বাইরে যেতে হতে হলে অবশ্যই যা করবেন

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে প্রায় প্রত্যেককেই থাকতে হচ্ছে ঘরবন্দি। তবে জরুরি কাজে মাঝেমধ্যে বাইরেও বের হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু বাইরে গিয়ে বা বাইরে থেকে ঘরে ফিরে কিছু সাবধানতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

করোনা ঠেকাতে প্রতিষেধক বা ওষুধ মেলেনি এখনও। যেকারণে মাস্ক ব্যবহার, সাবানপানি আর স্যানিটাইজারে হাত ধোয়ায় কোভিড-১৯-কে ঘায়েল করার অস্ত্র। প্রতিষেধক বা ওষুধের দেখা না পাওয়া পর্যন্ত জীবনযাপনে এসব সতর্কতা নো মানার বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়টা বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়িতে বানানো খাবার খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বাইরের খাবারে মোটেও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।

বাজার-দোকানে যেতে হলে খুব দরকার না পড়লে বাড়িতে মোবাইল রেখে যান। যাদের অফিস করতে হয়, তারা মোবাইল রাখুন ব্যাগের মধ্যে। খুব দরকার না হলে ফোন বের করবেন না। মোবাইল থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়।

আর মোবাইল নিয়ে গেলে বাড়ি ফিরে অ্যান্টিসেপটিক লোশনে তুলো ভিজিয়ে মুছে নিন মোবাইল। স্যানিটাইজার লাগিয়েও পরিষ্কার করতে পারেন ফোন। সেক্ষেত্রে তুলোয় করে স্যানিটাইজার লাগিয়ে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে নিন। মোবাইলের কভার আলাদা করে সাবান দিয়ে কচলে ধুয়ে নিন। সাবানপানি ধুয়ে নিতে পারেন।

বাজারের ব্যাগ তো বটে অফিসের ব্যাগও সাবানপানি কীটনাশক মেশানো পানি বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মেশানো পানি তুলো ভিজিয়ে তা দিয়ে মুছে নিতে পারেন। বাজারের ব্যাগ অবশ্যই কেচে নেবেন।

বাইরে বেরনোর জন্য গাড়ি ব্যবহার করলে সেই গাড়িও নিয়ম করে ধুতে হবে। জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে নিয়মিত।

এসময় হাতে কোনও রকম গয়না পরবেন না। হাতে ঘড়ি, আংটি, পাথর পরার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। এই কদিন সেসব অভ্যাস সরিয়ে রাখাই ভাল। যেকোনও ধাতব জিনিসে এই ভাইরাস থেকে যায় অনেকক্ষণ। তাই আংটি-পাথর থেকে সংক্রমণ ছড়ায়। তাছাড়া এসব হাতে থাকলে হাত ধুতেও অসুবিধা হয়।

এসময় সাধারণ ময়শ্চারাইজার ছাড়া খুব বেশি মেক আপ না করাই ভাল। মেক আপের রসায়নিক উপাদান বাতাসে ভেসে থাকা নানা অণুকে ত্বকে আটকে রাখতে পারে। এঁটে বসিয়ে রাখে। তাই খুব বেশি মেক আপের দরকার নেই।

একান্ত প্রয়োজনে সানস্ক্রিন মাখুন। তবে চোখ-মুখ ও ঠোঁটকে যত প্রসাধনবিহীন রাখবেন ততই সেসব পরিষ্কারে সুবিধা।

বারবার হাত ধুতে হবে ও মাস্ক পরার কারণে ত্বক শুকিয়ে র‌্যাশ বের হতে পারে। তাই হালকা কোনও ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। প্রতি বার হাত ধোয়ার পর তা ভাল করে মেখে নিন। হাতে নেলপালিশ লাগানোর দরকার নেই। নেলপালিশ পুরনো হলে বা শক্ত হয়ে গেলে নখের কোণ ভাল করে পরিষ্কার করা যায় না।

নিয়মিত বাইরে যেতে হলে হলে দু’টি মাস্ক ব্যাগে রাখুন। মুখে বাঁধা মাস্ক কোনও কারণে নষ্ট হলে বা ভিজে গেলে কাজে লাগবে অন্যটি।

টাকাপয়সা ঘাঁটার কাজ বেশি করতে হলে হাতে গ্লাভস পরুন। বাজার-দোকানের সময়েও হাতে গ্লাভস পরলে ভাল হয়। গ্লাভস হাতে থাকলে নাকে-মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতাও তুলনামূলক ভাবে কমে। তাছাড়া গ্লাভস পরলে অন্যের হাতের সঙ্গে সরাসরি আপনার হাতের সংযোগ কমে।

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় চেষ্টা করুন ফ্লাস্কে গরম পানি নিয়ে যেতে। বারে বারে অল্প করে গরম পানি পান করলে করোনাসমেত যেকোনও ড্রপলেট সংক্রমণ কিছুটা হলেও প্রতিহত করা যায়।

গরমে কষ্ট হলেও চেষ্টা করুন জুতোর সঙ্গে মোজা পরতে। বেশিক্ষণ এসিতে থাকলে এটা নিয়ে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা না থাকলে একটু পাতলা সুতির মোজা পরুন। ফিরে জুতো-মোজা খুলে হাতে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে যান। পায়ের থেকে নাক-মুখ অনেকটা দূরে থাকে ঠিকই। কিন্তু তাকে যত্নে রাখতে হবে, বাইরে বের হলে হাতের মতো করেই পা মুড়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

রাস্তাঘাটে থুতু, কফ থেকে পায়ে পায়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। জীবাণু আবার ছড়াতে পারে অন্তত ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব অবধি। তাই পায়ের খোলা অংশ ঢেকে রাখুন।

জুতো সাবান দিয়ে ধোওয়া সম্ভব নয় সবসময়। রাবারের বা বর্ষার জুতা পরে বের হলে অবশ্যই বাড়ি ফিরে তা ধুয়ে ফেুলন। অন্যরকম জুতা পরলে স্যানিটাইজার স্প্রে করে নিন জুতোয়। তাতেও অসুবিধা হলে বাড়ি ফিরে আলাদা জায়গায় জুতো রাখুন। পরেরদিন সকালে ঘণ্টাখানেক কড়া রোদে রেখে দিন।

পুলিশ, সাংবাদিক ও চিকিৎসক— এই মুহূর্তে যাদের সবচেয়ে বেশি বাইরে বের হতে হচ্ছে এবং লকডাউন উঠলেও যাদের গুরুত্ব এতটুকু কমবে না, তারা প্রতিদিন বাড়ি ফিরে হালকা গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। ড্রায়ার দিয়ে ভাল করে শুকিয়ে নিন চুল। তাতে ঠান্ডা লাগার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাবেন। ঠান্ডা লাগার ভয়ে দুবেলা চুল রোজ ধুতে না চাইলে অন্তত গোসেলের সময়টা বদলে ফলেতে পারেন।

বাইরে বের হওয়ার সময় মাথার চুলও পারলে ঢেকে রাখুন। ড্রপলেট ছড়াতে পারে তিন থেকে ছয় ফুট। তাই ভিড় জায়গা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

কোনও কারণে চুলে হাত দিলে সেই হাতই ফের চোখে মুখে যেতে পারে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে চুল ঢেকে রাখুন টুপি বা স্কার্ফে। বাড়ি ফিরে সেই টুপি বা স্কার্ফ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। আর এতটা না মানতে পারলে সচেতন থাকুন এবং বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

(ঢাকাটাইমস/১৩মে/ডিএম)