হাজারো বিঘার মাটি খেয়েছে প্রভাবশালীরা

ছোট হয়ে যাচ্ছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৩
অ- অ+

নুরুল ইসলাম, সালথা-নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

গত এক যুগে ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার বেশির ভাগ খাল-বিল নদী-নালা ও হাজারো বিঘা পতিত জমির মাটি খেয়েছে প্রভাবশালীরা। সেই মাটিখেকোরা এখন হানা দিয়েছে পাট-পেঁয়াজ ও ধানের জমিতে। তারা খননযন্ত্র (ভেকু মেশিন) দিয়ে তিন ফসলি উর্বর জমির ওপরের এক-দেড় হাত (টপ সয়েল) মাটি তুলে নিয়ে বিক্রি করছে ইটভাটায়।

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মাটিখেকোদের। এতে একদিকে জমির উর্বরতা হারিয়ে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে সালথা-নগরকান্দার মানচিত্র।

সম্প্রতি সালথা ও নগরকান্দার কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, শত শত বিঘা পতিত জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিন ফসলি জমিতেও খনন করা হয়েছে পুকুর। কোনো কোনো জমির উর্বর অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির এসব মাটি কেটে ট্রলি গাড়ি ও ড্রাম ট্রাকের সাহায্যে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে।

মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে সড়কগুলোয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শত শত ফিটনেসবিহীন অবৈধ ট্রলি গাড়ি। এসব গাড়ির অবাধ চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ট্রলিতে বহন করা মাটি সড়কের ওপরে পড়ে থাকছে। বৃষ্টি হলেই সড়ক ভিজে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আবার অনেক সড়কের পিচও উঠে যাচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।

সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফসলি জমি ধ্বংসের জন্য শুধু মাটি ব্যবসায়ীরাই দায়ী নয়, জমির মালিকরাও দায়ী। কারণ মাটিখেকোদের নগদ টাকার লোভে পড়েন তারা। এই সুযোগে নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কিনে নেয় মাটি ব্যবসায়ীর।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে নগরকান্দা উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের রাধানগর পুর্বপাড়া খালের ব্রিজ এলাকায় নবা সিকদারের বাড়ির পাশে ও একই এলাকার হাসান সিকদারের জমি থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালিয়া গ্রামে শাহজাহান মেম্বার ও মুরাদ, যদুনন্দী ইউনিয়নের বড় খারদিয়া গ্রামে অবুঝ, সাধুহাটি গ্রামে রিপন ফকির ও কাবুল, গট্টি ইউনিয়নের দোহারগট্টি গ্রামে মাহমুদ, মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কাগদী বাতাগ্রাম গ্রামে গৌরঙ্গ মালো ও ওবায়দুর এবং আটঘর ইউনিয়নের জয়কাইল গ্রামে জামাল হোসেন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অবাধে ইটভাটায় বিক্রি করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র এসব মাটিখেকোদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মাটি বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিচ্ছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাফী বিন কবির বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে বছরজুড়েই অবৈধ মাটি ও বালু কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তার পরও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি চক্র মাটি কেটে বিক্রি করছে। দিনে অভিযান চালালে রাতে মাটি কাটছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ফসলি জমি রক্ষায় জমির মালিকদেরও সচেতন হতে হবে। তারা লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করছেন। যে কারণে আজ ফসলি জমি ধ্বংসের পথে। এ ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া জরুরি।

সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, ‘ যেখানে মাটি কাটার খবর পাওয়া যায়, সেখানেই অভিযান চালানো হয়। যেসব জায়গায় মাটি কাটা হচ্ছে, খোজখবর নিয়ে সেখানে অভিযান চালানো হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২১ডিসেম্বর/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এক মোটরসাইকেলে যাচ্ছিল ৪ বন্ধু, ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল দুজনের
ভারতের সামরিক অভিযানের দ্রুত, দৃঢ় ও কঠোর জবাব দেওয়া হবে: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান
সুনামগঞ্জে কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় ৯০টি গরুসহ নৌকা জব্দ 
সাবেক আইজিপি মোদাব্বির হোসেন চৌধুরীর ইন্তেকাল 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা