দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভোটের মূল ফ্যাক্টর পদ্মা সেতু
অল্প কয়েকদিনেই চূড়ান্ত হবে আগামী পাঁচ বছর কারা নেতৃত্বে দিচ্ছেন নতুন সরকারের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে সরগরম রাজনীতির মাঠ। ভোটের হিসাব-নিকাশে দিনরাত গণসংযোগে ব্যস্ত প্রার্থীরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে ভোটের হাওয়ায় নতুন মাত্রা হিসেবে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু। চায়ের দোকান থেকে কৃষিমাঠ- সবখানেই আলোচনা, কবে শেষ হবে সরকারের এই মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজ।
পদ্মা সেতু চালু হলে সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি, তৈরি হবে কর্মসংস্থান- এই ভাবনায় একে ঘিরেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ও সরকারদলীয় প্রার্থীদের প্রচারণা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। আর সবকিছু ছাপিয়ে সাধারণ ভোটাররা চাইছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের সফল সমাপ্তিতে পূরণ হোক তাদের স্বপ্ন।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ২০১৪ সালে কাজ শুরুর পর এক মুহূর্তও থামেনি পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ। স্প্যান বসছে একের পর এক। এখন দুই পাড়েই দৃশ্যমান স্বপ্ন সেতু। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে প্রকল্পের বড় অংশ। সার্বিক বিবেচনায় ৭১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর মূল পদ্মা সেতুর কাজ হয়েছে ৬০ শতাংশ।
নির্বাচনের রাজনীতিতে ঝড় তুলছে পদ্মা সেতু ইস্যু। চায়ের দোকান, সড়ক, বাড়ি সবখানেই আলোচনা- কবে শেষ হবে নির্মাণকাজ। ভাগ্যবদলের আশায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষ। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সরকারের আমলেই শেষ হবে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। তারপরই প্রবৃদ্ধিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে এই মেগা প্রকল্প।
এসব কারণে নির্বাচনের মাঠে পদ্মা সেতুকে ঘিরেই উন্নয়নের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের ইশতেহারেও গুরুত্ব পেয়েছে এই মেগা অবকাঠামোর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
মাদারীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী মনে করেন, ‘পদ্মা সেতু পুরোপুরি নির্মিত হলে সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পারে পদ্মাপাড়ের জেলা মাদারীপুর। এখানে তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পাঞ্চল, কল-কারখানা। কর্মসংস্থান বাড়বে, কমবে বেকারত্ব। ফলে এই জেলাসহ আশপাশের জেলার ভোটাররাও চান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ক্ষমতায় আসুক। এবারের নির্বাচনে নৌকার গণজোয়ার শুরু হয়েছে, বিএনপি থেকেও আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। আশা রাখি, এবারও আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’
মাদারীপুর-২ আসনের প্রার্থী ছয়বারের সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘সরকার নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ অঞ্চলের থেকে সবগুলো আসন উপহার দেবেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হলে পায়রা বন্দর থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক জোন তৈরি হবে। সে কারণে এবারের নির্বাচনে এসব অঞ্চলের মানুষ নৌকায় ভোট দেবেন।’
তবে সরকারদলীয় প্রার্থীদের এসব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছেন বিএনপির প্রার্থীরা। তাদের মতে, পদ্মা সেতু নিয়ে বিএনপির নামে অপপ্রচার চালাচ্ছেন সরকারি নেতারা। সেতুর বাস্তবায়নে অংশী হতে চান তারাও।
মাদারীপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী আনিচুর রহমান খোকন তালুকদার বলেন, ‘আমরা চাই, পদ্মা সেতু তৈরি হোক। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এর কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। এ ছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আরেকটি সেতু করা হবে। সেজন্যে খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে ধানের শীষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাই।’
একই কথা বলেন মাদারীপুর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিল্টন বেদ্যও। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পদ্মা সেতুকে কাজে লাগাচ্ছেন। বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে দুটি পদ্মা সেতুর নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছে।’
নতুন ডেটলাইনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর কথা আগামী বছরের শেষভাগে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার চেহারা পাল্টে দেবে এই সেতু। পদ্মাপাড়ের এ জেলাটির কা-ারি হতে তাই ভোটে জয়লাভে মরিয়া হয়ে নেমেছেন সরকারি-বিরোধী দলের সব প্রার্থীই।