শিক্ষকের থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে ঢাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসা শিক্ষা অনুষদভুক্ত ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি তুলেছেন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত জাহান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বদরুজ্জামান। তিনি বলেছেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তার সুনাম নষ্ট করার জন্য এই অভিযোগ করা হয়েছে। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। থিসিসে কোনো ধরনের জালিয়াতি বা কপি-পেস্টের নমুনা পর্যন্ত নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিন্ডিকেট মেম্বার, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সিলেকশন বোর্ডের সদস্যদের বরাবর একটি অভিযোগপত্র দেন সিনেট সদস্য নুসরাত জাহান।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতি লক্ষ্য করা গেছে। তাই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয় অভিযোগপত্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এরকম একটি অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। এটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি নিয়মের মধ্যদিয়ে চলে। সবকিছুই নিয়মের মধ্যদিয়েই সমাধান করতে হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে থিসিসটির কপি ঢাকা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউশনাল রেসপোসিটরিতে জমা রয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউশনাল রেসপোসিটরি হচ্ছে সবার জন্য উন্মুক্ত একটি সাইড। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব এমফিল ও পিএইচডি গবেষণার সফট কপি জমা থাকে।
সম্প্রতি ‘সোসিও ইকোনমিক ইমপেক্ট অফ ট্যুরিজম ইন কক্সবাজার: অ্যা স্টাডি অফ লোকাল রেসিডেন্টস এটিচিউড’ শিরোনামে অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া পিএইচডি থিসিস সম্পন্ন করেন। থিসিসটিতে মূল রচনার রেফারেন্স না দেয়া এবং অন্যের রচনা থেকে হুবহু কপি করাসহ থিসিসের প্রত্যেকটি পৃষ্ঠায় জালিয়াতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নুসরাত জাহান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০ সেপ্টেম্বর সিলেকশন বোর্ড ওই শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নেন। সিলেকশন বোর্ডের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এ. বি. এম শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ উন্মুত্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শান্তি নারায়ণ ঘোষ।
প্রসঙ্গত, সহকারী অধ্যাপক বদিউজ্জামান একই বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসানের তত্ত্বাবধানে থিসিসটি সম্পন্ন করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাশিদুল হাসানের মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডিন এ বিষয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এটি ব্যক্তিগত বিষয়। দুই পক্ষই এ বিষয়ে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন ভিসির কাছে। বিষয়টি তিনিই নিষ্পত্তি করবেন।’
জানতে চাইলে নুসরাত জাহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না, তবে ইতোমধ্যে আমি এই বিষয়ের ওপর একটি ডকুমেন্টারি সিলেকশন বোর্ডে জমা দিয়েছি। তদন্তের মাধ্যমে সিলেকশন বোর্ড এর বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করি।’
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাকের আহমেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘তার (বদিউজ্জামান) বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেছে। তবে এখনো তা প্রমাণিত হয়নি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেকশন বোর্ড তদন্তের পর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এমএম/জেবি)