লক্ষ্মীপুরে ‘নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের’ ছড়াছড়ি

আব্বাস হোসেন, লক্ষ্মীপুর
  প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:২২
অ- অ+

শিক্ষকদের কাছে জিম্মি শিক্ষার্থীরা। লক্ষ্মীপুরে পাঠ্য তালিকার বাইরে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিটি বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের ছড়াছড়ি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, শ্রেণি কক্ষের শিক্ষকদের নির্দেশে বিভিন্ন কোম্পানির গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে।

তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন, গাইড বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে শিক্ষক এ গাইড কিনতে উৎসাহ বা বাধ্য করছেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা যায়, গাইড বইয়ের নমুনা কপি (স্যাম্পল) ও বুকলিস্ট বিভিন্ন লাইব্রেরি ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জেলার সব কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিনামূল্যে দেয়া বইয়ের বাইরে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ড বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকাশনার গাইড বই বিদ্যালয়ে সয়লাভ হয়ে গেছে।

একই বইতে প্রতিবছর মোড়ক পরিবর্তন করে নি¤œমানের বই বাজারে বিক্রি করছে। বিভিন্ন প্রকাশনার মালিক ও এজেন্টরা স্কুল মাদ্রাসার শিক্ষকদের মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে এসব নিষিদ্ধ গাইড বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কিনতে বাধ্য করছে। যদি গাইড বই না কিনে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন শিক্ষকরা। তাই বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা নোট বই কিনতে হচ্ছে।

সদর উপজেলার বাংগাখাঁ, মান্দারী বহুমুখী, রসুলগঞ্জ, দালাল বাজার এনকে উচ্চ বিদ্যালয়, কামালখোলা হাইস্কুল, শহীদ স্মৃতি একাডেমি, আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে-হাতে বিভিন্ন প্রকাশনা গাইড বই। এভাবে শ্রেণি কক্ষে এসব নিষিদ্ধ গাইড বই নিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। পাশাপপাশি শিক্ষকদের হাতেও একই চিত্র। শুধু যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তা নয়। প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ছাড়াও রয়েছে মাদ্রাসা ও বেসরকারি স্কুল।

শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিটি শ্রেণি কক্ষের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত প্রকাশনার গাইড কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। গাইড নিয়ে বিদ্যালয়ে না আসলে নানা অজুহাতে মানসিক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা। তাই বাধ্য হয়ে গাইড বই নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছি।

এ দিকে অভিভাবকরা জানান, সন্তানদের চাপের কারণে প্রতিটি বিষয়ে একাধিক প্রকাশনার গাইড বই কিনে নিতে হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন সন্তানদের মানসিক চাপ বাড়ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে নিচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক সমিতির নেতা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা প্রকাশনার লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে এসব গাইড বই শিক্ষার্থীদের নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

তবে গাইড বইয়ের কথা স্বীকার করে শিক্ষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, সৃজনশীল প্রশ্নপত্র হওয়ার কারণে মূলত গাইড বই নিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য করা হচ্ছে।

তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মুনছুল আলী চৌধুরী ও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তালেব বলছেন, গাইড বই পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যে শিক্ষক এ গাইড কিনতে উৎসাহ বা বাধ্য করছেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, শিক্ষকরা অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি প্রতিটি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
২০৩০ সালের মধ্যে ১৫০ পৌরসভায় শেষ হবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ: অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথায় বোতল মারল কে?
কিছু ঘটলেই যমুনায় যাওয়ার প্রবণতা সহ্য করা হবে না: উপদেষ্টা মাহফুজ 
সিলেট থেকে ৪১৮ যাত্রী নিয়ে মদিনায় গেল প্রথম হজ ফ্লাইট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা