অভিনয়শিল্পীর মর্যাদা

রওনক হাসান
| আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪০ | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:২৪

দেশে অনেক টিভি চ্যানেল হয়েছে। এতে আমাদের কাজের সুযোগ বেড়েছে। কিন্তু এখানে কোনো অভিনয় শেখার ভালো ইনস্টিটিউট নেই। তাই নতুনরা প্রশিক্ষণ নিতে পারছে না। অন্যদিকে আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো পে চ্যানেল নয়। তাই বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এসব কারণে প্রচুর মানহীন কাজ হচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, গত ২০ বছরে সবকিছুর দাম বাড়লেও একমাত্র টিভি নাটকের দাম কমেছে। একটি নীতিমালার মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে এ সংকটের উত্তরণ অসম্ভব। আমরা আগেও সংগ্রাম করে কাটিয়েছি। এখনো সেই সংগ্রাম করে চলেছি। অথচ পৃথিবীজুড়েই অভিনয় একটি সম্মানজনক পেশা । অভিনয়শিল্পীদের আলাদা সম্মান ও মর্যাদার চোখে দেখা হয় । রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে সকলেই তাঁদের ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে ।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবেই অভিনয় শিল্প এখন পর্যন্ত পেশা হিসেবে স্বীকৃত নয় । অভিনেতাকে বিনোদনকর্মী হিসেবে দেখা হয় । পাসপোর্ট ও ব্যাংকে বিভিন্ন কাজে গেলে দেখি অভিনয় পেশাকে কোনো হিসেবেই গণা করা হয় না । অথচ এই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী দেশের ১৭ কোটি মানুষকে আনন্দ-বেদনার কাব্যে মোহিত করে রাখে সর্বক্ষণ । একটি ছেলে বা একটি মেয়েকে অভিনয়শিল্পী হতে গিয়ে যে দীর্ঘ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তার কোনো রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্বীকৃতি তিনি পান না। অথচ আবার কোটি মানুষের ভালোবাসায় তাঁরা সিক্ত হন । কী নিদারুণ পরস্পরবিরোধী অবস্থান। যখন সমাজ ও রাষ্ট্র অভিনয়শিল্পীর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে পারছে না, তখন অভিনয়শিল্পীকেই এগিয়ে আসতে হবে, তার স্বীকৃতি আদায় করার জন্য ।

অভিনয়শিল্পীদের দাবি আদায়ে তাই অভিনেতাদের সংগঠিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অভিনয় দিয়ে কোটি মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবার ক্ষমতাকে সারা পৃথিবীজুড়েই বিরল প্রতিভা হিসেবে স্বীকৃত । তাইতো ১৭ কোটি মানুষের দেশে ৭০০ জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । সমগ্র পৃথিবীতে অভিনয় শিল্পীগণ যে সামাজিক সম্মান ও অগ্রাধিকার পান তার নূন্যতম সম্মান ও অগ্রাধিকার আমরা সংগঠিত হয়ে নিশ্চিত করতে চাই । বিদেশে গেলে অনেক এয়ারপোর্টেই দেখা যায় ইমিগ্রেশনে শিল্পীদের জন্য আলাদা কাউন্টার । আলাদা লাইন । আমরাও এমনটা চাই ।

এই দেশে বাজেট, ট্রাফিক এবং নানান কারণে অভিনয়শিল্পীদের উপর কাজের চাপ থাকে ভীষণ । সময়ানুবর্তীতা অনেক জরুরী হয়ে পড়ে। তাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই ব্যাংকে, সিএনজি স্টেশনে কোনো অভিনয়শিল্পী ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। সে যেনো দ্রুত কাজ সেরে অভিনয়ে ফিরে যেতে পারেন। কোনো অভিনয়শিল্পীকে ডাক্তারের সিরিয়াল পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে না। সরাসরি যেনো তিনি ডাক্তারের পরামর্শ পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাই ।

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবামূলক এবং বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অভিনয়শিল্পীরা যেনো অগ্রাধিকার পান তা নিশ্চিত করতে চাই । অভিনয়শিল্পীদের বাড়ি ভাড়া পেতে যে বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়, তা আমরা আর হতে দিতে চাই না। সব টেলিভিশন, সব অভিনয়শিল্পীদের একটি নিয়মের মধ্যে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে এনে আমরা একটি সুন্দর ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্ন দেখি । যে ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের আগামী প্রজন্ম কাজ করতে চাইলে, অভিনেতা হতে চাইলে তার পরিবার এবং সমাজ তাকে যেনো বাঁধা না দিয়ে উৎসাহিত করেন । আমরা এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে চাই যে, অভিনয় শিল্প একটি সম্মানজনক পেশা । আবার অভিনয় শুধু আমাদের পেশা নয়। অভিনয় আমাদের ভালোবাসা, প্রেম, আবেগ, মেধা, শ্রম ও ঘামে মিলেমিশে... অভিনয়ই জীবন । বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকের জয় হোক! অভিনয় শিল্প আরো বিকশিত হোক!

রওনক হাসান : অভিনয়শিল্পী, চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা

ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/এমইউ/টিএমএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :