রাজশাহীর পদ্মায় ঝুঁকিপূর্ণ নৌ-ভ্রমণ

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
  প্রকাশিত : ১৫ জুলাই ২০১৯, ১৮:০৬
অ- অ+

রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌ-ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিরাপত্তার তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। নৌকার চালক কিংবা ভ্রমণকারীরা কেউই নৌ-ভ্রমণে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভাবছেন না। ঝুঁকি নিয়ে তারা নৌকায় চড়ে পদ্মায় ভ্রমণে বের হচ্ছেন। রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুর টি-বাঁধ ও লালন শাহ্ মঞ্চ এলাকা থেকে এখন কিছু নৌকা পদ্মা পাড়ে ঘুরতে যাওয়া বিনোদন পিপাসুদের নদীতে বেড়াতে নিয়ে যায়। পদ্মার সব স্থানে পানি না থাকায় এখন এ দুটি স্থান থেকেই নৌকাগুলো চলাচল করে। কিন্তু এসব নৌকার বেশিরভাগেই থাকে না কোনো লাইফ জ্যাকেট।

আবার আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে নদীতে কখন নৌকা ছাড়বে আবার কখন নৌ-ভ্রমণ বন্ধ থাকবে তা দেখভালের জন্য কেউ নেই। তাছাড়া নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে কি না সেটাও দেখার মতো কেউ নেই। ফলে যখন খুশি, যতজন খুশি যাত্রী নিয়ে পদ্মায় ভেসে যায় নৌকাগুলো।

এমন ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাবা-মায়ের সঙ্গে নৌকায় ওঠে শিশুরাও। তবে নৌকায় ভ্রমণকারীদের একটা বড় অংশই তরুণ-তরুণী। এরা নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। বন্ধু-বান্ধব সবাই একসাথে নৌকা ভ্রমণে বের হন। নৌকায় উঠে তারা হৈ-হুল্লোড়ও করেন। ফলে নৌকাগুলো একদিকে হেলে পড়ে।

এ অবস্থায় কখনও কখনও নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটে। এতে ঘটে প্রাণহানি। তারপরেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় না কেউ। এই মুহূর্তে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মায় ঝুঁকিপূর্ণ নৌ-ভ্রমণ শুরু হয়েছে। মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানি যত বাড়বে ঘাটে তত নৌকার সংখ্যাও বাড়বে। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়েই পদ্মার এ পার থেকে কিছু সময়ের জন্য নদীতে ঘুরিয়ে আনা হয় ভ্রমণ পিপাসুদের। তবে রিজার্ভ নিয়েও পদ্মায় যান কেউ কেউ।

এদিকে নৌ-ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের মতো কেউ না থাকায় এখনই অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে নৌকাগুলো নদীতে ছাড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় রবিবার বিকালে শ্রীরামপুর এলাকায় নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যান দুই তরুণী। তাদের সঙ্গে পানিতে পড়ে নৌকায় থাকা একটি কাঠের বেঞ্চও। সেটি ধরে প্রাণে রক্ষা পান ওই দুই তরুণী।

কিন্তু ওই নৌকায় কোনো লাইফ জ্যাকেট ছিল না। নৌকাটি বেঞ্চ ধরে ভাসমান দুই তরুণীর কাছাকাছি নিয়ে গেলে তারা উঠে আসেন। এরপর যাত্রীদের পাড়ে নামিয়েই পালিয়ে যান নৌকার মাঝি। স্থানীয়রা বলছেন, মাঝেমধ্যেই ঘটে এ রকম ঘটনা। অতিরিক্ত যাত্রী তোলার কারণে প্রায়ই নৌকা এক দিকে হেলে পড়ে। তখন পানিতে পড়ে যান কোনো কোনো নৌকার আরোহী।

রাজশাহী পনি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এলামুল হক জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে পদ্মা নদীতে পনির উচ্চতা ছিলো ১৩ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। এনামুল বলেন, টি-বাঁধ এলাকায় জোরে ঘুর্ণিমান ঢেউ হয়। এতে ডিঙ্গি, শ্যালোসহ সকল প্রকার নৌকা চলাচল নিষেধ। গতকালও সবাইকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা শোনে না। অনভিজ্ঞ মাঝিরা কাচা হাতে হাল ধরে শ্যালো নৌকাগুলো নদীতে ভাসিয়ে দেয়। ফলে সামান্য বাতাসেই ঘটে দুর্ঘটনা।

এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালের মে মাসে। নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় ঝড়ের কবলে পড়ে পদ্মায় ডুবে মারা যায় দুই শিশুসহ পাঁচজন। গত বছরও প্রাণ হারান অন্তত দুইজন। কিন্তু সতর্ক হয়নি কেউ। এবারও পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীতে শুরু হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ নৌকা ভ্রমণ। টি-বাঁধ ঘাটের নৌকার মাঝি শিহাব আলী (২২) বলেন, তার নৌকায় লাইফ জ্যাকেট আছে। কিন্তু নৌকায় যারা ওঠেন তারাই এগুলো পরতে চান না। এ কারণে বেশিরভাগ নৌকাতেই লাইফ জ্যাকেট থাকে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর নৌ পুলিশের ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহদী মাসুদ বলেন, আমরা রাজশাহীতে নতুন যাত্রা শুরু করেছি। বিষয়গুলো জানা নেই। তবে আমরা কোনোভাবে নদীতে ঢেউ থাকা অবস্থায় ভ্রমণকারীদের নিয়ে পদ্মায় নৌকা ছাড়তে দেব না। পাশাপাশি সচেতনতার জন্য আমরা ঝুাঁকপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করবো। সব নৌকায় যেন লাইফ জ্যাকেট থাকে সিটিও নিশ্চিত করা হবে।

ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/ইএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আজ হাসিনা-কামাল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে দ্বিতীয় দিনের শুনানি
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ১০- একটি অসমাপ্ত কবিতার ঘরে ফেরা
২৭ দিনে দেশে ফিরলেন ৭৩ হাজার ৪৯৩ হাজি, ১০ জুন পর্যন্ত ফিরতি ফ্লাইট
মাস্কের নতুন দল গঠনকে ‘উদ্ভট’ বললেন ট্রাম্প, সমালোচনা করলেন নিজেরই নাসা প্রধানের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা