চাঁদপুরের ৪০০ বছরের বাখরপুর জামে মসজিদ

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৮:৪৯| আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৮:৪৯
অ- অ+

চাঁদপুর জেলার সাথে নৌ যোগাযোগ সহজ হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ঐতিহ্য রয়েছে। যার ফলে এই এলাকায় ভারতীয় মুসলমানদের আগমন ঘটে। তারা অস্থায়ীভাবে এই জেলায় অবস্থান করলেও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে যায়। ওইসব স্থাপনার অংশই হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায় চুন-সুরকি দিয়ে তাদের তৈরি করা মসজিদ। মুগল আমলের মসজিদ নামে এসব স্থাপনাগুলো পরিচিত। তেমনি চাঁদপুর সদর উপজেলার বাখরপুর গ্রামে রয়েছে প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যের ধারক বাখরপুর জামে মসজিদ। গায়েবি মসজিদ নামেও স্থানীয়ভাবে পরিচিত এটি।

সম্প্রতি সরেজমিনে ওই মসজিদ এলাকা ঘুরে, মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও মুসল্লিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এই মসজিদ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য।

জেলা সদর থেকে এই মসজিদের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। সদরের দক্ষিণে সদর-হাইমচর সড়ক হয়ে চান্দ্রা বাজার চৌরাস্তা থেকে দক্ষিণে বাখরপুর গ্রাম। মূল সড়ক থেকে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর পশ্চিম পাড়ায় মেঘনার নদীর খুবই নিকটেই মসজিদের অবস্থান।

স্থানীয়দের তথ্যমতে এই মসজিদের নির্মাণ সালের সঠিক তথ্য সংরক্ষিত নেই এবং পাওয়া যায়নি। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা ও প্রবীণ লোকদের মতে মুগল আমলেই এই মসজিদ নির্মাণ হয়েছে। কারণ এটির নির্মাণ শৈলী দেখে তাই মনে হয়।

মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজে জড়িতদের মধ্যে রয়েছেন মুসল্লি নাজির পাটওয়ারী (৬৫)। তিনি বলেন, মসজিদ কমপ্লেক্সটি ২৮ শতাংশ জমির ওপর। এর মধ্যে তিন গম্বজ বিশিষ্ট মসজিদ ভবনটি ৬ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। এরপর বিগত প্রায় ৩০ বছর পূর্বে মসজিদের মুসল্লি সংকুলান না হওয়ার কারণে মসজিদ সংলগ্ন পূর্ব দিকে ৮ শতাংশের মধ্যে ৫ তলা ভিতের ওপর একতলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশে ঈদগা ও পুকুর মিলিয়ে রয়েছে ১৪ শতাংশ।

মুগল আমলের নকশায় এই মসজিদটি তিন গম্বজ ও ৩ তারা বিশিষ্ট। আর এই নির্মাণ কাজ হয় শুধুমাত্র চুন-সুরকরি দিয়ে। পুরো মসজিদের চারপাশে ২৮টি চুন-সুরকির তৈরি খুটি রয়েছে। আর এই খুটির সাথে দেয়ালের পুরুত্ব সোয়া ৩ফুট। পাঁচটি দরজা ও মূল মিম্বারের দুই পাশে দুটি মেহরাব। সোয়া ৩ফুট পুরুত্বের জুল বিম দুটি। মসজিদটি যখন নির্মাণ হয়, তখনকার নির্মাণ শৈলী অনেকাংশ এখন আর নেই। শুধুমাত্র তিনটি গম্বজের ভেতরের অংশে কিছু হাতে তৈরি নকশা রয়েছে বিভিন্ন রঙের।

মুসল্লিরা জানালেন, এই মসজিদের মূল অংশে প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। বর্তমানে বর্ধিতাংশসহ প্রতি জুমায় প্রায় ৩০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি হাফেজ আহম্মেদ পাটওয়ারী বলেন, এই মসজিদ নির্মাণের প্রকৃত সাল তারিখ কেউ বলতে পারে না। তবে আমরা ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানতে পারি মুগল সাম্রাজ্যের আমলে বণিকরা এই দেশে ব্যবসা করতে আসে, তখনই তারা এসব মসজিদ নির্মাণ করে। এই মসজিদের অনেক ঐতিহ্য ও সুনাম রয়েছে। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন মসজিদটি দেখার জন্য আসে।

গত দুই মাস পূর্বে এই মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে যোগ দিয়েছেন পাশবর্তী দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা শফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই এই মসজিদ স্থানীয়দের কাছে বেশ পরিচিত। অনেক লোক দূর থেকে এই মসজিদ দেখার জন্য আসেন এবং এখানে এসে নামাজ পড়েন। সাধারণ মানুষ এই মসজিদকে উচিলা করে নিয়ত মানতও করেন। ওইসব লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন তাদের উপকার হয়েছে। এই মসজিদের খেদমত করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, বাখরপুরে এই ধরনে একটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী মসজিদ আছে জেনেছি এবং মসজিদটি দেখতে খুবই সুন্দর। এই মসজিদ আরো কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সেটি সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা হবে এবং মসজিদ যাতায়াতের রাস্তাটি সংস্কারের জন্য দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এই বিষয়ে আমি ওই ইউনিয়নের প্রশাসককে অবগত করবো।

(ঢাকা টাইমস/১৫মার্চ/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বালিয়াকান্দিতে মাদকবিরোধী অভিযানে ৩৪০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সবাই উচ্ছ্বসিত: মির্জা ফখরুল
সাগর-রুনির হত্যাকারী দুজন, তবে শনাক্ত করা যাচ্ছে না: টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন
বাংলাদেশ বিমানে নয়, কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা