দ্রুত এগোচ্ছে অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলা

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৬

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় গতি এসেছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের পর মামলাটি দ্রুত গতিতেই এগোচ্ছে। এরই মধ্যে মামলার ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।

সর্বশেষ সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন নিহত শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর ভাই সাজেদুল করিম সিদ্দিকী এবং মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জেরাও করেছেন। তবে সাক্ষীরা আদালতে কি বলেছেন, তা নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকাশ করতে রাজি হননি তারা।

রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু জানান, এ মাসের ১২ তারিখ থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত একটানা চলবে সাক্ষ্যগ্রহণ। মামলায় মোট সাক্ষীর সংখ্যা ৩৩ জন।

তিনি জানান, মামলার বাদী অধ্যাপক রেজাউল করিমের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজও আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সব সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন। ফলে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে মামলার রায়ও খুব তাড়াতাড়ি ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অধ্যাপক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি বলেন, ‘সম্প্রতি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের পর মামলাটি দ্রুতই এগোচ্ছে। আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আমরা খুশি। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি মামলা শেষ করা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা চাই- স্বাভাবিক গতিতে, সুষ্ঠুভাবে মামলাটি শেষ হোক। আমরা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে চাই।

গত বছরের ৬ নভেম্বর ৮ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার অভিযুক্ত ৮ আসামির মধ্যে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

অভিযুক্ত অন্যরা হলেন- বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব, নীলফামারীর মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহী মহানগরীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী, রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল এখনও পলাতক। আবদুস সাত্তার রয়েছেন জামিনে। আর বাকি আসামিরা রয়েছেন কারাগারে।

গত বছর ২৩ এপ্রিল সকালে নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করা হয় ইংরেজির শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। তিনি ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন; ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও উপদেষ্টা ছিলেন। অধ্যাপক রেজাউল ভালো সেতার বাজাতেন। তিনি একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করছিলেন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী ব্লগার ও প্রগতিশীল ব্যক্তিদের ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ অংশ হিসেবে জেএমবি সদস্যরা অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যা করে। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।

এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক আইএস জঙ্গি মসিউদ্দীন ওরফে মুসার সঙ্গেও অধ্যাপক রেজাউল হত্যা মামলার আসামি শরিফুলের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তাই শরিফুল ভারতেই পালিয়ে আছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। শরিফুলকে ধরিয়ে দিলে দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেও তার হদিস পায়নি পুলিশ।

শরিফুল গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে অধ্যাপক রেজাউল করিমের মেয়ে শতভি বলেন, দেড় বছর পার হয়ে গেল, শরিফুল গ্রেপ্তার হলো না। এই বিষয়টা আমাদের খুব পীড়া দেয়। কারণ, শরিফুলই তো বাবাকে হত্যার আসল পরিকল্পনাকারী। আমরা তো তার বিচার দেখতে চাই।

(ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/আরআর/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :