ইতালিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দেয়া মামলায় মাফিয়াচক্রের কারাদণ্ড

ইউরোপ ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৪৩

ইতালির দক্ষিণের দ্বীপ সিসিলী জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এতনা কিংবা তার সুস্বাদু কমলা ও লেবুর জন্য সারাবিশ্বে পরিচিত হয়ে থাকলেও আরো একটি বিশেষ কারণে সবার কাছে পরিচিত যার নাম সিসিলিয়ান মাফিয়া। ভয়াবহ এই মাফিয়াদের সাথে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ইতালি সরকার এই জনপদকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করতে পারলেও একেবারে নিঃশ্বেস করা সম্ভব হয়নি এখনও।

আশির দশক থেকে এই শহরে বাংলাদেশিদের বসবাস। শুরুতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, দোকানে কিংবা বাসাবাড়ির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকতেন এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশি। নব্বই দশকের দিকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশিরা এখানে নিজস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলতে শুরু করেন। শুরুতে তেমন কোন অপ্রতিকূলতার সম্মুখীন না হলেও যখন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে এখানকার বাংলাদেশিরা আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠতে শুরু করলেন, তখনই এই মাফিয়া চক্রের চোখ পরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ওপর। চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, জীবননাশের হুমকিসহ শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হতে থাকেন এই নিরহ ব্যবসায়ীরা। অপরাধীরের চেনার পরও পুলিশের কাছে অজ্ঞাত নামে সাধারণ চুরির মামলা ছাড়া তেমন কিছু করার থাকত না, কারণ এর থেকেও বড় ক্ষতি কিংবা তাদের হুমকির ভয়ে প্রশাসনের কাছে সাহায্য না চেয়ে এই মাফিয়া চক্রকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করে আসছিলেন সবাই।

ব্যবসায়ীদের জীবনের নিরাপত্তার ভয় ও নীরবতা এই চক্রকে আর হিংস্র করে তুলে থাকে। এই হিংস্রতা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে ২০১৬ সালে পালেরমোর এক ব্যস্ততম শহরে দিন দুপুরে গাম্বিয়ান এক যুবক এই চক্রের এক সদস্যের গুলিতে নিহত হয়। তারপর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ইতালিয়ান এন্টি-মাফিয়া একটি সংস্থার উৎসাহে ও পৃষ্ঠপোষকতায় নির্যাতিত ১০ জন সাহসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এই চক্রের মোকাবিলা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আর এটিই ইতালিতে প্রথম কোন অভিবাসী মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের দুঃসাহসিকতা দেখানোর একমাত্র উদাহরণ।

তারপর দীর্ঘ তিন বছর আইনি লড়াইয়ের পর গত শুক্রবার পালেরমোর ভিয়া মাকুয়েদ ও বাল্লার বাজারের বাঙালী ব্যবসায়ীদের সাথে মাফিয়া পদ্ধতিতে চাঁদাবাজি, জাতিগত বৈষম্য ও নির্যাতনের মামলার এক ঐতিহাসিক রায় অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযুক্ত নয় আসামির মধ্যে আটজনের সামগ্রিকভাবে ৬০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ জন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর মাথাপিছু পাঁচ হাজার ইউরো অস্থায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেন পালেরমোর আদালত।

এই রায়কে একটি ঐতিহাসিক রায় বলে আখ্যায়িত করেন পালেরমো সিটি মেয়র লেওলুকা অরলান্ড এবং বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন।

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের এই সাহসিকতা মাফিয়া নির্মূলে আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের এক দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

নির্যাতিত ব্যবসায়ীরা ও এই মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন, তবে তারা আশা করছেন- সম্ভব্য অপরাধীদের আপিলেও যেন এই রায় অব্যাহত থাকে এবং বহু কষ্টে গড়ে তোলা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারেন।

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

প্রবাসের খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :