সন্ধান মেলেনি পদ্মায় নিখোঁজ দুই পুলিশ কর্মকর্তার

কুষ্টিয়া কুমারখালীর পদ্মা নদীতে ইলিশ নিষিদ্ধের মৌসুমে জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ আনতে গিয়ে হামলার ঘটনায় নিখোঁজ দুই পুলিশ কর্মকর্তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা পদ্মা নদীতে অভিযান চালান। রাতে বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার নদীতে তাদের অভিযান চলছে।
নিখোঁজ দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার এএসআই সদরুল আলম (৪০) ও এএসআই মুকুল হোসেন (৪০)।
উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের শ্রীখোল এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনায় আহত হন একই থানার এসআই (উপপুলিশ পরিদর্শক) মো. নজরুল ইসলাম, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ছানোয়ার হোসেন ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আনোয়ার হোসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৮ অক্টোবর) ভোর চারটার দিকে একটি নৌকায় স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য ছানোয়ার ও আনোয়ার কুমারখালী থানার ছয়জন পুলিশকে নিয়ে পদ্মা নদীতে যান। এ সময় অবৈধভাবে জাল ফেলে ইলিশ ধরছিলেন জেলেরা। পুলিশের নৌকাটি জেলেদের দিকে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালান।
এ সময় নৌকায় থাকা এএসআই সদরুল আলম ও এএসআই মুকুল হোসেন নদীতে ঝাঁপ দেন। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন।
আহত এসআই নজরুল ইসলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন দেখিয়ে নিজ বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক। গুরুতর আহত দুই ইউপি সদস্য আত্মগোপনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।
জেলেদের ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অসাধু জেলেরা নদীতে মাছ ধরছিল। গভীর রাতে দুই মেম্বর ও ছয় পুলিশ পদ্মা নদীর বেড় কালোয়া এলাকায় নেমে অভিযানের কথা বলে কয়েকজন জেলের কাছ থেকে ইলিশ মাছ জোরপূর্বক নেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিলাইদহের শ্রীখোল এলাকায় দুর্বৃত্তরা পুলিশ ও মেম্বরদের ওপর হামলা চালান। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় জেলেরা এসআই নজরুলসহ দুই পুলিশ ও দুই মেম্বরকে উদ্ধার করেন। তবে অপর দুই এএসআইকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পুলিশের দাবি, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটলে দুই এএসআই নিখোঁজ হন। বাকি চারজন সাঁতরে তীরে আসতে সক্ষম হন।
সরেজমিন ঘটনাস্থল বেড় কালোয়া মোড়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ইবাদত শেখের ছেলে জেলে এজাহার শেখ (৩৫) বলেন, ‘রাতে পদ্মায় ইলিশ ধরছিলাম। সেসময় ছানোয়ার ও আনোয়ার মেম্বরসহ ছয়জন পুলিশ এসে আমার কাছে থাকা মাছ নিয়ে চলে যায়। আমাকে মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে যায় পুলিশ।’
রাতের ওই ঘটনার সংবাদ পেয়ে আহত পুলিশদের উদ্ধারকারী বেড় কালোয়া এলাকার জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘রাত আনুমানিক তিনটার দিকে স্থানীয় জেলেরা প্রথমে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় নদীতে ঝামেলা হচ্ছে। ছানোয়ার ও আনোয়ার মেম্বর এবং পুলিশ এসে জেলেদের কাছ থেকে তেল ও মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে কুমারখালী থানার এএসআই সদরুল আমাকে ফোন করে সাহায্য চান। ১০ মিনিট পরে সদরুলকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তখন একটি নৌকায় চারজন গিয়ে নদীর মধ্য থেকে এসআই নজরুলসহ তিন পুলিশ এবং দুই মেম্বরকে উদ্ধার করি।’
এই জেলে নেতার দাবি, নদীতে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের গায়ে ইউনিফর্ম ছিল না বলে ডাকাত ভেবে তাদের ওপর হামলা হয়।
স্থানীযরা জানান, শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে একটি নৌকা থেকে পাঁচ কেজি ইলিশ নিয়ে যান ইউপি সদস্য ও ওই পুলিশ কর্মকর্তারা। রোববার (২৭ অক্টোবর) একটি নৌকা থেকে আট কেজি ইলিশ নেন ওই পুলিশ সদস্যরা। পরপর দুই রাত এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন জেলেরা বলে জানায় স্থানীয় জেলেরা।
এ বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে ফোন দেওয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে দুই এএসআই নিখোঁজ হয়েছে। বাকি চারজন সাঁতরে কূলে আসতে সক্ষম হন। বিষয়টি তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।’
জেলেদের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ গুলো তদন্তের বিষয়। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে।
ঘটনার দিন রাতে মা ইলিশ রক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তরের বা উপজেলা প্রশাসনের কোনো অভিযান ছিল না বলে জানিয়েছেন কুমারখালীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমাদুল হাসান। (ঢাকাটাইমস/২৯অক্টোবর/মোআ

মন্তব্য করুন