‘আমার সন্তানদের মুখ ভেসে উঠেছিল মনে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০২০, ১৩:২২| আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২০, ১৩:২৪
অ- অ+

কার্যত লকডাউনে সারা দেশ। ঘরবন্দী মানুষ। বাইরে বেরোনো নিষেধ। পথে কেউ নেই। এমন নির্জন রাতে কল আসে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সজল কুমার কানুর মুঠোফোনে। জানতে পারেন তার থানাধীন কেচুটিলা গ্রামের একটি পরিবারের তিনটি শিশু না খেয়ে আছে। অসহায় মা শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারেননি।

কেচুটিলা একেবারেই দুর্গম এলাকা। যোগাযোগের খুব একটা সুব্যবস্থা নেই। সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা লাগোয়া। রাত তখন ১০টা পেরিয়ে গেছে। সীমিত পরিসরে যে কয়েকটি মুদিখানা খোলা থাকে, তাও বন্ধ। কিন্তু শিশুরা সারারাত না খেয়ে থাকবে, এটাও চাননি সজল কুমার। উপবাসে থাকা শিশুদের কথা শুনতেই নিজের সন্তানের মুখ ভেসে ওঠে মনে। তিনিও যে তিনকন্যার জনক। কিন্তু উপায়?

ঘরে যা আছে তাই নিয়ে তুলে দিতে চান অনাহারী শিশুদের মুখে। নিজের বাসা আর থানা মেসে রান্না করা ভাত, ডাল, সবজি আর টেংরা মাছ দুই টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে নিয়ে রওনা হলেন প্রত্যন্ত এলাকা কেচুটিলার দিকে। বাহন মটরসাইকেল। সঙ্গে তারই সহকর্মী এসআই রাজীব, এএসআই সিরাজ ও মাহফুজ।

দুর্গম পথ পারি দিয়ে যখন কেচুটিলায় আছমা বেগমের দুয়ারের সামনে তারা দাঁড়ালেন, তখন ঘড়ির কাটা বারোটা ছুঁই ছুঁই।

মাটির ঘর। টিনের দরজা। কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে জানতে চাওয়া হলো পরিচয়। পরিচয় দিতেই দরজা খুলে গেলো। বেরিয়ে এলেন মা আছমা বেগম। অনাহারী শিশুরা তখন ক্ষুধার কষ্টে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।

খাবার হাতে পুলিশ সদস্যদের দেখে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন আছমা বেগম। ডেকে ঘরে নিলে। তারপর জানালেন, দিনে এক প্রতিবেশির থেকে দুই কৌটা চাল এনে আর আলু সিদ্ধ করে খেতে দিয়েছিলেন তিন সন্তানকে। রাতে কিছু নেই। তাই না খেয়েই থাকতে হচ্ছে।

আছমা বেগমের দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। বড় ছেলে আশরাফ বয়স ১২ বছর। মেঝোটা আলী আহমদ বয়স ১০ বছর। সবার ছোট মেয়ে খোদেজার বয়স আট। খোদেজা যখন মায়ের গর্ভে তখন তাদের বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। ছেলে আশরাফ মাটির কাজ করে। দিনে দুই থেকে তিনশ টাকা পায়। সেই দিয়েই কোনোভাবে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে। কিন্তু এখন সবকিছু বন্ধ। কাজ নেই। তাই খাবারও নেই ঘরে।

খাবার পেয়ে মা সন্তানদের ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তারাও বিশ্বাস করতে পারেনি, এই রাতে তাদের খাবারের কোনো ব্যবস্থা হবে। খাবার দেখে তাদের চোখও ছলছল করে ওঠে। হয়তো তারা ভেবেছিল আর সব দিনের মতো অনাহারেই রাত কাটবে।

পুলিশ কর্মকর্তা সজল কুমার কানু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাচ্চাদের কথা শুনে আমার মায়া হয়। আমিও যে তিন মেয়ের বাবা! আমার সন্তানদের মুখ ভেসে উঠেছিল মনে। রাতে তো দোকানপাট কিছুই খোলা ছিল না। আমার ঘরে আর থানা মেসে যা ছিল তাই নিয়ে গিয়েছিলাম। ফেরার সময় পরের দিনের জন্য ৫০০ টাকা হাতে দিয়েছি। ওই শিশুদের মুখে আমি যে আনন্দ দেখেছি, তা আমার চাকরি জীবনের বড় পাওয়া।’

তিনি বলেন, ‘কেচুটিলা দুর্গম এলাকা হওয়ায় ত্রাণও ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারছে না। লোকজন খুব অসহায় অবস্থায় আছেন। তার মধে ওই এলাকার মানুষের মধ্যে দরিদ্রই বেশি। যারা ত্রাণ দিচ্ছেন তাদের অনুরোধ করবো তারা যেন কেচুটিলার মানুষের পাশেও গিয়ে দাঁড়ান। তাদের ঘরেও খাবার পৌঁছে দেন।’

কারোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কারণে সাধারণ ছুটি চলছে সারা দেশে। সংক্রমণের ঝুঁকিতে লকডাউনও হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা। এই পরিস্থিতিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ এলাকার কম আয়ের মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন থানার অফিসার ইনচার্জ। গত মঙ্গলবার তার নেতৃত্বে কোম্পানীগঞ্জ থানার বর্ণী, টুকের বাজার আদর্শ গ্রাম, ভোলাগঞ্জ গুচ্ছ গ্রাম, বুড়দেও এলাকায় কর্মহীন নিম্ন আয়ের তিনশত মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছেন তিনি।

২০০১ সালে উপ-পরিদর্শক হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন সজল কুমার কানু। পরে তিনি পদোন্নতি পেয়ে পরিদর্শক হন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলায়।

(ঢাকাটাইমস/ ৯ এপ্রিল/ এইচএফ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
প্রেমের টানে মালয়েশিয়ার তরুণী বদলগাছীতে, বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে
মুন্সীগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল ২ বন্ধুর  
চুয়াডাঙ্গায় তেলবাহী ট্রাপচাপায় ৩ জন নিহত
ক্যাসিনোকাণ্ড অভিযানের নেপথ্য কাহিনী জানলে চমকে যাবেন আপনিও
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা