জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ০০:৪১| আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ০০:৪৬
অ- অ+

আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। দিনটি জাতি স্মরণ করবে বিনয় ও শ্রদ্ধার সঙ্গে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্ত পেরিয়ে বাঙালি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখন বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে ওঠে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর আল-বদর, আল-শামস। তারা ঢাকার বিভিন্ন স্থান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যায়। পরে রায়েরবাজার ও মিরপুরে হত্যা করা হয় তাদের। বুদ্ধিজীবী হত্যার স্থানটি পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত পায়, যেখানে তাদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত হয় ‘বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ’। আজ সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে জাতি।

হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।

৭০-এর নির্বাচন থেকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় অর্জন পর‌্যন্ত প্রতিটি অধ্যায়ে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত এবং মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা করেছেন এসব শ্রেষ্ঠ সন্তান। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অপরিসীম ভূমিকা পালনকারী এসব কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক. প্রকৌশলী, শিল্পী, চলচ্চিত্রকারসহ বুদ্ধিজীবীদের রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদাররা। তারা ভেবেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে পারলে বাঙালি মেধাশূন্য হবে, ভবিষ্যৎ ষড়যন্ত্রের পথ প্রসারিত হবে।

কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

শুধু তা-ই নয়, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের রায় এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মৌন মিছিল ইত্যাদি।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা বুদ্ধিজীবীসহ সব শহিদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

কর্মসূচি

বুধবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। সকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্বিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পুষ্পস্তবক অপর্ণের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং ৭টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান-প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত এবং সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বেলা ১১টায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা।

এ ছাড়া বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলা একাডেমী, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, উদীচীসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪ডিসেম্বর/টিএ/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
রাজনীতিতে অভিভাবক দল হিসেবে আমরা বারবার ধৈর্য ধরেছি: অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া
এনবিআরের আরও ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরখাস্ত
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাস
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও একজন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা