চার কৌশলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০১৭, ১৯:৩৮| আপডেট : ১৮ জুন ২০১৭, ২০:০৩
অ- অ+

চারটি কৌশল ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাচার করা হচ্ছে বলে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ওভার অ্যান্ড আন্ডার ইনভয়েসিং (নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি দেখানো), ওভার অ্যান্ড আন্ডার শিপমেন্ট (নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম পণ্য পাঠানো), পণ্যের মিথ্যা বর্ণনা এবং একাধিক ইনভেয়েসিংয়ের মাধ্যমে বড় ধরণের অর্থপাচার হচ্ছে।

রবিবার রাজধানীতে ‘ট্রেড সার্ভিস অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক রিভিউ কর্মশালায় এই গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এই গবেষণা করেছে।

অর্থ পাচার সাম্প্রতিক সময়ে এক আলোচিত বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি-জিএফআই এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে পাঁচ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

বিআইবিএমএর গবেষণায় বলা হয়, অর্থপাচার প্রতিরোধের নীতিমালাগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও এগুলো আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। স্বীকৃত ব্যাংকগুলোকে আমদানি-রাপ্তানি মূল্যের ক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হতে হবে, যাতে এই উপায়ে অর্থপাচার না হতে পারে। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তাদের নীতিনির্ধারকের মাধ্যমে অর্থপাচার প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ছে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, ‘বাণিজ্যকেন্দ্রিক অর্থপাচার ক্রমেই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু অর্থপাচার নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্যান্য আর্থিক অপরাধগুলোও ঘটছে। এসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপরে কড়া নজরদারি করছে। প্রতিদিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন তদারকি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেবা আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক নীতিমালার ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন করেছে। আরও পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে অর্থপাচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।’

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সেবায় আরও গতিশীলতা আনতে ব্যাংকগুলোকে প্রশিক্ষণের উপর জোর দিতে হবে।’

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ট্রেড সার্ভিসের মাধ্যমে কেউ যেন ঋণ খেলাপি হতে না পারে সেজন্য যথাপোযুক্ত তথ্য সরবরাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচিত হবে অধিক স্বচ্ছতা নির্ধারণের জন্য এসব তথ্য যাচাই করা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও আধুনিক নীতিমালার প্রয়োজন।

বৈদেশিক বাণিজ্যে সরকারি ব্যাংকের অংশীদারত্ব কমছে

গবেষণায় দেখা যায়, ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটানো হয় ২৭ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ২০১১ সালে স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৬৪ শতাংশ আমদানি ব্যয় মিটিয়েছে। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ শতাংশ। আবার ২০১১ সালে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রপ্তানি আয় এসেছে ১৮ শতাংশ। সেখানে ২০১৬ সালে কমে ঠেকেছে ১০ শতাংশ।

ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি মাহবুব উল আলম বলেন, ‘আমাদের এখানে ব্যাংকিং সিস্টেম এখনও উন্নত হয়নি। তাই আন্তর্জাতিক ট্রেড সিস্টেমেও অনেকে পিছিয়ে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশ ব্যাংককে এগিয়ে আসতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৮জুন/জেআর/ডব্লিউবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেবে জামায়াত
‘দেশের মানুষ আর ভোটবিহীন সরকার দেখতে চায় না’
গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র: প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে যাচ্ছে বিএনপি
ওষুধ মোবাইলে খরচ ও রেস্তোরাঁয় ভ্যাট বাড়ছে না
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা