ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র কবিতা: নিচিনপুরের রাজকুমার

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া
| আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২০, ১৯:৪৮ | প্রকাশিত : ৩১ জুলাই ২০২০, ১৯:৪৬

সেই বালকবেলায় নিত্যকার গোসলের পরই

তিন পুরুষের ঐতিহ্যধারী হাতির দাঁতের চিরুনিটা দিয়ে মা

এমন যত্নে আমার আলপেট আঁচড়ে দিতেন

যেন আজ আমার রাজ্যাভিষেক।

.

আমার তেলতেলে মাথাটা একহাত দিয়ে বুকের উপর ঠেসে ধরে

আরেক হাতে মাথা আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলতেন,

কপালের উপরে চুল পইড়া থাকলে মনা পাগলার মতন লাগে।

আমি মা’র হাতের আগল থেকে আচমকা মাথাটা সরিয়ে নিয়ে

এক হাঁটু ভেঙে কেস্কি লাফ দিয়ে বলতাম,

আমিও মনা পাগলা, মনা পাগলা,

কী মজা! কী মজা!

.

এমন অলক্ষুণে কথায় মা’র চেহারাটা তক্ষুনি মলিন হয়ে যেতো

আষাঢ়ের কালো মেঘে ঢেকে যেতো মায়ের উজ্জ্বল বদন।

আমার বুকের পাশে আলতো করে একটা আদুরে চাটি মেরে মা বলতেন,

থুর ! তুই ক্যান মনা পাগলা হতে যাবি!

তুই হলি গিয়ে আমার রাজপুত্তুর,

সাত রাজার ধন,

রাজার দুলাল,

নিচিনপুরের রাজকুমার

.

আমি আরো আদিখ্যেতা করে বলতাম,

না, না। আমি রাজকুমার হবো না।

আমি হবো শম্ভু আইসক্রিমঅলা।

আইসক্রিমের ইয়া বড় বাক্সটা কাঁধে ঝুলিয়ে

হাতঘন্টি বাজিয়ে পথে পথে হেঁকে বেড়াবো,

‘এই আইসক্রিম, আইসক্রিম, ঠান্ডা আইসক্রিম।’

মা বলতেন, ধুর বুদ্ধু ! ঠান্ডা আইসক্রিম কীরে? আইসক্রিম আবার গরমও অয় নাকি ?

.

পরে মা-হীন দুনিয়াতে এই রাজকুমারের কী অন্তহীন নিগ্রহ!

পঙ্খিরাজ ঘোড়া, সাত মহলার মুকুট, সপ্ত ডিঙ্গির বহর,আবীর গুলাল, হীরকখচিত তলোয়ার,রূপালি ধনুক, অব্যর্থ ভ্রম্মাস্ত্র

মর্মের আবেগে লালিত ওসবই একে একে খোয়া গ্যাছে রাক্ষুসে বাস্তবতার পেটে।

রাজদরবারে রাজ্যাভিষেকের বদলে

‘কার্যাভিষেক’ হয়েছে ঘানিঘরে

যে সাম্রাজ্যের রাজসিংহাসনে আরোহণ করেছে তোমার রাকুমার!

মা, তোমার রাজপুত্তুর এখন মুকুটহীন সম্রাট।

যে রাজ্যে তোমার দুলালই রাজন

রাজন্য দরবারি দারোয়ান

সেরেস্তাদার হাকিম হেকিম গাড়োয়ান

মশালদার বেহারা সূত্রধর বাহক

চাপরাশি উজির নাজির নফর পাচক

পাইক পেয়াদা লস্কর সিপাহি কথক খাজাঞ্চিদার পাঙ্খাপুলার বরকন্দাজ রাজসভাষদ অশ্বরোহী তীরন্দাজ,

একাই সব।

.

তার সঙ্গি যদি কেউ থেকে থাকে,

ও কেবল তারই ছায়া;

অথচ একদিন তুমিই ছিলে তার ছায়া

প্রশান্ত প্রসন্ন মমতার ।

.

এতো দৈত্যাকার দায়ভার,

এত্তোটুকুন কাঁধে ক্যামন করে

কুঁজো হয়ে বয়ে নেয় তোর এক রত্তি ছাওয়াল;

হায় রে মায়ের দুলাল !

এখন সাজলি তুই গেঁয়ো গাড়োয়াল;

নাই তোর পঙ্খিরাজ, তলোয়ার ঢাল

নাই তোর তীর ধনুক,আবীর গুলাল।

নিজের গাঁটেতে নেই এক কানাকড়ি;

মাথার উপরে ঘোরে মহাজনি ছড়ি।

জগত নিলো না জীবন যাপনের ভার,

জীবনকে গিলে খেলো রাজ্যের উধার।

মাঠে মাঠে ঘাস কেটে পরের ঘোড়ার

রাজার মতনই জীবন করে দিলি পার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :