২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রায় ১০ অক্টোবর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:০৯ | প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:০২
ফাইল ছবি

এক যুগেরও বেশি সময় আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা হয়েছে অবশেষে। আগামী ১০ অক্টোবর আসামিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে বিচারিক আদালত।

নৃশংস এই হামলার ঘটনায় করা দুই মামলার আইনি যুক্তি উপস্থাপন শেষে মঙ্গলবার এই সিদ্ধান্ত জানান ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।

বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর আসামিপক্ষে আইনজীবী এসএম শাহজাহান যুক্তি তুলে ধরেন। এরপর সাইফুল ইসলাম ডিউকের পক্ষে যুক্তি দেন আব্দুর রেজ্জাক খান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন। আর বেলা একটা ৫৩ মিনিটের দিকে রায়ের তারিখ জানান বিচারক।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান দাবি করেছেন, তারা সন্দেহাতীতভাবে এই মামলায় সব আসামির পক্ষে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছেন। আর এ জন্য তারা সর্বোচ্চ সাজার দাবি করেছেন।

এই মামলার ৫২ জন আসামিদের মধ্যে আছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টু, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ডিউক।

আসামিদের মধ্যে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জঙ্গিনেতা মুফতি মোহাম্মদ হান্নানসহ তিন জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য মামলায়। ফলে ৪৯ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে ১০ অক্টোবর।

আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে কারাগারে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।

এছাড়া জামিনে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান সাইফুল ইসলাম ডিউক, তিন সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। আর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে থাকাকালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্য জনসভায় নজিরবিহীন হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৩ জন নিহত এবং কয়েকশ নেতা-কর্মী আহত হন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সে সময়কার বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ছোড়া গ্রেনেড থেকে নেতারা তাকে রক্ষা করেন মানববর্ম বানিয়ে। নেত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে জীবন দেন তার একজন দেহরক্ষী।

ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)।

জোট সরকারের আমলে প্রকৃত হামলাকারীদের বাঁচিয়ে নির্দোষ জজ মিয়াকে আসামি করার প্রমাণ মেলে। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একবার এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আরেকবার তদন্ত হয় মামলাটির।

আর তদন্তের ফেরে প্রায় আট বছর কাটার পর ২০১২ সালের ১৮ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আদালতে মামলার বিচার চলছে।

রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে ছিলেন প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, মোশাররফ হোসেন কাজল প্রমুখ।

রেজাউর রহমান জানান, এ মামলায় মোট ১২৯ দিন যুক্তি উপস্থাপন হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ২৯ দিন এবং আসামিপক্ষ ৯০ দিন যুক্তি উপস্থাপন করে।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৫১১ জনকে সাক্ষী করলেও শেষ পর্যন্ত সাক্ষ্য দেন ২২৫ জন। আর গত বছরের ৩০ মে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

তিনবার তদন্ত

ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)।

শুরু থেকেই এই হামলার জন্য সে সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপির সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে আসছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ওই আমলে সরকার মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তখন সরকারের বিরুদ্ধে মামলার আলামত ইচ্ছা করেই নষ্ট করার অভিযোগ উঠে। সে সময়ের জোট সরকার যুক্তরাজ্যের তদন্ত সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে তদন্তের জন্য আমন্ত্রণ জানালেও তারা সরকারের অসহযোগিতায় বিরক্তি প্রকাশ করে চলে যায়।

আবার নিরীহ জজ মিয়াকে প্রধান আসামি করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে পুলিশ। পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তদন্তের জট খুলতে শুরু করে। সে সময় জজ মিয়া রহস্য ফাঁস হয়ে যায়।

২০০৮ সালের ১১ জুন ২২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল করে সিআইডি। এতে শেষে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুর সালাম মিণ্টু ও তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনকে আসামি করা হয়।

ওই বছর ২৯ অক্টোবর ২২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত ৬১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দ।

২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা।

অধিকতর তদন্তে উঠে আসে, হাওয়া ভবনসহ যেসব স্থানে এই হামলার পরিকল্পনা হয়েছে, সেগুলোতে তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন। আর এ কারণেই হামলার পর মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে।

২০১২ সালের ১৮ মার্চ তারেক রহমানসহ নতুন তালিকাভুক্ত ৩০ আসামির অভিযোগ গঠন করে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

অর্থাৎ প্রকাশ্যে ঘটা এই ঘটনার বিচার শুরু হতেই লেগে যায় প্রায় চার বছর। আর আরও সাড়ে নয় বছর শুনানি চলার পর শুরু হয় যুক্তি উপস্থাপন।

পলাতক যারা

তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল এটিএম আমিন আহমদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান পলাতক রয়েছেন।

এছাড়াও জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা তাজ উদ্দিন, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গির আলম বদর, ইকবাল, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি।

এদের মধ্যে দুই আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন।

কারাগারে যারা

গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এরর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, বিএনপি নেতা লুৎফজ্জমান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুলস সালাম পিন্টু বিচার শুরুর আগে থেকেই কারাগারে।

জঙ্গি সদস্য শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, শেখ আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট, ইউছুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা ওরফে জিএম, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর ওরফে আবু হুমাইয়া ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিব উল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সায়ীদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গির আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামীম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, আবিদ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামীম ওরফে রাশেদ, মো. উজ্জল ওরফে রতন ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়াও বন্দী আছেন।

জামিনে ছিলেন যারা

রায়ের তারিখ ঘোষণার আগ পর্যন্ত এই মামলায় জামিনে ছিলেন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক আইজিপি খোদাবক্স, সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও ঢাকা মহানগরীর ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ।

ঢাকাটাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/এমএবি/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন তিন বিচারপতি

আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি

কক্সবাজারে কতজন রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট

সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল চ্যাপ্টারের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন

আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় চট্টগ্রামের ডিসি এসপিসহ চার জনকে হাইকোর্টে তলব

১১ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের শুনানি ২৯ জুলাই

২৮ দিন পর খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা: পরীমনিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি

বোট ক্লাব কাণ্ড: পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন

সেই রাতে ৮৭ হাজার টাকার মদ খেয়েছিলেন পরীমনি, পার্সেল না দেওয়ায় তাণ্ডব

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :