এত মানুষের জীবন আপনাদের গুরুত্বে এলো না!

পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ
  প্রকাশিত : ০৩ আগস্ট ২০১৯, ১৬:১৫
অ- অ+

মাসুম দুই বাচ্চার মা হারানোর কান্না কোনোভাবেই সহ্য করা যাচ্ছে না। মা হারানোর কান্না আশপাশে বড় বেশি আঘাত করেছে। কবিরের দুই শিশু সন্তানের এই কান্না সবাইকে শোকার্ত করেছে। আমার গাড়ির ড্রাইভার কবির। তার স্ত্রী আসমার হঠাৎ জ্বর এবং বমি হয়। তাকে ঢাকার ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্ত করেন।

চিকিৎসা হচ্ছিল কয়েকদিন থেকে। আজ (শুক্রবার) বিকাল সাড়ে ৫টায় তার মৃত্যু হয়। সে বাঁচতে পারেনি। সুস্থ হয়নি। ভর্তির পর থেকে ডাক্তাররা বলছিলেন কয়েকদিন পর ভালো হয়ে বাসায় চলে যেতে পারবে। গতকাল থেকে তার অবস্থা হঠাৎ খারাপ হয়। শরীরে পানি আসে। ব্লাড প্রেশার কমে যায়। গতরাতে কিছুটা উন্নতি হয়। আজ (শুক্রবার) সকাল থেকে খারাপ। বিকালে মৃত্যু।

আসমার বয়স বেশি ছিল না। পরিবার বলছে ৩০/৩১ হবে। বড় মেয়ে আমার রোদশীর চেয়ে কিছু ছোট। ছেলে বিস্ময়ের কাছাকাছি। পড়াশোনায় বাচ্চারা ভালো। মা তাদের স্কুল-পড়াশোনার দায়িত্ব পালন করতো।

কবির সারাদিন আমার সঙ্গেই থাকত। হয় সুনামগঞ্জ না হয় ঢাকায়। হাসপাতালে মায়ের নীরব দেহের সামনে তাদের আর কবিরের কান্না আশপাশে থাকা কোনো মানুষ সহ্য করতে পারেনি। হঠাৎ এই ডেঙ্গুতে তাদের মা চলে গেছে। এটা তারা মানবেই কীভাবে। কবির কীভাবে মেনে নেবে তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যু। তার স্বজনরা চিৎকার করে কাঁদছে।

সন্তানরা কাঁদছে। স্বামী কাঁদছে। ভাই-বোন মেনে নিতে পারছে না এই মৃত্যু। ডেঙ্গুতে হাসপাতাল রোগীতে পূর্ণ। তাদের স্বজনদের এই মৃত্যু গভীর চিন্তায় ফেলেছে। তারা জানতে চাচ্ছেন। প্লাটিলেট আর প্রেশারের হিসেব।

ডেঙ্গুতে অনেকের মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। আজকেই শুনলাম এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুর খবর। যারা মারা যাচ্ছেন তাদের স্বজনরা-সন্তানরা আসমার সন্তানদের মতো স্বজনদের মতো নিশ্চয় বিলাপ করছেন। এই মা হারানো সন্তানরা একদিন নিশ্চয় জানতে চাইবে আমার মায়ের ডেঙ্গু হয়েছিল কেন?

সিটি করপোরেশনের মশা মারার ৫০ কোটি টাকার ওষুধ কী হয়েছিল? মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হয়। সবাই জানে। সিটি করপোরেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সময়মত দায়িত্ব পালন করলেন না কেন?

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘কেউ বা মরে কথা বলে আবার কেউ বা মরে কথা না বলে।' মৃতের সংখ্য বাড়ছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মৃতদের স্বজনরা কথা বলছেন। বিবেকবান মানুষেরা কথা বলছেন। যাদের দায়িত্ব ছিল মশা নির্মূলের, মানুষের জীবন নিরাপদের, তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

কয়েকদিন আগেও ডেঙ্গু নিয়ে দায়িত্বশীলরা তামাশা করেছেন। মৃত্যুর দায় তাদের নিতে হবে। আসমার সন্তানদের মতো, স্বজনদের মতোই শুভ মানুষের দাবি সোচ্চার হচ্ছে। এর দায় তারা এড়াতে পারেন না।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। মানুষ আতঙ্কিত। আতঙ্কের কারণ আছে। ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েও আসমারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। আর যারা ঢাকার ভাসমান মানুষ তারা যখন আক্রান্ত হবেন। মফস্বলের জেলা-উপজেলায় যখন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে তখন? অনেকে ডেঙ্গু শনাক্তের আগেই মৃত্যুবরণ করবে আবার অনেকে চিকিৎসার অভাবে। যারা দায়িত্বে ছিলেন এটি কেমন কাজ করলেন আপনারা। অদ্ভূত আপনারা। এত মানুষের জীবন আপনাদের গুরুত্বে এলো না!

আসমার সন্তানদের মতো মাসুম বাচ্চাদের বুকফাটা আর্তনাদ আপনাদের স্পর্শ করবে কি না জানি না। সংবেদনশীল হলে দায়িত্বশীল হতেন। কাজেই আপনাদের স্পর্শ করবে না। তবে আমার বিশ্বাস মা-হারা শিশুদের বুকফাটা আহাজারি, বিলাপ আপনাদের অমঙ্গলই নিয়ে আসবে। নিশ্চয় এর প্রতিশোধ হবে। প্রকৃতির বিচার খুব কঠোরতরই হয়।

লেখক: সংসদ সদস্য, সুনামগঞ্জ-

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ওপর
ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ পদে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা, দলের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: টঙ্গীর তিন বিএনপি নেতাসহ ৪ জন বহিষ্কার
পশ্চিমবঙ্গের একই এলাকা থেকে নিখোঁজ ৫০০ বিবাহিত তরুণী!
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা