রমনায় মৎস্য শিকারীদের মিলনমেলা
বড়শি পানিতে ফেলে মাছ ধরার মজা সেই জানেন, যিনি এভাবে মাছ ধরেছেন। কারও নেশা এতটাই প্রগাঢ় যে, ছিপ ফেলে অপেক্ষা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর ধৈর্য্যের খেলায় একটি মাছ যখন উঠে? আনন্দের শেষ নেই। আর যদি সেই মাছটি হয় তিন কেজি বা তার চেয়েও বড়? তাহলে তো কথাই নেই। গ্রাম বা মফস্বলে ছিপ ফেলে মাছ ধরার নেশায় মত্তদের খুঁজে পাওয়া কঠিন না। তবে এই রাজধানীতে জলাশয়শূন্য ব্যস্ত শহরে? কেউ যদি দেখতে চান এই মাছ শিকার তাহলে বেশিদূর যেতে হবে না।
রাজধানীর রমনা পার্কের লেক, ধানমন্ডি লেক, জাতীয় সংসদ ভবন লেক, নওয়াব বাড়ি পুকুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল পুকুর ও বংশাল পুকুরে রয়েছে বড়শি ফেলার সুযোগ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিকারির দেখা মেলে রমনা পার্কের লেক ও ধানমন্ডি লেকে।
রমনা পার্কে শুক্র এবং শনিবার বসে বরশি শিকারিদের মিলনমেলা। টিকিট কাটার পর সকাল সাতটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত পানিতে ফেলা যায় বরশি। ১৮ নভেম্বরে শুরু হওয়া মাছ শিকার চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
একেক মানুষের শখ একেক রকমের। কেউ হয়তো বাগান করে, বই পড়ে, ডাকটিকেট সংগ্রহ, মৎস্য শিকারসহ আরও বিচিত্র ধরনের শখ যে মানুষের আছে তার কোনো শেষ নেই। এই শহরে মানুষ চাইলেই একটা শখ অনায়াসে পূরণ করতে পারে না, সেটা হচ্ছে মাছ শিকার। এখানে নেই বিল, খাল থাকলেও মাছ নেই, পুকুর খুঁজতে গেলে হতোদ্যম হতে হবে।
কিন্তু পানিতে ছিপ-বড়শি ফেলাতেই যাদের আনন্দ তারা তো বসে থাকার পাত্র নন। টোপ আর মাছের ‘খেইলে’ যাদের নেশা তারা অবসর পেলেই ছুটে বেড়ান।
তিন বছর পর রমনা পার্কের লেকে মাছ শিকারের সুযোগ এসেছে। টিকিটের মূল্য বড়শি প্রতি তিন হাজার টাকা। খরচ আছে আরও। মাছকে লোভ দেখাতে ফেলা খাবার যোগাড়েও খরচ কম না। দিনভর নিজের এবং সহযোগীর পেটপূজা তো আছেই।
তবে মাছ ধরার ক্ষেত্রে শর্ত আছে। সাড়ে তিন কেজির ওপর কেবল একটি মাছ ধরা যাবে। একটির বেশি ধরা পড়লে সেগুলো ছেড়ে দিতে হবে। ফলে সবার ভাগ্যে তিন হাজার টাকার মাছ জোটে না।
তবে মাছ ধরতে এসে লাভ লোকসানের এমন হিসাব কষলে চলে? এগুলো কেউ চিন্তাও করে না। যারা বরশি ফেলেছেন তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকাটাইমসের। এদের একজন আকবর আলী।
-‘বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা আমার নেশা। ছুটির দিনে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি মাছ শিকারে।’
‘সব মিলিয়ে এখানে কত টাকা খরচ হয়?’
-টিকিট ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে পাঁচ হাজার টাকা তো যায়ই।
টাকা উঠাতে পারেন?
-না! উঠে না। তবে মজা পাই।লেকে ছিপ ফেলে যারা দিনভর বসে থাকেন তাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয় যখন মাছ তাদের টোপ খায়। তখনি সুতায় পড়ে টান, টোন বা ফাতনা পানিতে ডোবে আর ভাসে। ছিপে টান দিয়ে গোড়ার হুইল দ্রুতলয়ে ঘোড়াতে থাকেন শিকারি। খানকিটা হাঁটতেই দেখা গেল, একটি বড়শিকে ঘিরে ভিড়। এগিয়ে দেখা গেল বড় একটা বড় কাতল মাছ উঠিয়েছেন তিনি।
তার নাম জব্বার। মাছটি তুলে তিনি যারপরনাই খুশি।
-খুব ভালো লাগছে। শূন্য হাতে বাসায় ফিরে যেতে হবে না-বললেন জব্বার।
মাছ বেশি পেলে বিক্রি করে দেন?
-‘না, না, যা পাই বাসায় নিয়ে যাই।’
সেলফির এই যুগে জব্বারের ধরা বড় মাছের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ভিড় লেগে গেলো। এই মাছ শিকারিও আনন্দের সঙ্গেই দিচ্ছেন সে সুযোগ। বড় মাছ ধরার একটি গর্বও আছে তার।তবে জব্বারের কপাল নিয়ে তো আর সবাই আসে না। এমনও দিন যায় যেদিন একটা মাছও জোটে না সারাদিন।
মাছ না পাওয়া এক শিকারি বলেন, ‘মাছ পাওয়া বড় বিষয় নয়, ছুটির দিনে ছিপ ফেলে বসে থাকলেও মনটা ফ্রেশ লাগে।’
(ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/এসএ/এনআই/ডব্লিউবি)