মলমূত্র ও ময়লা আবর্জনায় সয়লাব ইজতেমা ময়দান

মলমূত্র, ময়লা-আবর্জনা, বাথরুম ও ড্রেনের ময়লা পানিতে তলিয়ে গেছে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হতে না হতেই দেখা গেল এ চিত্র। এ পর্বে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাবলিগের শুরা সদস্য ও কাকরাইল মসজিদের খতিব মাওলানা যোবায়ের অনুসারীরা।

ইজতেমায় ব্যবহৃত টয়লেট ও শিল্প এলাকার বর্জ্যযুক্ত অপরিষ্কার পানিতে মূলমঞ্চসহ ময়দানের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা ময়দান জুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ, মূল প্যান্ডেলের অনেকাংশের শামিয়ানা ছেঁড়া দেখা গেছে।

প্রথম পর্বে অংশ নেওয়া তাবলিগের মুসল্লিরা জানান, ইজতেমা চলাকালীন শনিবার রাতে ময়লা আবর্জনায় সুয়্যারেজ লাইন ব্লক হয়ে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি ময়দানে ঢুকে পড়ে। ময়দানের ৭ নম্বর টয়লেট ভবনের পাশে ড্রেনের ম্যানহোল উপচে পানি প্রথমে ময়দানের ৪১, ৪২ ও ৪৩ নম্বর খিত্তায় প্রবেশ করে। বিষয়টি জানতে পেরে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল তাৎক্ষণিক দমকল বাহিনীর কর্মীদের ডেকে আনেন। পরে দমকল বাহিনীর কর্মীরা দুটি পাম্প চালু করে পাইপের সাহায্যে পানি অন্যত্র অপসারণের চেষ্টা করেন। তাদের চেষ্টার ফলে পানি ৪১ নং খিত্তায় সীমাবদ্ধ থাকে। রাতে ওই খিত্তার মুসল্লিরা অন্যান্য খিত্তায় আশ্রয় নেন। কিন্তু রবিবার আখেরি মোনাজাতের পর দুপুর থেকে পানি প্রবেশ করে মুহূর্তের মধ্যে পানি ইজতেমা ময়দানের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মোনাজাতের পরে সুয়্যারেজ লাইনের ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ময়দানের ৮৬, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খিত্তাসহ আশপাশের খিত্তাগুলোয় প্লাবিত করে।

টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আতিকুর রহমান জানান, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ময়দানে গিয়ে সুয়্যারেজ লাইনের ভিতরে যে গ্যাস জমা হয়েছিলো মেশিনের মাধ্যমে তা বের করে। পরে সিটি করপোরেশনের পরিছন্ন কর্মীরা লাইনের ভেতর থেকে ময়লা আবর্জনা বের করেন।

ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, ইজতেমার মূলমঞ্চসহ আশপাশের অধিকাংশ এলাকা ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তাবলিগের মুসল্লিরা তাদের বেডিংপত্র অন্যত্র স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন। অনেকে রাস্তা, ময়দানের পশ্চিম পাশের উঁচু টিলায় ও বিদেশিদের কামরা এলাকায় আশ্রয় নেন। সকাল ১১টার দিকে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের পয়ঃনিষ্কাশনের কর্মীরা ২য় পর্বের ইজতেমার জন্য পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ শুরু করেছেন। মূল মঞ্চের চারপাশে ছোট ছোট গর্ত করে টয়লেট করার চিহ্ন পাওয়া গেছে। টয়লেটের কমোডে কাপড় ও বস্তা পেঁচিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। বেশ কিছু খিক্তার বাঁশ খুলে আগুন পোহাচ্ছে মুসল্লিরা। মাইকের তার ও সামিয়ানার তের্পাল ছিন্নবিছিন্ন হয়ে মাটিতে পড়ে থাকতেও দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটি করপোরেশনের এক পয়ঃনিষ্কাশনের কর্মী জানায়, টয়লেটের ময়লা পানি ও ফেলে রাখা ভাত, তরি-তরকারি অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ফেলে যাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার তাদের কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও সুবিশাল প্যান্ডেলের অনেকাংশে মুসল্লিদের ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট, কাগজ, পলিথিন, বিছানার হোগলা ইত্যাদি ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব হয়ে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশের শিল্প এলাকার বর্জ্য ওই ড্রেন দিয়ে তুরাগ নদীতে গিয়ে পড়ে। ড্রেনটি মূল শিল্প এলাকা থেকে টঙ্গী পূর্ব থানার পাশ দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অতিক্রম করে টঙ্গী-আশুলিয়া বাইপাস (কামাড়পাড়া) সড়ক হয়ে তুরাগ নদে পড়েছে। ইজতেমা ময়দানের বহুতল টয়লেটের বর্জ্যও এই ড্রেন দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তারা আরও জানান, গত বছর প্রথম পর্ব ইজতেমা সমাপ্তির পর একই অবস্থা হয়েছিলো। এবারও তা হয়েছে। বাথরুমের কমোডের ভেতরে কাপড় ও বস্তার টোপলা ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। মাইকের তার ছেড়া, ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিলো।

এ ব্যপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী (পানি) আনিসুর রহমান বলেন, ইজতেমা ময়দান হয়ে তুরাগ নদী পর্যন্ত সুয়্যারেজ লাইনটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। গত তিন দিনের ইজতেমার বর্জ্যে ড্রেনটি ব্লক হয়ে পানি উপচে ময়দানে প্রবেশ করে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ময়লা পানি অন্যত্র সেচে ফেলা ও ড্রেন পরিষ্কার করার চেষ্টা করছে।

ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. জহির ইবনে মুসলিম জানান, মুসল্লিরা ময়দানে থাকা অবস্থায় ময়লা পানি ঢুকে গেছে। এমনকি বড় বড় ওলামাদের খিত্তায়তেও পানি উঠেছে। পরে তাদের বিদেশি মেহমানদের কামরায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ময়দানের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত করে টয়লেট, বাথরুমের কমোডের ভিতরে কাপর ও বস্তা ঢুকিয়ে রাখাসহ বিশৃঙ্খল কাজগুলো ইজতেমা চলাকালীন হয়নি। এগুলো তাদের হেনস্তা করার জন্য অন্য কেউ করে থাকতে পারে।

রবিবারের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আলমি শুরার তত্ত্বাবধানে শেষ হয় ইজতেমার প্রথম পর্ব। মাওলানা সা'দ আহমাদ কান্ধলভী’র অনুসারীদের ইজতেমা শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি। ১৯ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা।

ঢাকাটাইমস/১৩জানুয়ারি/ইএস