লিবিয়ায় দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রাণ গেল মাদারীপুরের রাকিবের 

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৪১| আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫৬
অ- অ+

দালালের খপ্পরে পড়ে উন্নত জীবনের আশায় ইতালিতে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন মাদারীপুর সদরের রাকিব মহাজন নামে এক যুবক। দীর্ঘ তিন বছর লিবিয়ার গেমঘরে দালাল চক্রের ভয়াবহ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অবশেষে মারা গেছেন বলে খবর পেয়েছে তার পরিবার। সেই খবরে নিহতের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পাড়া প্রতিবেশীরা।

বুধবার রাতে রাকিব মহাজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার পরিবার।

নিহত রাকিব মহাজন মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের পখিরা গ্রামের নাজিম উদ্দিন মহাজনের ছেলে। এদিকে প্রশাসন থেকে আইনগত সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

নিহত রাকিবের পরিবারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তিন বছর আগে উন্নত জীবনের আশায় মাদারীপুর সদর উপজেলার মৃত ফটিক মৃধার ছেলে জাহাঙ্গীর মৃধার প্রলোভনে পড়েন রাকিব মহাজন। জাহাঙ্গীর মৃধা তার ভায়রা শরীয়তপুরের পালং থানার ধানুকা ইউনিয়নের ছোট বিনোদপুর গ্রামের সোহাগ মাতব্বরের মাধ্যমে ২৭ লাখ টাকায় ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি করে। সে মতে ২৭ লাখ টাকা দিয়ে তিন বছর আগে রাকিব পাড়ি জমান লিবিয়ায়। তবে লিবিয়ার নেওয়ার পরে গেমঘরে রেখে আরো টাকার জন্য নির্যাতন চালাতে থাকে সোহাগ মাতব্বর। পরে রাকিবের বাবা নাজিম উদ্দিন মহাজন ধার-দেনা করে আরো ৫ লাখ টাকা দেন সোহাগকে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। লিবিয়ায় দুই বছর চার মাস অসহ্য যন্ত্রণা-নির্যাতন সহ্য করে কাটিয়েছেন রাকিব।

আরো জানা যায়, দুই বছর চার মাস পরে সোহাগের গেমঘর থেকে বেরিয়ে আরেক দালাল সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাক্ষ্মন্দী গ্রামের মাজেদ খলিফাকে ধরে রাকিবের পরিবার। তাকেও ৮ মাস আগে ১৫ লাখ টাকা দেয় গেমঘর থেকে বের করার জন্য। কিন্তু তিনিও টাকা নিয়ে গেমঘরেই নির্যাতন চালায় সোহাগকে। এক পর্যায়ে রাকিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। রাকিবের মৃত্যুর খবর দালাল মাজেদ খলিফাই তার পরিবারকে জানান। দেন প্রাণহীন দেহের কয়েকটি ছবি-ভিডিও। এতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো পরিবারসহ এলাকাবাসীর মধ্যে।

এ ব্যাপারে নিহত রাকিবের বাবা নাজিম উদ্দিন মহাজন বলেন, ‘দফায় দফায় টাকা দিয়ে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। এ পর্যন্ত সোহাগ আর মাজেদকে ৪৫ লাখ টাকা দিয়েছি। তারপরও এখন আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। আমার ছেলেকে না খাইয়ে মেরে ফেলছে। কয়েকদিন আগেও আমার ছেলে ভিডিওতে তার নির্যাতনের কথা বলেছে। আর বাঁচার জন্য আকুতি করেছে। কিন্ত আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না।’

এভাবে দালাল চক্রের কারণে উঠতি বয়সী রাকিরের মৃত্যুকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবার ও এলাকাবাসী। তারা দোষীদের বিচার দাবি করেন। সেই সাথে রাকিবের মরদেহ দেশে আনারও দাবি করেন।

নিহতের ছোট চাচা শাহজালাল মহাজন বলেন, ‘নির্যাতন করে তারা আমার ভাতিজাকে হত্যা করেছে। এখন দালালরা বলে অসুস্থ হয়ে রাকিব মারা গেছে। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’

তবে অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় দালাল জাহাঙ্গীর মৃধা বলেন, ‘আমার ভায়রা সোহাগ বিধায় আমাকে জড়ানো হচ্ছে। কেউ বলতে পারবে না যে, আমি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আর ওই ছেলে অসুস্থ হয়ে লিবিয়ায় মারা গেছে। আমার ভায়রা বরং সেখানে ট্রিটমেন্ট করেছে। এর বেশি কিছু জানি না।’

আর মাজেদ খলিফার বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলেছেন, মৃত্যুর বিষয়টি জানার পরে তার পরিবার বাড়ি থেকে পালিয়েছে।

এদিকে মাদারীপুর জেলা পুলিশের তথ্য মতে, মাদারীপুর গেল বছর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জেলার অন্তত শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ২০০ মামলা দায়ের হয়েছে পাঁচ শতাধিক দালালের বিরুদ্ধে। কিন্তু মামলায় জামিন পেয়ে পুনরায় দালালিতে যুক্ত হয় তারা। তাই এদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান। তিনি বলেন, বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি মাদারীপুরে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। আমরা জেলা পুলিশ এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্সে আছি।

(ঢাকা টাইমস/২৩জানুয়ারি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা