প্রস্রাব চেপে রাখার ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণ

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৪৯ | প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০২০, ১৪:২৮

প্রোস্টেট গ্রন্থি‌ পুরুষ দেহের একটি অংশ যা পুরুষের প্রজননতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। কেবল পুরুষদেরই প্রস্টেট গ্রন্থি রয়েছে। এটাকে সচরাচর শুধু প্রোস্টেট হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর আকার অনেকটা কাজুবাদামের সমান। মূত্রথলির তলদেশে থেকে যেখানে মুত্রনালীর শুরু সেখানটার চারপাশ জুড়ে এই গ্রন্থিটির অবস্থান। এর মধ্য দিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের অন্যতম উপাদান একটি তরল আঠালো পদার্থ সৃষ্টি করা। শুক্রাণু এবং এই তরলের মিশ্রণই বীর্য।

সাধারণত পঞ্চাশ পেরোনো পুরুষদের শরীরে হরমোনাল ভারসাম্যের সমস্যার জন্য প্রস্টেট গ্ল্যান্ড আকারে বড় হয়ে যায়। এর নাম বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেশিয়া বা বিপিএইচ। কারও ক্ষেত্রে এতই বড় হয়ে যায় যে, প্রস্রাবথলি থেকে প্রস্রাব নির্গমনের রাস্তার উপরে চাপ পড়ে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। প্রস্রাব চেপে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।

প্রস্রাবের গতি কমে যেতে পারে। প্রস্রাব করার পরেও মূত্রথলি পুরো খালি না হয়ে প্রস্রাব জমে থাকে। সেখান থেকে মূত্রথলিতে পাথরও তৈরি হতে পারে। কিডনির উপরে চাপ পড়ে কিডনি ফুলে যেতে পারে। কিডনি ফেলিয়োরও হতে পারে। প্রস্রাবে সংক্রমণের ফলে রক্তও পড়তে পারে। তবে শুধু যে পঞ্চাশ পেরোলেই প্রস্টেটের অসুখ হয়, তা কিন্তু নয়।

কম বয়সেও প্রস্টেটের ইনফেকশন হতে পারে, যাকে ডাক্তারি ভাষায় প্রস্টেটাইটিস বলে। এর ফলে প্রস্রাবে জ্বালা, রক্তক্ষরণ, পুঁজনিঃসরণ, জ্বর এই সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যৌন সংক্রমণ বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড রোগের ক্ষেত্রেও এমন দেখা যায়।

তবে শুধু সংক্রমণ বা আকারে বড় হয়ে যাওয়াই নয়, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের অসুখের একটি তৃতীয় ধরনও আছে। তা হল প্রস্টেট ক্যানসার।

চিকিৎসকের মতে, একজন পুরুষ মানুষের শরীরে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত যত ধরনের ক্যানসার হতে পারে, তার মধ্যে বিশ্বের পরিসংখ্যান বলছে, প্রস্টেট ক্যানসারের হার সবচেয়ে বেশি। কিছুদিন আগে পর্যন্তও এ বিষয়ে মানুষের সচেতনতার যথেষ্ট অভাব ছিল। ফলে ধরা পড়তে অনেকটাই দেরি হয়ে যেত। তখন আর কিছু করার থাকত না।

বর্তমানে কিছু উপায় আছে যাতে গোড়ার স্টেজে প্রস্টেট ক্যানসার ধরে ফেলা যায়। ইউরোলজিস্টরা কিছু ম্যানুয়াল পরীক্ষা, যেমন ডিজিটাল রেক্টাল এগজ়ামিনেশন বা ডিআরই, তার পর প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন বা পিএসএ নামক রক্তপরীক্ষা দ্বারা আন্দাজ করতে পারেন প্রস্টেট ক্যানসারের আশঙ্কা আছে কি না। এই দুটো টেস্ট এবং বায়োপসি করে যদি এমন আর্লি স্টেজে ক্যানসার ডিটেক্ট করা যায়, যখন ক্যানসার প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের ভিতরেই আটকে আছে, বাইরে ছড়াতে পারেনি, তখন অপারেশন কিংবা রেডিয়েশন বা এ রকম একাধিক উপায়ে সম্পূর্ণ রোগ নিরাময় করা সম্ভব। কাজেই মানুষকে সচেতন হতে হবে।

প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের কোনও সমস্যা বা অসুবিধে টের না পেলেও একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর নিয়মিত চেকআপ করানো জরুরি। সাধারণত এই বয়সটি ৫০। কিন্তু বিদেশে অনেক ক্ষেত্রে, রক্তের সম্পর্কে কারও যদি প্রস্টেট ক্যানসার হয়, তবে ৪৫ বছর বয়স থেকেই প্রস্টেট ক্যানসারের স্ক্রিনিং টেস্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডায়াবেটিস, একাধিক পার্টনারের সঙ্গে যৌন সংসর্গ, বিভিন্ন নেশা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ফলে প্রস্টেটের ইনফেকশন হতে পারে। কিন্তু বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লেশিয়ার ক্ষেত্রে সে রকম রিস্ক ফ্যাক্টর কিছু নেই। এটা সকলেরই হয়, কারও বেশি, কারও কম। আজ থেকে তিন-চার দশক আগেও বিপিএইচ-এর ক্ষেত্রে সে রকম ভাল ওষুধপত্র ছিল না। মানুষ তখন খুব কষ্ট পেতেন, অপারেশনের দ্বারা আরোগ্য হত। কিন্তু এখন অনেক ভাল ওষুধপত্র বেরিয়েছে। দেখা যায়, শতকরা ৭৫-৮০ জনই ওষুধ খেয়ে ভাল থাকেন। বাকি যাদের ক্ষেত্রে অন্য কোনও জটিলতা থাকে, ফলে ওষুধে ফল পাওয়া সম্ভব হয় না, তাদের ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসকের মতে, একেবারে প্রাথমিক স্টেজে প্রস্টেট ক্যানসারের কিন্তু কোনও লক্ষণ প্রকাশ পায় না। আবার পরবর্তী স্টেজে প্রস্টেট ক্যানসারের অনেক লক্ষণ কিন্তু বিপিএইচ-এর মতোই। যেমন, প্রস্রাবের বেগ সামলাতে না পারা, বারবার প্রস্রাব, রাতেও তিন-চারবার উঠে প্রস্রাব করতে যাওয়া ইত্যাদি।

এগুলোকে বলে স্টোরেজ বা ইরিটেটিভ সিম্পটম। আবার অন্য আর-এক ধরনের লক্ষণ হল অবস্ট্রাকটিভ সিম্পটম। এতে প্রস্রাবের গতি কমে যায়, ধারা স্বাভাবিকের চেয়ে সরু হয়ে যায়। এক-এক বারে পুরো প্রস্রাব করাও সম্ভব হয় না, জমা থেকে যায়। বারবার সংক্রমণ হওয়া, প্রস্রাবে জ্বালা কিংবা রক্তক্ষরণ এ সবও হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, টমেটোর লাইকোপিন প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি রোধ করে। কিংবা ঢেঁড়শ সিদ্ধ করে পানি খেলে প্রস্রাবের গতি স্বাভাবিক থাকে। এই বিষয়গুলো সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণিত নয়। স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, নেশা না করা, যথেষ্ট পানি খেতে হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি নির্দিষ্ট বয়স থেকে নিয়মিত ব্যবধানে পুরুষদের জন্য প্রস্টেট চেকআপও জরুরি। সাবধানে থাকাই সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত।

প্রোস্টেট গ্রন্থি খুব বেশি বড় হয়ে গেলে ওপেন সার্জারির মাধ্যমে চিকিত্সা করতে হবে। অর্থাত্ এ ক্ষেত্রে পেট কেটে অপারেশন করতে হবে। বর্তমানে লেজার সার্জারির মাধ্যমেও প্রোস্টেটের চিকিত্সা করা হচ্ছে এবং তার ফলাফলও সন্তোষজনক। নতুন আরেকটি পদ্ধতি বেরিয়েছে যার নাম

‘ভ্যাপোরাইজেশন।’ বিপিএইচের রোগীদের প্রস্রাব করার সময় এত কষ্ট পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক ধরনের চিকিত্সা রয়েছে। কোন রোগীর জন্য কোন চিকিত্সা প্রযোজ্য হবে সেটা আপনার চিকিত্সকই নির্ধারণ করে দেবেন।

(ঢাকাটাইমস/০৫ অক্টোবর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

দেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা, ঢাকা কতটা ঝুঁকিতে?

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস: জানুন মশাবাহিত এ রোগ প্রতিরোধের উপায়

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :