পানির বোতল দিয়ে ইট

কাওসার শাকিল, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:৩২| আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৫১
অ- অ+

বাজারের কেনা পানির বোতল, খাওয়া শেষ হয়ে গেলে তার খবর কে-ই বা রাখে? পানি শেষ, ছুড়ে ফেলে দিলাম। কোথায় গিয়ে পড়ল তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। টোকাইরা হয়তো রাস্তা কিংবা ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে কেজি দরে বেচে দিল। তারপর নানা ঘাট ঘুরে আপনার নিত্যদিনের কোনো ব্যবহৃত প্লাস্টিক পণ্য। এই হলো প্লাস্টিক বোতলের জীবনচক্র।

আলবাব হাবীব ভাবলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে আরো কিছু করা যায় কি না। কী করা সম্ভব? সেই নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার মাথায় এল বোতলের বাইরের আকৃতি যদি একটু বদলে দেয়া যায় তাহলে এ দিয়ে কম খরচে দালান তোলার ইট বানানো সম্ভব।

একটু উদ্ভট মনে হচ্ছে চিন্তাটা? বাংলাদেশের এই তরুণের চিন্তাটা কিন্তু এখন অনেকটাই বাস্তবে মুখ দেখার পথে। চেষ্টা চলছে স্বপ্নটা সত্যি করার। তাতে পরিবেশ বাঁচবে দূষণের হাত থেকে, আর অন্তত ৬০ শতাংশ কমে যাবে নির্মাণ ব্যয়। কেননা আনা-নেয়ার খরচ বাদ দিয়ে শুধু একটা ইট কিনতেই খরচ পড়ে ১০ টাকা। আর আলবাব হাবীবের এই নকশায় যদি বোতল থেকে ইট বানানো হয় সে খরচ নেমে আসবে চার টাকায়।

সে তো হলো, কিন্তু প্লাস্টিকের বোতল তো ঠুনকো জিনিস। সেটা দিয়ে ইট তৈরি হবে কী করে? তরুণ এই হবু উদ্যোক্তা ব্যাখ্যা করলেন কায়দাটা তেমন জটিল কিছু না। বিশেষ নকশায় তৈরি এই বোতলের পানি খাওয়া শেষে পরিত্যক্ত বোতলটির ভেতর ভরা হবে বালু। আর বালু ভরলেই পিইটি (এক ধরনের শক্ত প্লাস্টিক) বোতলটি ভীষণ রকম মজবুত হয়ে উঠবে। আলবাব হাবীব এর মধ্যেই ল্যাবরেটরিতে সাধারণ ইটের সঙ্গে তার এই বোতল ইটের শক্তিমত্তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন। ফল প্রায় অভাবনীয়। সাধারণ ইটের চেয়ে প্রায় আট গুণ বেশি চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে বালি ভরা প্লাস্টিকের বোতল।

আলবাব হাবীব ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাধারণ পানির বোতল আকৃতিতে একটু গোল ধরনের হয়। আর এই পানির বোতলটা হবে চার কোণা। বোতলের বাইরের অংশে এমন করে নকশাটা করা থাকবে যে একটা বোতলের সাথে আরেকটা বোতল অনায়াসে জুড়ে দেয়া যাবে কোনো রকম আঠা বা জোড়া দেয়ার উপকরণ ছাড়াই। এ পদ্ধতিটাকে বলে ইন্টার লক সিস্টেম।’

এই পদ্ধতিতে বোতলের ওপর কিছু খাঁজ থাকে, আর দুটো বোতলের খাঁজ মিলে গেলেই বোতল দুটি জুড়ে যায়। ফলে বাড়তি সিমেন্ট বালু দিতে হয় না। তাছাড়া প্লাস্টিকের বোতল সাধারণ ইটের মতো পানি শোষণ করে না বলে উপরে সিমেন্ট আর বালির আস্তর ভেদ করে পানি শুষে জমিয়ে রাখার কোনো ব্যাপারই নেই। তাই দেয়ালে নোনা পড়ার সমস্যাও হবে না।

তবে একটা ভাবনার ব্যাপার হলো আগুন। প্লাস্টিক তো দাহ্য এবং ভালো রকমই দাহ্য। তাহলে আগুন লাগলে কী হবে?

এই প্রশ্নের জবাবে আলবাব হাবীব বলেন- ‘ফায়ার সেফটির বিষয়টি আমরা মাথায় রেখেছি। এটা নিয়ে এখনো কাজ চলছে। তবে সাধারণত গ্রামাঞ্চলে যেসব জিনিস দিয়ে ঘর বানানো হয় যেমন বাঁশের বেড়া বা কাঠ, সেগুলোর তুলনায় এর দাহ্যতা কম। তারপরও আগুন থেকে সুরক্ষার বিষয়টা নিয়ে কাজ করছি এবং এটার সমাধানও করে ফেলতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।’

বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের পুরো জিনিসটা নিয়ে এখনো কাজ করছেন হাবীব। তার পরিকল্পনা শুনে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন একজন বিনিয়োগকারী। আর এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক পরিসরে ঘুরে এসেছেন নিজের এই সম্ভাবনাময় পণ্যটি নিয়ে। তরুণ সামাজিক ব্যবসার উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন ফ্রান্স থেকে। কুড়িয়েছেন আয়োজকদের প্রশংসা।

ব্যবস্থাপনার ছাত্র হয়ে এ রকম একটা উদ্যোগ কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আলবাব বলেন, ‘আমি বিল্ডিং পাইয়নিয়ার্স নামের একটি জার্মান প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ে কাজ করতাম। তাদের এক ধরনের কংক্রিট ব্লক ছিল। কিন্তু সেটার খরচ অনেক বেশি আর স্থায়িত্ব কম। তাই আমি ভাবলাম এ রকম একটা কিছু করা যায় কি না, যেটা দিয়ে নির্মাণ খরচ অনেক কমে যাবে আবার বাড়িঘরের স্থায়িত্বও বাড়বে। এ রকম চিন্তা থেকে্‌ই এই উদ্যোগ।’

প্লাস্টিক বোতলের এই ইটের একটা নাম দিয়েছেন হাবীব- প্লাস্টিক বটল ব্লক বা সংক্ষেপে পিবিবি। বর্তমানে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নানারকম সহায়তা নিয়ে পিবিবির গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন আলবাব হাবীব। বোতলজাত পানির ব্যবসায় যারা এর মধ্যে্ই আছেন তাদের একটু আগ্রহ আর সহযোগিতা হলেই শিগগিরই বাজারে আনতে পারবেন প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি ইট।

ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/কেএস/ডব্লিউবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নোয়াখালীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ আটক ৪, আগ্নেয়াস্ত্র-স্বর্ণ উদ্ধার
দেশে সংকট হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পথ দেখায়: দুদু
ঘুমন্ত নগরী
জুলাই মাসেই জুলাই সনদ প্রকাশ করতে হবে: রাশেদ প্রধান 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা