ভেষজ ডেউয়া ফল মানসিক চাপ ও সানস্ট্রোক রোধ করে

ডেউয়া ফল গ্রামাঞ্চলের অত্যন্ত পরিচিত ফল। যেসব দেশি ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর তাদের মধ্যে ডেউয়া অন্যতম। অঞ্চলভেদে ফলটি মানুষের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত। ডেউয়া, ডেলোমাদার, ডেউফল, ঢেউফল ইত্যাদি নামেও অনেকে চেনেন একে। ডেউয়া গাছের বৈজ্ঞানিক নাম আরটোকারপাস লেকুচা। এটি মোরাসিই পরিবারভুক্ত ক্রান্তীয় চিরসবুজ বৃক্ষ। ডেউয়া গাছ বহু শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট, বড় আকারের বৃক্ষ। প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়, এর ছাল ধূসর-বাদামী রঙের। স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা। স্ত্রী ফুল আকারে বড়, বোঁটা ছোট ও মসৃণ। এ ফুলে পাঁপড়ি নেই, ছোট গুটির মত। স্ত্রী ফুল থেকে ফল হয়। ডেউয়া ফলের ভেতরে কাঁঠালের মতো ভেতরে হলুদ রঙের ছোট ছোট কোষ থাকে। পাকা ফল অতি মোলায়েম হয়। পাকা ফলের ভেতরের শাঁস লালচে হলুদ হয়। ডেউয়ার শারীরিক গঠন কিছুটা এবড়ো থেবড়ো হয়ে থাকে। স্বাদ টক আর মিষ্টি মিশেল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেউয়া ফলে থাকে জিঙ্ক, কপার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন। পাশাপাশি এটি অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ। শুধু ফল নয়, ডেউয়ার বীজও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে ফল বা বীজ অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।
পুষ্টিগুণে ডেউয়া অনেকাংশে কাঁঠালের সমান। শরীরের জন্য নানা প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে এতে। ডেউয়ার পুষ্টিগুণ: খনিজ- ০.৮ গ্রাম, খাদ্যশক্তি- ৬৬ কিলোক্যালরি, আমিষ- ০.৭ গ্রাম, শর্করা- ১৩.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ- ০.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১- ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২- ০.১৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি- ১৩৫ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম- ৩৪৮.৩৩ মিলিগ্রাম। জেনে নিন ভেষজ ডেউয়া ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা-
সানস্ট্রোক রোধ করে
গরমের দিনে সানট্রোক রোধ করে। মরিচ, লবণ, চিনি দিয়ে ডেউয়ার ভর্তা খেলে সানস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
লিভার ভালো রাখে
লিভার ভালো রাখে এমন খাবার খাওয়া জরুরি। ডেউয়া ফল তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ফলের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ডেউয়া কাঁচা এবং পাকা দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের কারণে সৃষ্ট পেটব্যথা কমাতে সাহায্য করে ফলটি। এটি যকৃতের নানা অসুখ নিরাময়েও সাহায্য করে।
পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে
পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখতে ডেউয়া ফল খেতে পারেন। বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে রাখতেও কাজ করে এই ফল। এতে থাকা ফাইবার এই কাজে সাহায্য করে। ডেউয়া ফলের বীজ শুকিয়ে গুঁড়া করেও খেতে পারেন। এতে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়।
মুখে রুচি আনে
অরুচিতে ভুগছেন? ভরসা রাখুন ডেউয়ায়। দু-তিন চামচ ডেউয়ার রসের সঙ্গে একটু লবণ আর গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে দুপুরবেলা ভাত খাওয়ার আগে খান। মুখে রুচি আসবে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়
ডেউয়াতে রয়েছে পটাশিয়াম। যা রক্ত চলাচলে সহায়তা করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
ত্বকের রুক্ষতা দূর করে
ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে ব্যবহার করুন ডেউয়া গাছের ছালের গুঁড়ো। এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করে এবং ব্রণের দুষিত পুঁজ বের করে দেয়।
মেদ কমায়
মেদভুঁড়ি কমাতে ডেউয়া খেতে পারেন। ফলের রস এক থেকে দেড় চামচ ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে এক মাস খেলে উপকার পাবেন।
রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
ত্বক, চুল, নখ, দাঁত ও মাড়ির নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে।
পেটের গ্যাস কমায়
পেট পরিষ্কার করতে এই ফল খুবই কার্যকর। দেড় চামচ পাকা ডেউয়ার রস আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে অল্প চিনি দিয়ে প্রতিদিন একবার করে এক সপ্তাহ খেলে পেটের গ্যাস বা বায়ুর সমস্যা পুরোপুরি দূর হবে।
দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোগ দূর করে
ডেউয়ার ভিটামিন 'সি' ত্বক, চুল, নখ, দাঁত ও মাঢ়ির নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে।
বমি বমি ভাব দূর করে
বমি বমি ভাব দূর করতে দূর করতে ডেউয়া খান অচিরেই বমি বমি ভাব দূর হবে।
মানসিক চাপ কমায়
নানা কারণেই মানসিক চাপ অনুভব হতে পারে। তবে এই চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ডেউয়া ফলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য বজায় রাখে। যে কারণে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আসে অনেকটাই।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে
চোখের সমস্যায় ভুগলে ডেউয়া খেতে পারেন। এটি খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ডেউয়া ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন এ। এই ফল রাতকানা রোগের আশঙ্কা কমাতেও কাজ করে।
চুল ভালো রাখে
চুল ভালো রাখতে কাজ করে উপকারী ফল ডেউয়া। এই ফল ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। এই দুই ভিটামিন চুলের জন্য বিশেষ উপকারী। এগুলো চুল ভালো রাখতে কাজ করে। নিয়মিত ডেউয়া খেলে চুলের গোড়া শক্ত এবং চুল ঘন হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৯ মে/আরজেড)

মন্তব্য করুন