বলপ্রয়োগ নয়, সচেতনতার মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব

ড. আনোয়ার হোসেন
  প্রকাশিত : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:১৪
অ- অ+

কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। কৃতকার্যের পরিমাপ দিয়ে শক্তি নির্ণয় করা হয়। শক্তিকে সৃষ্টি অথবা ধ্বংস করা যায় না, কেবলমাত্র এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তন করা যায়। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে অর্জিত কার্য সাধন এবং সচেতনতার মাধ্যমে অর্জিত কার্যের পরিমাণের ফলাফল হিসেবে দেখতে পাওয়া যাবে সচেতনতার মাধ্যমে বেশি কার্য সাধন হয়েছে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কার্যসাধন কম হয় এবং এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বখে যেতে পারে বা বিগ্রে যেতে পারে। কোনো কিছুর উপলব্ধি বা জ্ঞানকে সচেতনতা বলে। ধারণাটি প্রায়ই চেতনা সমার্থক, অর্থাৎ সচেতনতার মাধ্যমেই চেতনার সৃষ্টি হয়। সচেতনতা কোনো কিছুকে সংবেদনশীল করার অনুরূপ। সচেতনতা হলো অনুপ্রেরণা, যা আচরণ শুরু করার জন্য একজন ব্যক্তির বাহ্যিক বা ভিতরে কাজ করে। পৃথিবীর কম সংখ্যক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা সেলফ মোটিভেটেট বা অটোমেটিক সচেতন।

আমি খুবই অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, বাংলাদেশে যে কোনো ধরনের দাবি-দাওয়া সামাজিক সমস্যা যেমন-মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, জঙ্গি, ইভটিজিং, যৌতুক, বাল্যবিবাহ নারী নির্যাতনের মতো ঘটনায়ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়শ নিয়ন্ত্রণের জন্য এত বেশি শক্তিপ্রয়োগ করছেন যে প্রাণহানির ঘটনাও গণমাধ্যমে স্থান পাচ্ছে। আমার মনে হয়, ধরনের শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে হিতে বিপরীত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ খুবই বন্ধুপ্রবণ। বলপ্রয়োগ করলে তারা বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে চায় না, বরং দূরে সরে যায়। মূল্যায়ন করে সম্মান দিয়ে বুঝিয়ে কথা বললে তারা কথা শোনে। বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো, তারা চায় তাদেরকে মূল্যায়ন করুক। চাপ সৃষ্টি করলে বা আঘাত করলে তারা সকল যুক্তি ভুলে প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়। শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা মনে করলে তাদের চেষ্টা থাকে শাস্তিদাতাকে শায়েস্তা করা। সর্বনিম্ন চেষ্টা থাকে তাকে এড়িয়ে চলা। তারা বিষয়টিকে ইগোতে নেন। নিজে অপরাধ করলেও অপরাধী এবং তার অনুসারী/শুভাকাক্সক্ষীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিতাহিত জ্ঞান ভুলে শাস্তিদাতাকে শত্রু মনে করে।

আমি মনে করি উপরোক্ত কারণে বাংলাদেশ সরকার এসব সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করলেও ক্রমবর্ধমান হারে সমস্যা বেড়েই চলছে। শক্তিপ্রয়োগ না করে এসব সমস্যা বহুলাংশে সমাধান করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। মানুষের কাছাকাছি থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সফলতা পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ইসলামসহ সকল ধর্মে প্রাথমিক অবস্থায় বলপ্রয়োগ না করে সচেতনতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করার উৎসাহ প্রদান করেছেন।

এবার শপথ নিয়ে সেলফ মোটিভেটেট বা নিজ হতে সচেতন এক টগবগে যুবকের সত্য ঘটনা নিম্নে সবিনয়ে উপস্থাপন করা হলো। ২০১১ খ্রি. ২৩ বছর বয়সী টগবগে যুবক ঢাকা হতে কোনো এক জেলা শহরে ইভটিজিং, মাদক, জঙ্গি, যৌতুক নারী নির্যাতনবিরোধী গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম করার উদ্দেশে পৌঁছলেন। কনকনে শিশির ভেজা শীতের সকালে যুবক একাকী বের হলো নতুন শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। দিনটি ছিল শুক্রবার। যুবক রাস্তায় বের হতেই তাকিয়ে দেখে রেশমী চুড়ি হাতে এক উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের বালিকা হেঁটে যাচ্ছে আপন মনে। যুবক বালিকার মায়াজালে কুপোকাত। যুবক বালিকার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হলেও ভাবে আমি এখানে এসেছি ইভটিজিংবিরোধী প্রচারণা করতে। তবে আমি কিভাবে নিজে ইভটিজিং করবো। অনেকটা নিজের মনের ওপরে জোর খাটিয়ে নিবৃত্ত থাকে। এরপর যুবক ওই শুক্রবারের মতোই পরবর্তী ২১টি শুক্রবার রাজধানী হতে ওই শহরে গমন করেন বালিকাকে দেখতে। যুবক বালিকার নাম রাখেন মায়াবতী। যুবক তিনবার একই সড়কে মায়াবতীকে দেখতে পান। কিন্তু যুবক শপথ নিয়ে ইভটিজিংবিরোধী কার্যক্রম করে বিধায় বালিকাকে আপন মনে চলতে বিরক্ত করলে শপথ ভঙ্গ হতে পারে মর্মে প্রতিবারই নিজেকে নিবৃত্ত রাখে। এরপর যুবক বিদেশ গমন করেন। বিদেশ ফেরত যুবক বাংলাদেশে এসে পুনরায় একই শহরের একই সড়কে বারবার গমন করেন তার মায়াবতী বালিকা দেখতে। কিন্তু পন্ডশ্রম। তবে আশাহত হননি। যুবক প্রহর গুনতে থাকে। একই কার্যক্রমে যুবক সিলেট উপশহর গমন করেন। যুবককে আশার আলো দেখান ২০১৬ সাল। সিলেট উপশহরের হোটেল স্টার হতে বের হতেই দেখতে পান তার বহুল কাক্সিক্ষত মায়াবতী সঙ্গীসহ হেঁটে যাচ্ছেন। বালিকা এখন যুবতীতে পরিণত হয়েছে। মায়াবতী আপাদমস্তক ঢাকা এবং সঙ্গী থাকায় যুবক শ্রদ্ধাশীল হয়ে আবারো কথা বলা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখে। যুবক পরবর্তীতে ২৩ বার মায়াবতীতে দেখতে সিলেট উপশহর গমন করেন, কিন্তু প্রতিবারই আশাহত হয়ে ফিরে আসতে হয়। যুবক আবার শূন্যে হাবুডুব খাচ্ছে। যুবক জানে না মায়াবতীর পরিচয় কি? কোথায় খুঁজবে তাকে? দীর্ঘ বিরতির পর প্রাতিষ্ঠানিক কাজে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কোনো এক জেলার ওয়েব সাইটে যুবক দেখতে পান তার দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশিত মায়াবতীর ছবি, নাম মোবাইল নম্বর। দীর্ঘ ১৩ বছরের অপেক্ষার পর এই সুযোগ হয়তো বা শেষ সুযোগ এই ভেবে যুবক এবার নাছোড়বান্দা, এবার সে কথা বলবেই। যুবক অজুহাত খুঁজতে থাকে কিভাবে তার মায়াবতীর সঙ্গে কথা বলা যায়। কিন্তু বৈধ কোনো কারণ ব্যতীত একজন সরকারি কর্মচারীকে বিরক্ত করা আদৌ সমীচীন নয় মর্মে যুবক বৈধ একটা কারণ বের করার চেষ্টা করে। যুবক সিদ্ধান্ত নেয় মায়াবতীর কার্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো এক বিষয়ে আবেদনপত্র প্রেরণের মাধ্যমে মায়াবতীর সঙ্গে হয়তো কথা বলা সম্ভব হবে। যুবক বৈধ কারণ খুুঁজে পেলেও বিপত্তি বাধে আবেদনটা মায়াবতীর ডেস্কে যাওয়ার নিশ্চয়তা নিয়ে। যুবক ঢাকা হতে কুরিয়ার সার্ভিসে আবেদন প্রেরণ করার একদিন পরই বিতরণ শাখায় কল করে অনুরোধ করে মায়াবতীর (জেএম) শাখায় আবেদনটি প্রেরণ করতে। কারণ স্বাভাবিকভাবে যুবকের আবেদনটি জেনারেল শাখায় যাওয়া নিশ্চিত। অতঃপর যুবকের জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে তার পত্রটি মায়াবতীর টেবিলেই পৌঁছে যায়। যুবক কথা বলার বৈধ কারণ পেয়ে যায়। যুবকের যেন তর সইছে না। কখন সে কথা বলবে। কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পরবর্তী কার্যদিবসে সকাল ১০টা বাজতেই তের বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রথম লেনাদেনার সুযোগ গ্রহণ করল। সেলফোন থেকে কল দেওয়া মাত্রই মায়াবতী আবেদনের বিষয়টি জানেন বলে উত্তর দেন। পত্রটি জেনারেল শাখা করবে না বলে প্রশ্নবোধক উত্তর দেন মায়াবতী। যুবক মুচকি হেসে প্রত্যুত্তরে বলেন আপনার শাখা থেকেই হবে। মায়াবতী জানতে চান কি করতে হবে। যুবক ফরওয়ার্ডিং করে দিতে বললেন। মায়াবতী প্রত্যুত্তর করলেন ফরওয়ার্ড করে দিবো? যুবক মুচকি হেসে বললেন চিঠি করে দিতে হবে। যে কথা সে কাজ। যুবক মনে মনে হাসলেন একই অফিসে এক শাখা হতে আরেক শাখায় এই বিষয়ে চিঠি করার কি প্রয়োজন। এই যেন মিনিট ২৩ সেকেন্ডের সেলফোনের কথাতেই একে অপরের ১৩ বছরের ভাষা বুঝতে পেরেছে। এই বাক্য লেনদেনের কার্যদিবস পরে যুবক দেখতে শুনতে পেল মায়াবতী এক মহাবিপদে নিমজ্জিত হয়েছে। যুবক সেকেন্ড দেরি না করেই মায়াবতীকে হোয়াটসঅ্যাপ হতে মেসেজ দিলো মে আল্লাহ ব্লিস ইউ। যুবক আবার মেসেজ দিলো বিষয়ে আমি আপনাকে সহযোগিতা করতে চাই, নিরাপদে থাকবেন। যেন ঐশ্বরিক সিদ্ধান্ত। বিধাতা হয়তো ১৩ বছরের অপেক্ষা গুছিয়ে জনকে কাছে নিয়ে আসতে এমন পরীক্ষা ফেলল। মায়াবতীর বিপদ আরো ঘনিয়ে আসলে যুবক এক সেকেন্ড দেরি না করে তার মায়াবতীর সহযোগিতা চাওয়ার অপেক্ষা না করে একই সমুদ্রে ঝাঁপ দিলো। যুবকও এখন একই সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন। যুবক ইভটিজিংবিরোধী কার্যক্রমের শপথ রক্ষার্থে দীর্ঘ ১৩ বছর পর মায়াবতীর সন্ধান পেলেও তার পিছনে সশরীরে ঘোরাফেরা করেননি। হোয়াটসঅ্যাপ এবং -মেইলে কয়েকটি মেসেজ তার শেষ সম্বল হয়তো তীরে এসে জন এক সঙ্গে বিজয়ের হাসি হাসবেন। যদি লক্ষ্য থাকে অটুট তবে দেখা হবে বিজয়ে। বিষয়টি এমন হয়েছে যে কোনো মানুষই মার খেতে চায় না, কিন্তু হাত-পা বেঁধে মারলে মার খেতে হয়। শপথ নিয়ে কার্যক্রম করলে শপথ রক্ষার্থে এমন মার তাকে হয়তোবা সারা জীবনই খেতে হবে। যুবক পণ করেন যৌতুক তো দূরের কথা, মায়াবতী কেবলমাত্র পরনের পোশাকটি এবং হাতে একটি বেলিফুল অথবা গাঁদাফুল, খুব বেশি হলে একটি গোলাপ নিয়ে এসে যদি বলে আই লাভ ইউ, এতেই জীবন আমার সার্থক হবে। মায়াবতীর পোশাকটিও তার বাবা-মাকে ফেরত দেওয়া হবে। আর যদি মায়াবতীর মনের মণিকোঠায় ইতিমধ্যে স্থান পেয়ে থাকে অন্য কেউ তবে গুড লাক মায়াবতী। যুবক বলে আমি ছায়া হয়ে থাকবো চিরকাল। যুবক আহ্বান করেন হে মায়াবতী আপনার অপেক্ষায় রইলাম এবং থাকবো দীর্ঘকাল। যুবক আরও বলেন আমার এই উড়ো চিঠি হয়তো শিগগিরই পৌঁছে যাবে আপনার নিকট। বাহক হিসেবে বেছে নিলাম নীল আকাশ, নির্মল বাতাস আর অন্তজাল। যুবকের আহ্বান আসুন মাদক, ইভটিজিং, যৌতুক এবং নারী নির্যাতনবিরোধী দেশ গড়তে শপথ নিই। কখনোই শপথ ভঙ্গ নয়। তবে যুবক আশাবাদী মায়াবতী তারই হবে।

নিম্নে সচেতনতার শক্তি এবং শক্তি কিভাবে কাজ করেও কার্যক্রমটি কি উপায়ে করা যেতে পারে তা তুলে ধরা হলো: কোমলমতিরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হন। যে কোনো বিষয়ে তাদেরকে শেখালে তা সহজে অন্তরে গেঁথে যায় এবং দীর্ঘদিন মনে রাখে। বিশেষ করে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সংগে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করা সম্ভব হলে তাদের মধ্যে বিষয়টি এন্টিবডি থেকেও বেশি কাজ করে। আমি মনে করি সচেতনতার শক্তি পারমাণবিক বোমা হতেও শক্তিশালী। কারণ বোমা দিয়ে কেবলই ধ্বংস করা সম্ভব। কিন্তু সচেতনতার মাধ্যমে যে কোনো কিছু গড়াসহ সবকিছুই করা সম্ভব। যেমন- ভুল সচেতনতার শক্তিপ্রয়োগ করে ভালো ছেলেকেও জঙ্গিতে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে অতীতে। যে জীবনে কোনোদিন বিড়ি-সিগারেট পর্যন্ত স্পর্শ করেনি তাকে শক্তিপ্রয়োগ করে মাদক সেবনকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীতে পরিণত করা সম্ভব হচ্ছে। সচেতনতার শক্তিপ্রয়োগ করেই পচা টমেটো পচা কমলা ভালো বলে বিক্রি করতে সক্ষম হচ্ছেন অসৎ ব্যবসায়ীরা। তাহলে সচেতনতার শক্তিপ্রয়োগ করে কেন যে কোনো ভালো কাজ সহজে করা সম্ভব হবে না?

কোমলমতিদের সংগে সচেতনতামূলক কর্মসূচি করা সম্ভব হলে প্রথমত তারা নিজেরাই সচেতন হতে পারে। পরবর্তীতে কোমলমতিদের মাধ্যমে অন্যান্য কোমলমতি ছাত্রছাত্রী, অতঃপর পুরো দেশবাসীকে সচেতন করা সম্ভব। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সংগে সচেতনতা কিভাবে কাজ করে তা আমার দৃষ্টিকোণ থেকে উদাহরণ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ সবিনয়ে তুলে ধরা হলো: উদাহরণ-: কোনো ব্যক্তি দেয়ালে বল নিক্ষেপ করছেন। যতবার নিক্ষেপ করছেন বলটি প্রতিবার তার দিকে ফিরে আসছে। বলটি প্রতিবার যাওয়া-আসার শব্দ নিক্ষেপকারী প্রথম শুনছেন। উদাহরণ-: কোনো ব্যক্তি কারো বিয়েতে মেহেদী বাটছেন। বিয়ে হোক বা না হোক ওই ব্যক্তির হাত ঠিকই লাল হচ্ছে। উদাহরণ-: মুয়াজ্জিন আজান দিচ্ছেন। মুসল্লিগণ নামাজ পড়তে না আসলেও মুয়াজ্জিন নির্দিষ্ট সময়ে নামাজে উপস্থিত হচ্ছেন। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি কাউকে আহ্বান করলে আহ্বানকারী প্রথমেই কথাটি শোনেন এবং বারবার বলার কারণে বিষয়টি তার অন্তরে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায়। তিনিই তা বেশি ধারণ করেন এবং ওই অনুযায়ী কাজ করেন। ব্যক্তিটি যদি কোমলমতি অর্থাৎ ছাত্রছাত্রী হয় তাহলে আবেগে আপ্লুত হয়ে নিজে করবেন এবং অপরকেও করানোর চেষ্টা করবেন। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সংগে দুর্নীতি, মাদক, ইভটিজিং, জঙ্গি, যৌতুক নারী নির্যাতনবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচিসমূহ উপরোক্ত উদাহরণের মতোই কার্যকর হয়। মাদকদ্রব্য আসক্তসহ অন্যান্য সামাজিক সমস্যার ক্ষেত্রে পূর্বে আসক্ত ছিল এমন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে উপস্থিত করে তার মুখ থেকে মাদকাসক্ত থাকাকালীন দুর্দশার ঘটনাগুলো সকলকে শোনানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষকেই অন্যদের সচেতন করতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষ আরেকজন মানুষের দর্পণ হিসেবে দুনিয়াতে আসছেন। নগণ্য সংখ্যক লোক প্রাকৃতিকভাবে সচেতন। যেমন-একজন বাবা তার পাওনাদার দরজার কড়া নাড়াতে থাকায় ঘরের ভিতর অবস্থান করে তার সন্তানকে বলছেন দরজা খুলে পাওনাদারকে বলবে আব্বু বাসায় নেই। অথচ ওই বাবা ইতিপূর্বে সন্তানকে পড়িয়েছেন, সদা সত্য কথা বলবে, কখনোই মিথ্যা কথা বলবে না। ৯৯. শতাংশ সন্তানই বাবার নির্দেশনা অনুযায়ী দরজা খুলে বলবে বাবা বাসায় নেই। অন্যদিকে বাবাকে বলবে আমি মিথ্যা কথা বলতে পারব না, সংখ্যাটি এত নগণ্য হবে যে, যা উল্লেখ করার মতো হবে না। তা হয়তবা মাইক্রোস্ক্রোপে দেখতে হবে। অর্থাৎ অটোমোটিভেটেড (প্রাকৃতিকভাবে সচেতন) সংখ্যাটি নেই বললেই চলে। আমার নিকট বিষয়টি এমন মনে হয় যে, আমাদের ফসলি জমিতে আগাছা-পরগাছামুক্ত করতে হলে অনেক শ্রমঘাম বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ যতই চেষ্টা করা হোক না কেন জমিকে আগাছা-পরগাছা-পরজীবীমুক্ত রাখাটা দুষ্কর হয়ে যায়। অন্যদিকে ফসল উৎপাদন করতে অনেক পরিশ্রম করেও সফলতা পাওয়া কঠিনই বটে। শক্তিপ্রয়োগ করে ফসল উৎপাদন করা বা আগাছামুক্ত রাখা আদৌ সম্ভবপর হচ্ছে না। শক্তিপ্রয়োগ করে নিজের জমিতে সাধারণ একটা ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না হলে মানুষের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল প্রাণীকে কিভাবে শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোনো কিছুই শূন্য বা খালি থাকে না। যেমন- জমিতে যদি আমরা ফসলের বীজ বা আগাছার বীজ কোনোটাই বপন না করে থাকি, জমি কিন্তু খালি থাকবে না। কিছুদিনের মধ্যেই আগাছায় ভরে যাবে। তদ্রƒ আমরা মানব জাতি যদি নিজেকে পরিচর্যা না করে থাকি, আমাদের মধ্যে কিছু একটা জন্ম নিবে। আর তা হলো কু-প্রবৃত্তি। যার মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন ধরনের মন্দ কাজ হতে থাকবে, যা আদৌ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভবপর হবে না। তা একমাত্র সচেতনতার শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টা, আবু সাঈদ এবং রিসেট বাটন পুশ করা বিষয়ে সরকারি চাকরিজীবী হয়েও সদ্য সাবেক সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাচ্ছুম ঊর্মি ব্যতিক্রমধর্মী মন্তব্য করে বসলেন। তিনি একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং নবীন কোমলমতি হওয়ায় অকপটে কোনো ধরনের রাঘঢাক না করে কথাগুলো বললেন। তার সরলতা, অসচেতনতা এবং একজন সাদা মনের মানুষ হওয়ায় কিছু গণমাধ্যম ইউটিউবার তার মুখ থেকে আরো কিছু কথা আদায় করে নিতে সক্ষম হলেন, যা হতে তিনি এবং বাংলাদেশ সরকার উভয় পক্ষই বিব্রতবোধ পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেন, যা সরকার এবং একজন কর্মচারী সম্পর্কের মধ্যে বেমানান। একজন নবীন কর্মচারী হিসেবে সরকার সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার পূর্বেই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে সচেতন করতে পারত। প্রধান উপদেষ্টা তৎক্ষণাৎ পরবর্তী ব্যাখ্যার ন্যায় রিসেট বাটন বিষয়ে জাতিকে যদি ব্যাখ্যা প্রদান করতেন, তবে ঊর্মি এবং অন্যরা সচেতন হতে পারতো এবং ধরনের মন্তব্য করে বসতো না। আমি এই লেখাগুলো পুনরায় লেখার অন্যতম কারণ হলো অদ্যাবধি কেউ তার রাজনৈতিক পরিচয় মিথ্যাভাবেও আবিষ্কার করতে পারেনি। কাজেই তার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। সরকার প্রথম এবং শেষবারের মতো তাকে সতর্ক করে এবং আচরণবিধি মনে করিয়ে দিয়ে সচেতনতার মাধ্যমে ঘটনার ইতি টানতে পারে। একজন নবীন নারী কর্মকর্তা হিসেবে দুটি মামলার বাদিগণ তাদের ছোট বোন মনে করে হলেও মামলা করার পরিবর্তে উকিল নোটিশ প্রেরণের মাধ্যমে ঊর্মিকে সচেতন করতে পারতেন। বাংলাদেশ সরকার সকল সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে আচরণবিধি প্রতিপালন সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচি সম্পন্ন করে ভবিষ্যতে ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি হতে পরিত্রাণ পেতে পারে বলে মনে করি।

লেখক: আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহলের প্রেসিডেন্ট

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নোয়াখালীতে আ. লীগের দুই নেতাসহ গ্রেপ্তার ১৫
বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ ইতালি আনকোনা শাখার নতুন কমিটি গঠন 
চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি, ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস 
সরাইলে আমগাছ থেকে পড়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা