ফারহা খানের জিরো থেকে হিরো হওয়ার গল্প

বিনোদন ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২০, ১০:৩২

জন্মের সময় তাঁর বাবা কামরান খানের বৃহস্পতি তুঙ্গে। স্টান্টম্যান থেকে প্রযোজক হয়েছিলেন তিনি। সফল কেরিয়ারের পাশাপাশি স্ত্রী মেনকা এবং দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভরপুর সংসার। কিন্তু আচমকাই নেমে গেল তাঁর কেরিয়ারগ্রাফ। একের পর এক ছবি ফ্লপ। সংসারের অনটন চরমে উঠল ‘অ্যায়সা ভি হোথা হ্যায়’ ছবির সময়ে। এই ছবিতে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়ে যান কামরান খান।

শেষে অনটন থেকে চরমে ওঠে দাম্পত্য অশান্তি। মেয়ে ফারহা এবং ছেলে সাজিদকে নিয়ে স্বামীকে ছেলে চলে গেলেন মেনকা। তখন ফারহার বয়স মাত্র ১১ বছর। এর আট বছর পরে দেনার দায়ে সুরাগ্রস্ত ও ব্যর্থ প্রযোজক কামরান খান লিভারের অসুখে মারা যান। দুই সন্তানকে নিয়ে তখন মেনকা কার্যত কপর্দকশূন্য। ঘুরে ঘুরে দিন কাটে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। অথচ, তাঁদেরই এক সময় অবস্থা এত ভাল ছিল, সাহায্য চাইতেন আত্মীয় পরিজনরা।

ফারহা ও সাজিদের মা মেনকা ছিলেন হানি ও ডেইজি ইরানির বোন। আদতে পারসিক এই পরিবারের দুই বোন হানি ও ডেইজি দু’জনেই ছিলেন বলিউডের শিশুশিল্পী। হানি ইরানি ছিলেন জাভেদ আখতারের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। তাঁদের বিয়ের পরে এই দম্পতির থাকার জন্য একটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন কামরান খান। অথচ তাঁর পরিবারই এক সময় অভাবের জেরে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।

ফারহা-র জীবনের গতি পাল্টে যায় কলেজে পৌঁছে। তিনি সোশ্যিয়োলজি নিয়ে পড়তেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কিন্তু নির্দিষ্ট উপস্থিতি না থাকায় কলেজ থেকে নাম বাদ যায় তাঁর। পরে তিনি স্নাতক হন করেসপন্ডেন্স কোর্সে। পড়াশোনাকে ছাপিয়ে অবশ্য তখন ফারহা-র মন দখল করেছে নাচ। সে সময় মুক্তি পেয়েছিল মাইকেল জ্যাকসনের ‘থ্রিলার’। এই ভিডিয়ো দেখার পর ফারহা ঠিক করে নেন তাঁর কেরিয়ার হবে নাচ ঘিরেই।

কোনও দিন প্রথাগত নাচের প্রশিক্ষণ নেননি তিনি। সহজাত ক্ষমতায় ভিডিয়ো দেখে নাচের ভঙ্গি অবিকল তুলে নিতেন। কিছু দিন পরে একটি নাচের দল শুরু করলেন তিনি। হিন্দি ছবিতে কোরিয়োগ্রাফির সুযোগ এসেছিল কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই। মতান্তরের জেরে সরোজ খান বেরিয়ে যান ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’-এর ইউনিট ছেড়ে। সেই সুযোগ পৌঁছয় ফারহা খানের কাছে।

প্রথম সুযোগকেই কাজে লাগান ফারহা। তাঁর কাজ নজর কাড়ে পরিচালক প্রযোজকদের। ‘কভি হাঁ কভি না’-র সেটে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় শাহরুখ খানের। ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা মজবুত করতে ফারহাকে সাহায্য করেছিলেন শাহরুখ। ‘১৯৪২ এ লভ স্টোরি’, ‘ওহ ডার্লিং! ইয়ে হ্যায় ইন্ডিয়া’, ‘টক্কর’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’, ‘রাম শাস্ত্র’, ‘ভিরাসত’, বর্ডার’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘ডুপ্লিকেট’, ‘দিল সে’, ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়, ‘ঝুট বোলে কাউয়া কাটে’, ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’, ‘পুকার’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘মনসুন ওয়েডিং’, ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘কোই মিল গ্যয়া’, ‘কাল হো না হো’, ‘চলতে চলতে’, ‘ম্যাঁয় হুঁ না’-সহ একের পর এক ছবিতে নিজের সেরাটুকু উজাড় করে দেন ফারহা।

আশির দশকের শেষ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের দশক পেরিয়েও চলতে থাকে তাঁর জয়যাত্রা। ‘পহেলি’, ‘কভি আলবিদা না কহেনা’, ‘হে বেবি’, ‘ওম শান্তি ওম’, ‘ওয়েলকাম’, ‘দোস্তানা’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘দবাং’, ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘দিলওয়ালে’, ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার টু’- চলতেই থাকে ফারহা-জাদু।

ছোট পর্দাতেও সঞ্চালক হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শাকিরার মতো আন্তর্জাতিক তারকাও। পাশাপাশি প্রযোজনা ও পরিচালনাতেও ফারহা উল্লেখযোগ্য নাম বলিউডের। তাঁর হাত ধরেই ‘ওম শান্তি ওম’ ছবি দিয়ে বলিউডে পা রাখেন দীপিকা পাড়ুকোন।

পরিচালক হিসেবে ফারাহ-র প্রথম ছবি ‘ম্যায়ঁ হুঁ না’-র সম্পাদক ছিলেন শিরীষ কুন্দ্রা। তাঁকে ফারহা বিয়ে করেন ২০০৪-এ। চার বছর পরে একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দেন ফারহা। যে শাহরুখের জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি পেতে অসুবিধে হয়নি ফারহার, তাঁর সঙ্গেও এক বার তিক্ততা চরমে উঠেছিল। ফারহার স্বামী শিরীষ কুন্দ্রা প্রকাশ্যে শাহরুখের ছবি ‘রা ওয়ান’-এর সমালোচনা করেছিলেন। এর পর বলিউডের এক পার্টিতে প্রকাশ্যে তাঁরা জড়িয়ে পড়েন বাকবিতণ্ডায়।

শোনা যায়, সবার সামনে শিরীষের গায়ে হাতও তুলেছিলেন শাহরুখ। পরে অবশ্য শাহরুখ আর ফারহা নিজেদের মধ্যে সব বিবাদ মিটিয়ে নেন। তিক্ততা ভুলে দু’জনে একসঙ্গে কাজও করেন। বিতর্ক আরও অনেক বার সঙ্গী হয়েছে ফারহার। সরোজ খানের সঙ্গে কেরিয়ারের প্রথম থেকেই ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে তাঁর। সরোজের ছেড়ে যাওয়া ছবি ‘জো জিতা ওহি সিকন্দর’ ছবি থেকে বলিউডে যাত্রা শুরু তাঁর। ফলে দু’জনের মধ্যে রেষারেষি প্রথম থেকেই ছিল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে যায়। সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে ফারহার ফিল্ম ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এর সঙ্গে। অনেকেই বলেন, ওই ফিল্মের একটি চরিত্রের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে সরোজ খানের। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-এ কিকু সারদার চরিত্রটি সরোজ খানকে নিয়ে বরাবরই ব্যঙ্গ করে গিয়েছে। এমনটাই নাকি অভিযোগ সরোজের। তবে সে বারও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ফারহা।

এক বার তো সরোজ খান বলেই ফেলেছিলেন, তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ফারহার। এমনকি তিনি এ-ও বলেন, ফারহার লজ্জা হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন ছিল, নিজের ফিল্মে তাঁকে নিয়ে কেন ব্যঙ্গ করলেন ফারহা? সরোজের সব অভিযোগ উড়িয়ে ফারহার বক্তব্য ছিল, সরোজ খানকে তিনি খুব ভালবাসেন।

এমনিতেও কটুভাষী হিসেবে বদনাম আছে ফারহার। তিনি নাকি মেজাজ হারিয়ে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। একাধিক বার তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। খ্যাতি ও পরিচিতির শীর্ষে উঠেও অতীতকে ভুলতে পারেন না ফারহা। তিনি সঞ্চয় করতে ভালবাসেন। স্বীকারও করেন নিজের সঞ্চয়ী পরিচয়।

ফারহান আখতার এবং জোয়া আখতার দু’জনেই ফারহার মাসতুতো ভাই বোন। তাঁর নিজের ভাই সাজিদ খান পরিচালক ও চরিত্রাভিনেতা। তবে স্বীকৃতি ও পরিচিতির মাপকাঠিতে দিদির তুলনায় বেশ পিছিয়েই আছেন তিনি।

ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :