বেতারে জগাখিচুড়ি বাংলা ক্রিকেট ধারাভাষ্য

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া
  প্রকাশিত : ২৬ মে ২০১৭, ১৫:৫৩
অ- অ+
লিয়াকত আলী ভূঁইয়া

ক্রিকেটে ধারাভাষ্য রীতিমত একটি শিল্প। বেতারের ধারাভাষ্য ক্রিকেটকে আমজনার কাছে পৌঁছে দেয়। দোকানদার, কুলি,, শ্রমিক, বাসযাত্রী ট্রেন যাত্রী, গাড়ির চালক সবাই এই ধারাবিবরণী উপভোগ করে থাকেন। ধারাভাষ্য টেলিভিশনেও দেওয়া হয়ে থাকে। তবে রেডিও ধারাভাষ্যে আলাদা একটি মজা, আলাদা উত্তেজনা। অনেক বেশি উপভোগ্য বেতারের ধারাভাষ্য। বিবিসি, আকাশবানি বা অস্ট্রেলিয়ান রেডিওতে ধারাবি্বরণী শুনলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। কত উপভোগ্য ধারাভাষ্যেই না শোনা যায় এসব রিডিওতে!

কিন্তু বাংলাদেশে এ কোন মানের ধারাবিবরণী দেওয়া হচ্ছে?বাংলাদেশ বেতার বা অন্যান্য রেডিওতে যেভাবে ধারাভাষ্যে দেওয়া হচ্ছে তা খুবই বিরক্তিকর। কোনোরকম মানের কথা চিন্তাই করা হচ্ছে না। ভাষ্যকারের দাপাদাপি, চেচামেচি এবং যাত্রা পালার মতো চিৎকারে যাচ্ছেতাই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। যাকে বলে জগাখিচুড়ি। যেটা রুচিশীল শ্রোতাদের জন্য খুবই বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা কী রিডিও ধারাবিবরণী নাকি অন্য কিছু? দেশে বেতার ধারাভাষ্য সব মিলিয়ে খুবই বাজে অবস্থায়।

সাধারণত ধারাবিবরণী বল বাই হয়ে থাকে। বিদেশি রেডিও বা টিভি চ্যানেলে আমরা সেটাই শুনতে পাই। অপ্রাসঙ্গিক বিয়ষ এনে বা চিৎকার চেচামেচি করে তারা শ্রোতাদের বিরক্তি ঘটান না। ক্রিকেটের ধারাভাষ্য আসলে অন্য খেলার মতো নয়। ক্রিকেটে অনেক সময় ধরে ধারাবিবরণী হয়ে থাকে। তাই এখানে অনেক সময় পাওয়া যায় কথা বলার জন্য। কিন্তু আমাদের দেশের ধারাভাষ্যকারদের তাতেও যেন মন ভরে না। তারা সমানে কথা বলেই যান। যে কথাগুলো কিনা অপ্রাসঙ্গিক। শ্রোতাদের বিরক্তির কারণ।

হ্যাঁ, পরিসংখ্যান বা রেকর্ড শ্রোতরা অবশ্যই শুনতে চায। কিন্তু সেটা তুলে ধরতে হবে বিভিন্ন ব্রেকের সময়। ক্রিকেটে অনেকগুলো ব্রেক থাকে। যে ব্রেকগুলো অন্য খেলাতে থাকেন না। তাই ভাষ্যকাররা ঐ ব্রেকের সময় পরিসংখ্যান তুলে ধরতে পারেন। সেটা না করে বল বাই বল ধারাবিবরণীর সময় রেকর্ড বা পরিসংখ্যান টেনে এনে জটিল অবস্থার সৃষ্টি করেন। ফলে কোনোটাই পরিস্কার মতো হয় না। না পরিসংখ্যান শ্রোতাদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থিত হচ্ছে, না বল বাই বল বিশ্লেষণ ঠিকঠাক হচ্ছে, বা করতে পারছেন। দু:খের বিষয় এই অবস্থার কোনো উন্নতিও চোখে পড়ছে না।

শ্রোতারা এই হিঞ্জি ঘিঞ্জি ধারাভাষ্য থেকে মুক্তি চায়। তারা শুনতে চায় বল বাই বল পরিচ্ছন্ন এবং মার্জিত ধারাবিবরণী। কিন্তু শ্রোতাদের এই চাওয়া শোনার মানুষ কোথায়? তবে আমি বিভিন্ন রেডিও মালিক বা কর্তৃপক্ষকে ধান্যবাদ জানাই যে, তারা বাংলায় ধারাবিরণীর ব্যবস্থা করছে। বাংলাদেশে এখন প্রচুর ধরাভাষ্য হয়ে থাকে। এটা অবশ্যই ভালো দিন। তবে কর্তৃপক্ষের খেয়াল রাখা উচিৎ এখানকার ধারাভাষ্যকাররা কোন মানের ধারাবিবরণী দিচ্ছেন। বিদেশী ধারাভাষ্যের সঙ্গে মানের একটা তুলণা করে দেখা উচিৎ। কিন্তু কষ্টের বিষয় হলো, রেডিও কর্তৃপক্ষ এ দিকটায় উদাসীন।

সীমত সুযোগ সুবিধা সত্তেও এক সময় মরহুম আব্দুল হামিদ. মনজুর হাসান মিন্টু , তৌফিক আজিজ খান বাংলা ধারাবিবরণী দিয়ে কত জনপ্রিয়তাই না অর্জন করেছিলেন! মানুষ তাদের আজও মনে রেখে এবং রাখবে। তাদের ধারাবিবরণী ছিল শোনার মতো। কখনও বিরক্তি লাগতো না। তারা যাত্রা পালার মতো চিৎকার চেচামেচি করতেন না। মার্জিত অথচ উপভোগ্য ভাষা শৈলি দিয়ে তারা কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছিলেন।

মনে পড়ে পাকিস্তান অলিম্পিকে ব্যাঙ্কক থেকে প্রথম বাংলায় ধারাববিরণী দিয়েছিলেন মরহুম আব্দুল হামিদ। ঢাকাতে পাকিস্তানের টেস্ট ম্যাচ হলেও রেডিওতে তিনি মাচের সারাংশ তুলে ধরতেন। সবাই হামিদ ভাইয়ের অনুষ্ঠান শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতো। হামিদ ভাইরা ক্রিকেটের অনেক কিছু জানতেনও। তারা কিন্তু বল বাই বল ধারাভাষ্য দিতেন।

কিন্তু এখন যারা ধারাভাষ্যে দিচ্ছেন তাদের ক্রিকেটীয় জ্ঞান সম্পর্কে আমার প্রশ্ন আছে। ক্রিকেটে সব নিয়ম কানুন এবং মাঠের ফিল্ড পজিশন সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার একজন ধারাভাষ্যকারের। কিন্তু বর্তমান যারা এ কাজ করছেন তাদের সেই জ্ঞান আছে কিনা সেটার ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে।

বাংলাদেশে এখনও ভালো ধারাভাষ্যকার অছেন। যেমন রকিবুল হাসান, বুলবুল, আতাহার আলী খান। অরো অনেকেই আছেন। আহাহার আলী খান টিভিতে ব্যস্ত। কিন্তু অন্যদের সেভাবে ডকা হয় বলে আমার জানা নেই। অথচ সাবেক এ খেলোয়াড়রা যদি ধারাভাষ্য দিতেন তাহলে শ্রোতারা অনেক উপকৃত হতো। বেতারের ভরাভাষ্যের মানও অনেক উপরে উঠতো। এখন যারা অবোল তাবোল ধারাভাষ্য দিচ্ছেন তাদেরও বিদায় নিশ্চিত হতো।

লিয়াকত আলী ভূঁইয়া : প্রথম সহ-সভাপতি রিহ্যাব

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গোপালগঞ্জে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
সবাই গোপালগঞ্জে আসুন, বাঁচলে মুজিববাদের কবর রচনা করে ফিরব: সারজিস
গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে মশাল মিছিল করবে এনসিপি
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলা ন্যক্কারজনক: বিএনপির মহাসচিবের উদ্বেগ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা