তাইওয়ান থেকে হিজবুল্লাহর কেনা পেজারের ভেতর বিস্ফোরক রেখেছিল মোসাদ!
লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের কাছে থাকা ‘পেজার’ (বার্তা প্রেরণ যন্ত্র) বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত এক শিশুসহ ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক হিজবুল্লাহ যোদ্ধাসহ দুই হাজার ৮০০ জনের বেশি মানুষ।
মঙ্গলবার রাজধানী বৈরুতসহ দক্ষিণ লেবানন এবং বৈরুতের পূর্বে বেকা উপত্যকার বেশ কিছু অংশে হিজবুল্লাহ ও সাধারণ নাগরিকদের কাছে থাকা যোগাযোগ করার যন্ত্র ‘পেজার’ হ্যাক করে ঘটানো হয় এ বিস্ফোরণ। এই অভিনব কায়দায় ঘটানো পেজার বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে হিজবুল্লাহ।
লেবাননের একটি জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্র এবং অন্য একটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছ থেকে পাঁচ হাজার পেজার কিনেছিল হিজবুল্লাহ। তাইওয়ানের তৈরি এসব পেজারের ভেতরে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রী এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন।
ইসরায়েলি ও মার্কিন সূত্র সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিয়স ও আল-মনিটরকে বলেছে, হিজবুল্লায় এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনে গেছে, এমন আশঙ্কার পরপরই বিস্ফোরকগুলো বিস্ফোরিত হয়।
এদিকে তাইওয়ানভিত্তিক পেজার প্রস্তুতকারী সেই প্রতিষ্ঠান— গোল্ড অ্যাপোলো কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
অপরদিকে এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এ ঘটনায় লেবাননে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোজতবা আমানি তার একটি চোখ হারিয়েছেন। তার অপর চোখটিও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আহত হয়েছেন।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, পেজার বিস্ফোরণে মোজতবা আমানির আহত হওয়ার প্রাথমিক যে তথ্য দেওয়া হয়েছিল সেটির তুলনায় তার জখম আরও গুরুতর। তাকে চিকিৎসার জন্য তেহরানে নিয়ে যাওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কয়েক মাস আগে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ যোদ্ধাদের স্মার্টফোন ব্যবহার না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন, কারণ ইসরায়েলের কাছে স্মার্টফোন হ্যাক করার বা তাদের থেকে তথ্য বের করার প্রযুক্তি রয়েছে। এরপর থেকেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ‘পেজার’ ব্যবহার করে থাকে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা।
নিরাপত্তা সূত্রের মতে, যে পেজারগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে সেগুলো সর্বশেষ মডেল ব্যবহার করছিল হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। এ বিষয়ে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিজাহ ম্যাগনিয়ার বলেছেন, হিজবুল্লাহ তাদের যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে পেজারের ওপর অনেক বেশি নির্ভর হয়ে পড়েছিল। ফলে আগে থেকেই অনুমান করা হচ্ছিল হিজবুল্লাহ সদস্যদের দেওয়ার আগে পেজারগুলো টেম্পার করা হয়েছিল।
(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/এমআর)