মামলার নথি ও কর্মকর্তাদের বক্তব্য

এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে যেভাবে গুলি ও জিম্মি করা হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ মে ২০২০, ১২:৫৭| আপডেট : ২৭ মে ২০২০, ১৭:১১
অ- অ+

বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়াকে যখন গুলি করা হয়, তার আগে সেখানে ঘটে নাটকীয় আরও ঘটনা। কী ঘটেছিল সেদিন সেখানে?

ওই ঘটনায় করা মামলা, এক্সিম ব্যাংকের এমডি, অন্য কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, নাটকের শুরু ৭ মে বেলা ১১টায় এক্সিম ব্যাংকের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে। মাঝে রূপগঞ্জ ও পূর্বাচল হয়ে বনানীর ১১ নম্বর সড়কের সিকদার হাউসে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শেষ। সেখানে এক্সিম ব্যাংকের এমডি হায়দার আলী ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনের ওপর চালানো হয় নির‌্যাতন। জোর করে সই নেওয়া হয় সাদা কাগজে। এ সবই সিকদার গ্রুপের এমডি রন হকের নেতৃত্বে ঘটে বলে অভিযোগ।

অভিযোগে বলা হয়, রন হক সিকদার এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে এই বলে শাসান, ‘তোর কত বড় সাহস! আমার কথা অমান্য করিস! গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দেব।’

আর অতিরিক্ত এমডির উদ্দেশে রন সিকদারের হুংকার, ‘তুই বললি প্রতি বিঘার দাম আড়াই কোটি টাকা। এখনই তোকে শেষ করে ফেলব।’

সিকদার হাউসে তাদের গুলি করা হয়নি বটে, তবে পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়কে এক্সিম ব্যাংকের এমডি হায়দার আলীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। অল্পের জন্য রক্ষা পান এক্সিম ব্যাংকের এমডি। পরে গাড়ির আড়ালে লুকান তিনি।

যেভাবে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়

৫০০ কোটি টাকা ঋণের জন্য এক্সিম ব্যাংকে আবেদন করেছিল সিকদার গ্রুপ। ঋণের অগ্রগতি জানতে গত ৭ মে বেলা ১১টায় এক্সিম ব্যাংকের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে যান রন হক সিকদার ও তাদের মালিকানাধীন ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ। ঋণের বিপরীতে জামানত নিয়ে আলাপ উঠলে তারা এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে রূপগঞ্জের আদি নওয়াব আসকারি জুট মিল পরিদর্শনে নিয়ে যান। কিন্তু জামানত হিসেবে এই সম্পত্তির বন্ধকি মূল্য নথিপত্রে দেখানো মূল্যের চেয়ে কম উল্লেখ করেন ব্যাংকটির এমডি ও অতিরিক্ত এমডি।

এ সময় রন হক সিকদার তাদের পূর্বাচলের ‘আইকন টাওয়ার’ পরিদর্শনে যেতে বলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে রন হক সিকদার ও চৌধুরী মোসতাক আহমেদকে না পেয়ে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি ৩০০ ফুট সড়ক ধরে ঢাকার দিকে রওনা দেন। পথে তাদের দেখা হয় রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডির সঙ্গে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি তাদের বলেন, ‘রন হক সাহেবের বলে দেওয়া নির্ধারিত স্থানে আপনারা উপস্থিত হতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে উনি অত্যন্ত মনঃক্ষুণ্ন ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’ তাদের গাড়ি থেকে নামিয়ে রন হক সিকদারের কাছে নিয়ে মাফ চাওয়ানো হয়। এরপর তারা নিজেদের গাড়ির দিকে যাওয়ার সময় রন হক সিকদার তার গাড়ির গ্লাস নামিয়ে এক্সিম ব্যাংকের এমডির উদ্দেশে গুলি ছোড়েন বলে অভিযোগ। গুলি তার বাম কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। রন হক আবার গুলি করতে গেলে এক্সিম ব্যাংকের এমডি গাড়ির পেছনে আশ্রয় নেন।

এরপর এক্সিম ব্যাংকের এমডির গাড়িতে অতিরিক্ত এমডিকে তোলা হয়। সঙ্গে রন হক সিকদারের একজন নিরাপত্তাকর্মীও ওঠেন। তিনি এমডি ও অতিরিক্ত এমডির মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের বনানীর সিকদার হাউসে নিয়ে যান।

গুলি ও জিম্মি করার ঘটনায় রাজধানীর গুলশান থানায় এক্সিম ব্যাংকের পক্ষে যে মামলা হয়েছে, তাতে বলা হয়, এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে অস্ত্রর মুখে সিকদার হাউসের তৃতীয় তলায় নেওয়া হয়। এমডির উদ্দেশে রন সিকদার বলেন, ‘তোর কত বড় সাহস, আমার কথা অমান্য করিস। গুলি করে জন্মের মতো খোঁড়া করে দেব।’ এরপর সেখানে তাকে জিম্মি করে রাখা হয়।

আর অতিরিক্ত এমডিকে নিয়ে যাওয়া হয় ষষ্ঠ তলায়। অভিযোগ, অতিরিক্ত এমডির উদ্দেশে রন হক সিকদার বলেন, ‘প্রতি কাঠা জমির দাম আড়াই কোটি টাকা, আর তুই বললি প্রতি বিঘার দাম আড়াই কোটি টাকা। এখনই তোকে শেষ করে ফেলব।’ এ সময় রন হকের ভাই দিপু হক সিকদার অতিরিক্ত এমডিকে মারধরের চেষ্টা করেন।

এরপর অতিরিক্ত এমডিকে তৃতীয় তলায় নেওয়া হয়। তাকে ও এমডিকে বিদেশি নিরাপত্তারক্ষীর পাহারায় রেখে পরে একটি সাদা কাগজে তাদের স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। স্বাক্ষর না করলে বিদেশি নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন চালানো হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। পরে জোর করে সাদা কাগজে এমডির স্বাক্ষর আদায় করেন রন হক এবং সাক্ষী করা হয় অতিরিক্ত এমডিকে।

এরপর বিকাল সাড়ে ৫টায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে নিয়ে তার সঙ্গে এমডি ও অতিরিক্ত এমডির ছবি তোলা হয়। রাত সাড়ে ৭টায় তাদের ছেড়ে দেওয়ার পর রন হক সিকদার নিচে নেমে সবার মোবাইল ফোন ফেরত দেন।

এসব ঘটনায় গুলশান থানায় এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলায় রন হক সিকদার ও তার ভাই দিপু হক সিকদারকে আসামি করা হয়েছে। তারা দুজনই পলাতক বলে জানান গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান।

মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে ঢাকাটাইমসকে ওসি বলেন, মামলার তদন্তের পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তারেরও চেষ্টা চলছে।

দেশে ও দেশের বাইরে নানা খাতে ব্যবসা ও বিনিয়োগ রয়েছে সিকদার গ্রুপের। জয়নুল হক সিকদারের ছেলেরা ব্যবসা দেখাশোনা করেন। মেয়ে পারভিন হক সিকদার জাতীয সংসদে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ।

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বরিশালে ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু
পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ওপর
ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ পদে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা, দলের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: টঙ্গীর তিন বিএনপি নেতাসহ ৪ জন বহিষ্কার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা