শীতে জটিল রোগ নিরাময় করে এক গ্লাস গরম পানি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪| আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭
অ- অ+

হিমেল হাওয়ায় শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে শীত বয়ে যাচ্ছে। শীতে কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। কারণ শীতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাওয়ায় শরীরে কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। বিশেষ করে শীতকালে মানুষের পানির অভাব খুব একটা অনুভব হয় না। তবে শীতকালে পানি কম খেলে তার কিছু লক্ষণ ঠিকই প্রকাশ পায়। এই যেমন কোনো অসুখ ছাড়াই মাথা যন্ত্রণা ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে শরীর কিংবা অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। শীতকালে সাধারণত ঠান্ডা থেকে এড়িয়ে চলতে অনেক উপায় অবলম্বন করি আমরা। গায়ে গরম পোশাক থাকে, খাবারও থাকে গরম। কিন্তু খাবার খাওয়ার সময় কিংবা পিপাসা পেলে পানি পান করতে হয়। শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত পান জরুরি। কারণ মানুষের শরীরের ৭০ শতাংশই গড়ে উঠেছে পানি দিয়ে।

শীতকালে স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই নিয়মিত কুসুম গরম পানি খাওয়ায় প্রাধান্য দেন। কারণ নানা উপকারিতা রয়েছে নিয়মিত কুসুম গরম পানি খাওয়ার অভ্যাসে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশানে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা বলছে, শীত কিংবা গ্রীষ্মে গরম পানি খাওয়ার কোনো অপকারিতা নেই। বরং রয়েছে নানা উপকারিতা। তবে এর জন্য বেশি গরম পানি খাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র ঈষদুষ্ণ বা কুসুম গরম পানিতেই শরীরে ক্ষতি না হয়ে মিলবে অসংখ্য উপকারিতা।

শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক এমনকি গর্ভাবস্থাতেও এ উপকারিতা পাওয়া যায়। ডায়েটেশিয়ানদের মতে, নিয়মিত ঈষদুষ্ণ পানি খাওয়ার অভ্যাসে মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে, হজম শক্তি বাড়ে, বুকব্যথা এবং সর্দিকাশি হওয়ার শঙ্কা থাকে না। বন্ধ নাক খুলে যায়।

প্রাকৃতিক উপায়ে শরীর পরিষ্কার করে বিষাক্ত টক্সিন বের করতেও ভালো কাজে আসে হালকা বা কুসুম গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস। এতে ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আপনি কি জানেন? নিয়মিত কুুসুম গরম পানি খাওয়ার অভ্যাসে ত্বকে বয়সের ছাপ কিংবা বলিরেখা সহজে পড়তে পারে না।

প্রতিদিন হালকা গরম পানি নিয়ম করে নিয়মিত খেতে পারলে একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। মাইগ্রেন, উচ্চ রক্তচাপ, নিম্ন রক্তচাপ, জয়েন্টের ব্যথা, হঠাৎ হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি ও হৃাস, কাশি, শারীরিক অস্বস্তি, গাটের ব্যথা, হাঁপানি, শিরায় ব্যথা, জরায়ু ও মূত্র সম্পর্কিত রোগ, পেটের সমস্যা, ক্ষুধার সমস্যা এবং মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে গরম পানি।

নিয়মিত রাত ১০-১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে অন্ত দুই গ্লাস গরম পানি পান করতে হবে। প্রথম দিকে দুই গ্লাস পানি পান করতে সক্ষম না হলে সকালে এক গ্লাস এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম পানিপান করুন। তাতেই ফিরবে স্বাস্থ্যের হাল। ঘুমও হবে ভালো। গরম পানি পান করার পরে অন্তত ৪৫ মিনিট কোনো কিছুই খাওয়া যাবে না।

গরম পানি থেরাপি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে যে সব স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর সমাধান করবে তা উল্লেখ করা হলো:- ৩০ দিনের মধ্যে ডায়াবেটিস, ৩০ দিনের মধ্যে রক্তচাপ, ১০ দিনের মধ্যে পেটের সমস্যা, ৯ মাসের মধ্যে সব ধরনের ক্যানসার, ৬ মাসের মধ্যে শিরার বাধার সমস্যা। ১০ দিনের মধ্যে ক্ষুধা জাতীয় সমস্যা।

১০ দিনের মধ্যে জরায়ু এবং এ সম্পর্কিত রোগগুলো, ১০ দিনের মধ্যে নাক, কান এবং গলার সমস্যা, ১৫ দিনের মধ্যে মহিলাদের সমস্যা, ৩০ দিনের মধ্যে হৃদরোগ জাতীয় সমস্যা, তিন দিনের মধ্যে মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন সমস্যা, চার মাসের মধ্যে কোলেস্টেরল সমস্যা, ৯ মাসের মধ্যে মৃগী এবং পক্ষাঘাত সমস্যা এবং চার মাসের মধ্যে হাঁপানি সমস্যা নিরাময় করে।

অনেকেই আমরা খাবার খেতে বসে পানি খাই। এতে খাবারের সঙ্গে পাচক রস সঠিক ভাব মিশতে পারে না। ফলে হজমের নানা সমস্যা দেখা দেয়। খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে বা পরে যদি এক গ্লাস হালকা গরম পানি খাওয়া যায়, তাহলে অ্যাসিডিটি, বদহজম, অম্বলের মতো একাধিক সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ঈষদুষ্ণ জল খাবার দ্রুত হজমেও সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্যে দীর্ঘদিন ধরে ভুগলে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানি খেতে পারলে পেট সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে হালকা গরম পানি খেতে পারলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

সাধারণ তাপমাত্রার পানির তুলনায় হালকা গরম পানি খেতে পারলে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রাটা সামান্য হলেও বৃদ্ধি পায় এবং ঘাম হয় বেশি। অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার ফলে শরীরে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় উপাদান ঘামের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে যায়। এতে শরীর দ্রুত ডিটক্স হয়ে যায়।

হালকা গরম পানি খেলে দ্রুত মেদ ঝরাতে অত্যন্ত কার্যকর। হালকা গরম পানি খেলে শরীরের মেটাবলিক রেট বাড়ে এবং সহজেই অনেকটা ক্যালোরি পোড়ে। হালকা গরম পানি খিদে বোধ কমিয়ে ওজন কমাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানির সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারলে মেদ ঝরবে দ্রুত।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানি খেতে পারলে শরীরের টক্সিক উপাদানগুলো সহজেই বাইরে বেরিয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, বাড়বে শরীরের আভ্যন্তরীণ তাপমাত্রাও। শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে শিরা, ধমনীতে রক্তচলাচলের গতিও স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়।

বাতের ব্যথায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগলে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে খান এক গ্লাস গরম পানি খান। এতে করে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, শরীরে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় উপাদান ঘামের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে যাবে। ফলে ব্যথা বোধও ক্রমশ কমে আসবে।

পেট পরিষ্কার থাকলে শরীরের অনের রোগ আমাদের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। পেট পরিষ্কার থাকলে ত্বকও থাকে ঝকঝকে, উজ্জ্বল। প্রতিদিন সকালে, খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে বা পরে যদি এক গ্লাস গরম পানি খাওয়া যায়, বদহজম, অম্বলের মতো একাধিক সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব, শরীর দ্রুত ডিটক্স হয়ে যায়। ত্বকে জমাট বাধা তেল, ধুলোবালি থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। পেট পরিষ্কার থাকলে ব্রণ-ফুসকুড়ির সমস্যা থেকেও সহজেই দূরে থাকা যায়।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খুব বেশি তাপমাত্রা যুক্ত গরম পানি খাবেন না। কম তাপমাত্রা যুক্ত পানি বা হালকা গরম পানি পান করুন।

অন্যদিকে, ঠান্ডা পানি পান করা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে! যদি অল্প বয়সে ঠান্ডা পানি প্রভাবিত না করে, তবে এটি বৃদ্ধ বয়সে ক্ষতি করবেই বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। ঠান্ডা পানি হার্টের চারটি শিরা বন্ধ করে দেয় এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়। হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণ হলো কোল্ড ড্রিংকস।

ঠান্ডা পানি লিভারেও সমস্যা তৈরি করে। এটি লিভারের সঙ্গে ফ্যাট আটকে রাখে। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের অপেক্ষায় থাকা বেশিরভাগ মানুষ ঠান্ডা পানি পান করার কারণে এর শিকার হয়েছেন। ঠান্ডা পানি পেটের অভ্যন্তরীণ দেয়ালকে প্রভাবিত করে। এটি বৃহৎ অন্ত্রকে প্রভাবিত করে, যা পরে ক্যানসারের রূপ নেয়।

সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য আমাদের প্রত্যেকের চাহিদামত বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পানি বিশুদ্ধ না হলে পানি বাহিত বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে শরীরে।

(ঢাকাটাইমস/২৩ নভেম্বর/আরজেড)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ
রেকর্ড জুটির পরও আয়ারল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের হার, যা বলছেন জাহানারা 
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরও ১০৫ বাংলাদেশি
পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত, বিজিবির কড়া প্রতিবাদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা