অবৈধ গ্যাস সংযোগ

সাভারে তিতাসের ৮৬ অভিযানেও মিলছে না সুফল

ইমতিয়াজ উল ইসলাম, সাভার (ঢাকা)
  প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর ২০১৯, ১০:৪৬
অ- অ+
সাভার আঞ্চলিক তিতাস গ্যাস অফিসে স্তূপাকারে রাখা উচ্ছেদ অভিযানে জব্দকৃত পাইপ

ঢাকার সাভার উপজেলায় প্রশাসন ও তিতাসের নাকের ডগায় চলছে রাষ্ট্রীয় মূল্যবান সম্পদ তিতাস গ্যাসের হরিলুট। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারী ও ব্যবহারকারীদের দৌরাত্ম্যে মূল্যবান এই সম্পদের অপচয় কোনোভাবেই যেন রোধ করা যাচ্ছে না। এতে বিপুল রাজস্ব থেকে সরকার একদিকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি অপচয় হচ্ছে মূল্যবান এই সম্পদ।

অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধে তিতাস কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের অর্থলগ্নি করে টানা অভিযান পরিচালনা করলেও মিলছে না সুফল। এসব অবৈধ গ্যাস সংযোগে ব্যবহৃত নিম্নমানের ফিটিংসের লিকেজ থেকে মাঝে মধ্যেই বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা।

সাভার আঞ্চলিক তিতাস অফিস সূত্রে জানা যায়, সাভার ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় গত তিন বছরে (জানুয়ারি ২০১৭-অক্টোবর ২০১৯) অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে ৮৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ৫৬৯টি স্পটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে ৩৯৪ কিলোমিটার এলাকার এক লাখ ৭২ হাজার ২০০ অবৈধ গ্যাস সংযোগ। যার অধিকাংশই আবাসিক গ্রাহক। অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের অপরাধে এ পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে ২০ লাখ ২৬ হাজার ২০০ টাকা এবং মামলা হয়েছে ১২টি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিটি অভিযান অংশ নেওয়া ৬০ জন দিনমজুরকে ন্যূনতম এক হাজার টাকা দেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেকটি উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত দুটি জেনারেটরের ভাড়া বাবদ খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। এমনকি নিরাপত্তার জন্য রাখা প্রত্যেক অভিযানে ২৫ জন পুলিশ সদস্যকেও নাকি দিতে হয়েছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া উপস্থিত তিতাস কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক ও পুলিশসহ একশ লোকের প্রত্যেকের দুপুরের খাবার বাবদ ২২০ টাকা করে খরচ হয় ২২ হাজার টাকা। এতে করে তিতাসের প্রতিটি গ্যাস উচ্ছেদ অভিযানে ন্যূনতম ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় দেড় লাখ টাকা। আর গত তিন বছরে ৮৬টি অভিযানে তিতাসের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা। যদিও প্রতিটি অভিযানে সরকারি বরাদ্দ ৮০ হাজার টাকা বলে জানা গেছে।

তবে সরকারি অর্থলগ্নি করে তিতাসের এতসংখ্যক অভিযানেও সাভারে যেন কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না অবৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগের হিড়িক। দিনে অভিযান পরিচালনা করা হলেও রাতের আঁধারে প্রভাবশালী অসাধুদের কারণে একই স্থানে দেওয়া হচ্ছে পুনঃসংযোগ।

জানা গেছে, সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, তেঁতুলঝোড়া, গেন্ডা, রেডিওকলোনী ও কলমা এলাকায় একাধিকবার তিতাস কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অধিকাংশ এলাকাতেই আবারো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

আশুলিয়ার এলাকার হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য অবৈধ আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা জানান, তিতাস কর্মকর্তাদের কথা বলে ২০-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের অবৈধ সংযোগ দেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এরপর হঠাৎ তিতাস কর্তৃপক্ষ এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে ভাড়াটিয়াসহ তারা পড়েন বিপাকে। পরে প্রভাবশালীদের বৈধ করে দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে পুনরায় সমপরিমাণ অর্থ দিয়েই সংযোগ নেন তারা। তাই এই দুর্ভোগ এড়াতে তাদের যেন বৈধ সংযোগ প্রদান করা হয় এজন্য তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

দুর্ঘটনার ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের ৪নং জোন কমান্ডার আনোয়ারুল হক বলেন, বিগত কয়েক মাসে গ্যাস সংযোগের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাভার ও আশুলিয়ায় একই পরিবারের পাঁচজনসহ আটজনের প্রাণহানি হয়েছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। অবৈধ গ্যাস সংযোগে ব্যবহৃত নিম্নমানের ফিটিংসের কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও জানান তিনি।

সাভার আঞ্চলিক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী আবু সাদাত মো. সায়েম ঢাকা টাইমসকে জানান, সাভার উপজেলায় প্রায় ৫২ হাজার বৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগের বিপরীতে অসংখ্য অবৈধ সংযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা ৫৬৯টি স্পটে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে বিপুলসংখ্যক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। একই সাথে জরিমানা ও মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অবৈধ গ্যাস সংযোগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই রাষ্ট্রীয় এই সম্পদ রক্ষার্থে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

অবৈধ গ্যাস সম্পদের চুরি বন্ধের বিষয়ে জাহাঙ্গীনরগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, গ্যাস হচ্ছে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন খনিজ সম্পদ। রাষ্ট্রীয় মূল্যবান এই সম্পদের চুরি ও অপচয় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই সম্পদ চুরির সাথে কেবল প্রভাবশালীরা নয়, তিতাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীও জড়িত।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় এই মূল্যবান সম্পদকে বাঁচাতে হলে ২০০৯ সালে গ্যাস সংযোগ প্রদানের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। একই সাথে চুরির সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে গ্যাস খাতের বর্তমান এই অরাজকতা বন্ধ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/আইআই/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঢাকাসহ ১১ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস
ভেষজ আনারস ক্যানসার প্রতিরোধে সিদ্ধহস্ত, শরীরের ওজনও কমায়
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ১১০ জন
ড. ফয়জুল হককে বিএনপি থেকে বহিষ্কার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা