‘আমার ড্রেসিংটা কেউ করবে না বাবা!’

রেজাউল করিম, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৬ | প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:৪৮

বুধবার পৌনে বারোটা। হঠাৎ দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া। দ্বিতীয় তলায় যেতে না যেতেই চোখে পড়ল প্রায় শত বছরের এক বৃদ্ধ বিছানায় কাতরাচ্ছেন। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই বয়সের ভারে না বুঝে উত্তর দিলেন, ‘আমার ড্রেসিংটা কি কেউ করবে না বাবা?’

কী হয়েছে আপনার?-প্রশ্নটা করতেই জবাব পাওয়া গেলো অন্য একজনের কাছে। জানালেন, পারিবারিক বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ লাঠিপেটা করে গত সোমবার হাসপাতালে পাঠিয়েছে এই বৃদ্ধকে। প্রতিপক্ষের ভয়ে বৃদ্ধের দুই ছেলেও হাসপাতালে বাবাকে দেখতে আসার সাহস পাচ্ছে না।

হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে আছেন তার বৃদ্ধা স্ত্রী। অবশ্যই ড্রেসিং করবে বলে সান্তনা দিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘মানিক ভূইঞা, লাউহাটীর থন আইসেছি।’

নিজের বয়স বললেন ৯৪। দুই একটা প্রশ্ন করার সুযোগও দিলেন না তিনি। ভাবলেন, আমিও হাসপাতালের কর্মকর্তা। বারবার বলছেন বাবা, ‘আমার ড্রেসিংটা কেউ করবে না?’।

শান্তনা পেয়ে এই বৃদ্ধা জানালেন, তিনদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত ব্যান্ডেস দিয়ে মোড়ানো ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করেননি হাসপাতাল কর্মীরা। ওষুধ যা লাগছে নিজেকেই বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।

ছবি তুলতে গেলেই সাংবাদিকের প্রবেশের সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে। এক ভদ্রলোক দ্রুত এসে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বা জীবাণুনাশক ছাড়াই ড্রেসিং শুরু করলেন।

নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আব্দুল খালেক। পদবি জানতে চাইলে জানান, তিনি এই হাসপাতালেই কাজ করতেন। এখন অবসরে আছেন। তার স্ত্রী শাফিয়া এই হাসপাতালে আয়ার কাজ করেন। স্ত্রী ব্যস্ত বলে তার বদলে অফিস করতে এসেছেন।

জীবাণুনাশক ছাড়া ড্রেসিংয়ের বিষয়ে তিনি বললে, ‘বায়োডিন হাসপাতালে নাই। এমনতেই করতে হইবো।’

দুই তলা থেকে নেমে গেলাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবদুর রহমানের কাছে। বৃদ্ধ লোকটির দুর্দশার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা না। বায়োডিনসহ সব ধরনের ওষুধ আছে।’

এরপর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দ্রুত দোতলায় উঠে খোঁজ করলেন বৃদ্ধ মানিক ভূইঞাঁকে। আশ্বাস দিলেন তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন তিনি।

চিকিৎসকদের উপস্থিতির কথা জানতে চাইলে এই চিকিৎসা কর্মকর্তা বললেন, ‘চিকিৎসকদের মধ্যে সবাই উপস্থিত আছেন।’

তবে চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা গেল, অধিকাংশ চিকিৎসকের কক্ষ খোলা, কিন্তু ভেতরে চিকিৎসক নেই।

হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির মালেক নামের এক কর্মচারী এসে বললেন, ‘ডাক্তাররা আছেন। সবাই গুচ্ছ গ্রামে গেছেন।’ কেন গিয়েছেন এর উত্তর দিতে পারলেন না এই কর্মচারী।

পাশেই জরুরি বিভাগের সামনে দেখা গেল বিষ পান করা এক তরুণীকে। কয়েক জন মিলে তাকে ওয়াশ করছেন। পাশে নেই কোন চিকিৎসক। কে ওয়াশ করছেন জিজ্ঞেস করলে উপস্থিতিরা জানালেন, একজন ওয়ার্ড বয় অপরজন নাইট গার্ড। এভাবেই চললে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।

চিকিৎসকদের উপস্থিতিসহ চিকিৎসার মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে উপস্থিত রোগীরা। তাদের দাবি, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতি ও চিকিৎসার মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার।

ঢাকাটাইমস/২ডিসেম্বর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

পরিচিত যেসব খাবার ফুসফুসের সুস্থতার জন্য মহৌষধ

দেশে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের ঘাটতি ৩ লাখ ১২ হাজারের অধিক

‘বাত ব্যথার উপযুক্ত চিকিৎসা না করলে ঝুঁকিতে পড়বে জীবন’

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও ৬ জন

কিডনি নষ্ট হচ্ছে গোপনেই! যেসব লক্ষণ দেখলে মোটেই অবহেলা নয়

দেশে ‘লং কোভিড’ নিয়ে বড় পর্যায়ের গবেষণার তাগিদ

দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানতে জরিপ চলছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস আজ: প্রতিরোধে প্রয়োজন দুই বাহকের বিয়ে বর্জন

শিবনারায়ণ দাশের চোখে আলো দেখছেন মশিউর-আবুল কালাম

মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :