কপ-২৯ সম্মেলন
জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সীমিত ডিকার্বনাইজেশন সক্ষমতা সম্পন্ন বেশিরভাগ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের সবুজ শিল্প বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও রেয়াতি ডিকার্বনাইজেশন ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে ক্লাইমেট ক্লাবের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।
প্রধান উপদেষ্টা আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনে জার্মানি ও চিলি আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের জলবায়ু ক্লাব নেতাদের সভায় দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন আরও বেশি দ্রুত ও টেকসই উপায়ে হ্রাস এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ৪৩ শতাংশ কমাতে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-শূন্যে পৌঁছানোর জন্য উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে ব্যাপক আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
তিনি বিশেষ করে উদীয়মান বাজার ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোতে প্রমাণিত কম নির্গমন প্রযুক্তি প্রদর্শন ও স্থাপন করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘অনেক ডিকার্বনাইজেশন প্রযুক্তির জন্য উলে¬খযোগ্য অগ্রিম বিনিয়োগের প্রয়োজন। অর্থায়নের সীমিত সুযোগ রয়েছে এমন দেশ বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো সবচেয়ে দুর্বল উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ধরনের অধিক মূলধন বিনিয়োগ করা শিল্পের জন্য একটি বাধা হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের শিল্পের জন্য রেয়াতি অর্থের সুযোগ লাভকে উৎসাহিত করে শিল্প ডিকার্বনাইজেশনের ক্ষেত্রে অর্থায়নের জন্য আর্থিক ব্যবস্থার বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬.৮ এর অধীনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
আমদানিতে সুষম কার্বন খরচ আরোপ করে একটি সুষম ক্ষেত্র তৈরি করতে কার্বন মূল্য নির্ধারণ বা সীমা সমন্বয় করের ওপর আন্তর্জাতিক চুক্তির উপর জোর দিয়ে, ২০০৬ সালের নোবেল পিস লরিয়েট বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে (এলডিসি) তাদের বিশেষ পরিস্থিতি ও উন্নয়ন চাহিদার প্রেক্ষিতে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।
শিল্পের ডিকার্বনাইজেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন বিশ্বব্যাপী স্বল্প-কার্বন প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্ভাবনের জন্য প্রণোদনা কমিয়ে দিতে পারে, কারণ কিছু খাত টেকসই ব্যবস্থা অনুশীলনের তুলনায় ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিতে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এসব ঝুঁকি প্রশমিত করার জন্য, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সাথে ডিকার্বনাইজেশন প্রচেষ্টার ভারসাম্য বজায় রাখতে কার্বন সীমা সমন্বয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মতো নীতিগুলি অপরিহার্য।’
তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে, এসব নীতি বাংলাদেশের মতো বিশেষভাবে দুর্বল উন্নয়নশীল দেশের কোম্পানিগুলির প্রতিযোগিতামূলকতাকে প্রভাবিত করতে পারে। অধিক নির্গমন নীতির কারণে উচ্চ উৎপাদন খরচের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী তাদেরকে কম প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
তিনি আরও বলেন, ‘অতএব, স্বল্পোন্নত দেশগুলির জন্য তাদের বিশেষ পরিস্থিতি ও উন্নয়ন চাহিদার কারণে অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, খণ্ডিত উপায়ে উচ্চাভিলাষী প্রশমন নীতিগুলো শিল্প কর্মকা-কে এমন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে কার্বন মূল্যের কোনো নীতি নেই বা কম কঠোর, যা কার্বন নির্গমনের দিকে ধাবিত করে এবং এইভাবে সামগ্রিক বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসের বৈশ্বিক লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
তিনি বলেন, ইইউ প্রস্তাবিত কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (সিবিএএম) রপ্তানিকৃত পণ্যগুলোতে নির্গমনের মান পরোক্ষভাবে প্রয়োগ করে এবং কার্বন নির্গমন প্রতিরোধ করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে তাদের জলবায়ু নীতি শক্তিশালী করতে উৎসাহিত করতে পারে।
ড. ইউনূস বলেন, একটি ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবর্তনকে সমর্থন করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ও উদীয়মান বাজারে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/ইএস)
মন্তব্য করুন