আবরার ফাহাদ আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের একটি জার্নি: আসিফ মাহমুদ

আবরার ফাহাদ শুধু একটি নাম নয়, আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের একটি জার্নি বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেছেন, আগ্রাসনবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ের এই জার্নির একটি অন্যতম অর্জন হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে কুষ্টিয়ায় শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।

আবরার ফাহাদ ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে তাকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ঘোষিত হয়েছে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৫। দেশের এই সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারে নাম এসেছে আবরার ফাহাদের।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আগ্রাসনবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে আবরার ফাহাদ একটি নতুন ধাপ সংযোজন করে দিয়ে গেছেন। আমরা সেই লড়াইটা তাকে সামনে রেখে চালু রাখতে চেয়েছি। আবরার ফাহাদ শুধু একটা নাম না। আগ্রাসন বিরোধী লড়াইয়ের একটি জার্নি। সেই জার্নির একটা অন্যতম অর্জন হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এদেশের তরুণেরা জীবন দেওয়ার প্রেরণা পেয়েছেন আবরার ফাহাদের কাছ থেকে- এ কথা উল্লেখ করে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আগ্রাসন থেকে মুক্তির জন্য এদেশের তরুণেরা ঝাপিয়ে পড়েছেন রাজপথে। অবশেষে আমরা আগ্রাসী পরাশক্তির বাংলাদেশীয় সবচেয়ে বড় খুঁটি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করেছি।’

এ সময় উপদেষ্টা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সহস্র শহীদ এবং আহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে, আগ্রাসনবিরোধী সংগ্রামে আবরার ফাহাদসহ আরও যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের বাংলাদেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মনে রাখবে।

কুষ্টিয়া জেলা স্টেডিয়ামের নাম আবরার ফাহাদের নামে রাখা হয়েছে জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সারাদেশে আরও যত সরকারি স্থাপনা আছে, আমরা সেখানে আত্মত্যাগকারী বীরদের, শহীদদের স্মরণ করার জন্য তাদের নামে নামকরণ করব।’

ফ্যাসিবাদী সরকার আবরার ফাহাদের স্মৃতি মুছে দিতে চেয়েছিল বলে জানান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। বলেন, ‘তারা কোনো কর্মসূচি পালন করতে দিত না। কর্মসূচি পালন করতে গেলে জেল-জুলুমের শিকার হতে হতো। কিন্তু যারা আত্মত্যাগ করেন তাদের নাম মুছে ফেলা যায় না। এটি আবারও প্রমাণিত হলো। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর এখন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ আবরার ফাহাদকে স্মরণ করে।’

উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, দেশে ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। নানা ছোটখাটো ইস্যুতে জনগণকে বিভক্ত করার, একে অপরের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে পরাজিত শক্তি। নানা ধরনের উগ্রবাদীদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই এ ধরনের যেকোনো প্রচেষ্টাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কঠোরভাবে দমন করবে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী, যুগ্ম সচিব আমিনুল ইসলাম ও জেলার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ।

এর আগে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা শহীদ আবরার ফাহাদের গ্রামের বাড়ি কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের রায়ডাঙ্গা গ্রামে যান। সেখানে তিনি সকাল ১১টা ৫ মিনিটে আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন। পরে আবরারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর আবরার ফাহাদ জামে মসজিদের সম্প্রসারণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অসম চুক্তি এবং পানি আগ্রাসন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের জেরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

(ঢাকাটাইমস/৬মার্চ/মোআ)