক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :