একাত্তরের এই দিনে বিশ্বের বুকে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০১
অ- অ+

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আজকের এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। যা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম গণহত্যা চালানোর পরদিন প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ১৫ দিনের মাথায় ১০ এপ্রিল গঠিত হয় এই সরকার। পাঠ করা হয় ঘোষণাপত্র।

শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে গঠিত এই সরকারে ছিলেন ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ব্যবধানে জয়ী হওয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সরকার গঠনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র (প্রোক্লেমেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স) পাঠ করা হয়েছিল সেদিন। এর এক সপ্তাহ পর ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয় মুজিবনগর সরকার।

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক দলিল। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫০(১) অনুচ্ছেদ এবং চতুর্থ তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের একটি ক্রান্তিকালীন অস্থায়ী বিধান হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হবে।

মুজিবনগর সরকার গঠনের মধ্য দিয়েই পরিকল্পিতভাবে মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত ও সমন্বয় করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা ও স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় করা হয়েছিল।

পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ২৬ মার্চেই বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করে সরকার গঠন করা হয়। শেখ মুজিব সেই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং মুজিব- ইয়াহিয়া বৈঠকে যোগদানকারী সব প্রবীণ সহকর্মীই মন্ত্রিসভার সদস্য।

শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার থাকায় দলীয় প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শক্রমে দিল্লিতে তাজউদ্দীন আহমেদ নিজেকে প্রধানমন্ত্রী রূপে তুলে ধরেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, উপযুক্ত সময়ে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এভাবেই অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের ধারণার সূচনা।

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি মুক্তিবাহিনীর অস্ত্র, ট্রেনিং, শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয়ের বিষয়ে রাজি হয়েছিলেন।

১০ এপ্রিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করা হয়। এই সরকারে চারজন মন্ত্রীকে ১২টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবায়নের। প্রথমে ১৯৭০ এর নির্বাচনে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ৩ মার্চে জাতীয় পরিষদ বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা।

এই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ৭১ এর ২৬ মার্চ তারিখ থেকে কার্যকর হয়েছে এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ও উপ-রাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনার জন্য অধ্যাপক ইউসুফ আলীকে প্রতিনিধি নিয়োগ করার কথা বলা হয়।

১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী। এই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য যা যা করণীয় তা করবে বাংলাদেশ সরকার, সেই ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই ঘোষণাপত্র কার্যত মুজিবনগর সরকার কর্তৃক অলিখিত সংবিধান ছিল।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সিদ্ধান্ত ও এর ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতোলায় মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

(ঢাকাটাইমস/১০এপ্রিল/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পিপিএম পদক পেলেন এসপি কুদরত-ই-খুদা
বিভেদের রাজনীতি আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট করেছে: মির্জা ফখরুল 
ট্রেন মিস করলেন তাবিথ আউয়াল?
গিয়াস কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকারকে বিএনপির শোকজ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা