কেমন আছেন সেই আনার-কন্যা ডরিন?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ২২:১১
অ- অ+

ঝিনাইদহ- আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতে নিখোঁজ হওয়ার পর মামলা, তার মরদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার কিংবা ডিএনএ পরীক্ষা- সব ক্ষেত্রেই গণমাধ্যমে সরব দেখা গেছে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে। বাবার খুনিদের বিচার চেয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধানের কাছে গেছেন তিনি। বিরামহীন কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। সেই ডরিন জুলাই থেকে অনেকটা নীরব।

গণমাধ্যমকে এড়িয়ে তো চলছেনই, এমনকি তিনি এখন নিজ এলাকাতেও যান না। মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করাতে ভারতে যাবার কথা ছিল, সেখানেও সাড়া নেই তার। তাহলে এখন কী করছেন তিনি?

কাটিয়ে উঠেছেন শোক। গণমাধ্যমে নিষ্ক্রিয় থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন বেশ সক্রিয় ডরিন। বাহারি রঙ-ঢঙের পোশাক পরে ছবি-ভিডিও পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বানান টিকটকও। গেল এক সপ্তাহে চারটি টিকটক তার ফেসবুকে পাওয়া গেছে, যা গত রবি, সোম, বুধ বৃহস্পতিবার পোস্ট করা হয়। ওয়েস্টার্ন পোশাকে তিনি এসব টিকটক করে ফেসবুকে ছাড়েন।

ডরিনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকাটাইমস জানতে পেরেছে, আগস্টের পর আনোয়ারুল আজিম আনারের পরিবারের কেউ গ্রামে যাননি। সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের এই সাবেক এমপির বাড়িতে হামলা চালায় জনতা। এ সময় তার বাসভবনের সামনের অংশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই সময় তার পরিবারের কেউ সেখানে ছিলেন না।

আনারের বড় মেয়ে অরিন পরিবারসহ গাজীপুর থাকেন। আর ছোট মেয়ে ডরিন স্ত্রী থাকেন ঢাকায়। ডরিনের অতিরঞ্জিত মনোভাবের কারণেই ঢাকার ন্যাম ভবন থেকে আসবাবপত্র বের করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনারের এক নিকটাত্মীয় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বড় মেয়ে অরিন এখন মাকে নিয়ে ঢাকাতেই থাকেন। মামলার ভয়ে তারা কালীগঞ্জ আসেননি। আর আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় নেই, আনারের মামলার খোঁজ নিবেই বা কে? আনারের নেতা-কর্মীরা সবাই এখন নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত। আর ডরিনও সহসা ডিএনএ পরীক্ষা করতে ভারতে যাচ্ছে না।’

বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে ডরিনের সঙ্গে বেশ কয়েক দিন যোগযোগের চেষ্টা করে ঢাকাটাইমস অবশেষে তার সাড়া মিললে ডরিন বলেন, এই বিষয় নিয়ে এখন কোনো কথা বলতে চান না তিনি।

ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ- আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। পরে তার মরদেহের টুকরা উদ্ধার করা বিভিন্ন জায়গা থেকে।

সীমান্তে চোরাকারবার স্বর্ণচোলাচালান দ্বন্দ্বে আনারকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তখন খবর শোনা যাচ্ছিল। পরে গেপ্তার ব্যক্তিদের পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।

গত ১৩ মে ভারতে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন আনার। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একটি লাল গাড়িতে করে আনার কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিবা গার্ডেনে যান কিলার ফয়সালের সঙ্গে। এরপর আর তাকে সেখান থেকে বেরোতে দেখা যায়নি।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আনার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা। সঞ্জিবা ভবনের ফ্ল্যাটে তাকে অচেতন করা হয় ক্লোরোফর্ম দিয়ে। পরে তার দেহ একটি চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে গলাটিপে হত্যা করা হয়। মরদেহ বাথরুমে নিয়ে চাপাতি দিয়ে টুকরা টুকরা করে ব্রিফকেসে ভরে কলকাতার বিভিন্ন ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়। ওই ভবনের সুয়ারেজ লাইন থেকেও কিছু টুকরা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের দাবি এসব টুকরা আনারের, কিন্তু আইনিভাবে সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই মরদেহের পরিচয় শনাক্তে আনারের মেয়ে ডরিনকে ডিএনএ পরীক্ষা করাতে ভারতে যাবার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আর ভারতে যাননি। তাই আইনগতভাবে এখনো স্বীকৃত নয় আনারের মৃত্যু।

আনোয়ারুল আজিম আনার সীমান্তে চোরাকারবার আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোলাচালান চক্রের অংশ ছিলেন, এমন অভিযোগ ছিল। সেই দ্বন্দ্বে আনারকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে প্রথম থেকেই সন্দেহ করা হয়। মূলত সেই সূত্র ধরে পুলিশ গ্রেপ্তার অভিযানে নামে।

আনার কিলিং মিশনে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে অংশ নেওয়া নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। অন্যদের মধ্যে কলকাতায় জিহাদ হাওলাদার সিয়ামকে এবং বাংলাদেশে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সিলিস্তা রহমান, ফয়সাল, মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয় । আটক নয়জনই বর্তমানে কারাগারে আছেন।

(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/এসএস/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কসবায় ৭০ লাখ টাকার ভারতীয় চশমা জব্দ
লিটারে ১ টাকা কমল সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম
নারী সংস্কার কমিশন মানি না, বাধ্য করলে আন্দোলন: জামায়াত আমির
এবার চিন্ময়ের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, শুনানি রবিবার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা