বিশ্বজিতের খুনি রাজনের ফাঁসি কার্যকরে অনিশ্চয়তা

পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত যে দুই জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে, তাদের মধ্যে রাজন তালুকদার পলাতক হত্যার পর থেকেই। তিনি ভারতে আছেন বলে নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে। নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি জানিয়েছেন, দেশে ফেরার কোনো ইচ্ছাই তার নেই। ফলে তার দণ্ড কার্যকর অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।
এই মামলায় বিচারিক আদালত ছাত্রলীগের আট কর্মীর ফাঁসির আদেশ দিলেও হাইকোর্ট রায় পাল্টে দুই জনকে খালাস এবং চার জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। আর রাজন তালুকদার ও রফিকুল ইসলাম শাকিলের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আদালত।
এই দুই জনের মধ্যে মধ্যে রফিকুল ইসলাম শাকিল ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্বজিৎকে হত্যার পর থেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। কিন্তু পুলিশের অভিযানের আগেই পালিয়ে যান রাজন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের মনতলার কেশবপুরে।
গ্রেপ্তার পরোয়ানা তামিল করতে সুনামগঞ্জেও আদেশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে সেখানেও পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। আর তার অবস্থান ভারতে শনাক্ত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি আর কোনো চেষ্টাই করেনি।
নিয়মানুযায়ী বিদেশে পলাতক কোন আসামিদের গ্রেপ্তার করতে কাজ করে ইন্টারপোল। তাদের কাছে পলাতক আসামিদের ব্যাপারে তথ্য থাকে। তারাই বিভিন্ন দেশে পলাতক আসামিদের অবস্থান সম্পর্কে জানে এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানি জারি করে। বিদেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। তবে বিশ্বজিৎ দাসের খুনি রাজনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি এই সংস্থাটির।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (ইন্টারপোল) মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি ডিএমপির সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওরাই আপনাকে পলাতক আসামিদের ব্যাপারে আপগ্রেড তথ্য দিতে পারবে।’
সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বিশ্বজিৎ দাসের পলাতক আসামিদের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। সেসব থানার পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে।’
একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পাঁচজন আসামি বিদেশে পলাতক রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এমন প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সবাইকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাই চলছে।’
খুনি রাজন কলকাতায়?
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া রাজন তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়ার আগে রসায়ন বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
তার বন্ধু ও ঘনিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজন ভারতের কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে সেখানে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কয়েক মাস আগে তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টও সচল হয়েছে। ফেইসবুকে নিজের অবস্থান ঢাকায় লিখলেও ভারতীয় একটি ফোন নম্বর সেখানে দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টে রায়ের আগের দিন শনিবার ফেইসবুকে রাজন এবং এ মামলার ২১ আসামিকে নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগেরসহ সভাপতি তানবির আহম্মেদ সিদ্দিকীর একটি পোস্টও তিনি শেয়ার করেছেন।
সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম আশরাফ উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সাধারণত কোন আসামির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হলে বা রায় হলে তা তাদের স্থায়ী ঠিকানায় চলে যায়। স্থানীয় পুলিশ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। তবে বিশ্বজিৎ দাসের মামলাটি যেহেতু আমাদের থানায় হয়েছে সেজন্য আমরাও এ ব্যাপারে খোঁজ খবর রাখছি।’
ঢাকাটাইমস/০৭আগস্ট/এএ/ডব্লিউবি

মন্তব্য করুন