গুলিস্তানে দিনভর যা ঘটল
আজ এক ঘটনাবহুল দিন গেল গুলিস্তানে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয় ঘিরে মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভ, মারধর- এসব সংঘটিত হয়েছে দিনভর। তবে এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। বরং বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন পতিত সরকারের সন্দেহভাজন কিছু কর্মী।
এদিকে নূর হোসেন চত্বর এলাকায় অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তারা আওয়ামী লীগের ভারচুয়ালি ঘোষিত নূর হোসেন দিবসের কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে জমায়েতের ঘোষণা করেছিল গত রাতে। সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলমরা। পাশেই নূর হোসেন চত্বরে বিভিন্ন সংগঠন স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এদিন সকাল থেকে নূর হোসেন চত্বরে বিএনপিসহ ছোট ছোট বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জমায়েত হন। কিন্তু ঘোষণা দিলেও আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়নি সেখানে।
তবে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাবেক সরকারি দলের গোটা কয়েক কর্মীর ঘোরাফেরা শনাক্ত করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। একের পর এক মারধরের শিকার হতে থাকেন সন্দেহভাজনরা। অন্তত ১৫ জন শিকার হন মারধরের।
অনেকটা গণপিটুনির মতো এই মারধরের তাদের কারও শার্ট-প্যান্ট ছিড়ে খুলে পড়ে। কেউ মারপিট থেকে বাঁচতে দুই হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গি করেন, কেউ পুলিশের আশ্রয় পান। তবে প্রায় সবাই বেদম মারপিটের শিকার হন। তাদের পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
মূলত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা দখল নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। বেলা ১১টার পর থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে তারা এই কার্যালয়ের সামনে আসেন| এ সময় তারা শেখ হাসিনার ফাঁসি দাবি করেন। একই সঙ্গে সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীর সন্ধান করেন তারা। কেননা, রাত থেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার ছিল আওয়ামী লগের কর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এবং আশপাশে অবস্থান নেবেন।
এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মোতায়েন ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য।
এর মধ্যেই কিছুক্ষণ পরপর ‘ধরা পড়েন’ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্দেহভাজন কর্মী। হই হই করে সেদিকে ছুটে যান জনতা। এক পশলা মারধর শেষে সেখানে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে সন্দেহভাজনকে। এভাবে কিছু সময় অন্তর অন্তর পিটুনির দৃশ্য তৈরি হয় দিনভর।
জনতার রোষের মুখে পড়া সন্দেহভাজন অনেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য মোবাইল ফোন চেক করেন আন্দোলনকারীরা। কারও কারও মোবাইল ফোনে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যায়। আর তাতেই কয়েক জোড়া হাত এগিয়ে যায় তার দিকে। পুলিশের বাঁশি বাজে। আরও একটু তাকে দেখা যায় পুলিশের গাড়িতে, হয়তো গায়ের কাপড় ছেড়া, কিংবা একেবারে খালি গা।
সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এবং এর আশপাশে দেখা গেছে ছাত্র-জনতা আর বিএনপির নেতাকর্মীদের। ওদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি শেষ হয়ে যায় বিকাল নাগাদ।
নূর হোসেন দিবস সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ভারচুয়াল ঘোষণা ঘিরে উত্তেজনার কারণে ওই এলাকায় দিনভর যানচলাচল ছিল অন্য দিনের চেয়ে অনেক কম।