রাজদণ্ড

নেয়ামত ভূঁইয়া
 | প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর ২০২০, ২১:৪০

বনের মহারাজা সিংহ মহাশয় রাজকীয় ভঙ্গিতে

স্বর্ণালি কেশর দুলিয়ে মহাতর্জন গর্জনে জঙ্গল কাঁপিয়ে

সদর্পে জানান দেয় তার রাজসিক উপস্থিতি;

এই যে আমি এখানে; বনপতি রাজাধিরাজ মহামহিম সিংহ বাহাদুর।

শার্দূলকুলপতি, ডোরাকাটা চামড়ায় তেলতেলে চমক ফুটিয়ে

জমিনে দশ ঘায়ের আঁচড় কেটে চক্রব্যূহ রচনা করে

হুংকারের হুমকিতে তার হুকুমতে জারি করে হুকুমের হুশিয়ারি।

গ্রীবা শূন্যে উঁচিয়ে আকাশ ছুঁইছুঁই মগডালের গাছের পাতায়

অহমবোধের শিহরণ জাগিয়ে জিরাফ জানান দেয়

তার উচ্চতার শীর্ষেন্দু।

মানকচুর পাতার মতো কুলোকর্ণ দুটো দোলাতে দোলাতে

বিশাল বপুধর হস্তি শিঙার মতো শুঁড় তুলে যথাসাধ্য জোরগলায় জানান দেয়; মহা-বপুপতি গজেন্দ্র আমি এখানটায়।

চতুর শেয়াল, চিকা-চামচিকে, সারমেয়-মার্জার-মূষিক-টিকটিকি

কেউই কম যায় না জাংগলিক শক্তি প্রদর্শন প্রতিযোগিতায়।

সকলেরই আছে তরিকামতে অহমবোধের ভঙ্গি

মুরুদের মহিমা, দর্পের ডঙ্কা

‘আমি কী হনু রে’ মেজাজি আস্ফালন।

আর মানুষ ? হ্যাঁ, মানুষের আছে

এক উগ্র উদগ্র উদ্ধত উত্থিত দুর্বিনীত পরাক্রমী উত্তেজিত

দণ্ডায়মান অপ্রতিরোধ্য দণ্ডমূলের হোতা

দৈব শক্তিধর অব্যর্থ দুর্দান্তে দণ্ড।

না, অস্থিহীন অতৃপ্ত বংশদণ্ড নয় মোটেও;

ওটাতো কেবলি নরের নারদ নলিচা

রতিকান্তের নিম্নাঙ্গের নবাবি।

নরনারী নির্বিশেষ যে দণ্ড উচ্চাঙ্গের,

খেলায় মেতে থাকে চতুর চতুরঙ্গের।

যে দণ্ডের অগ্নিগিরি উদগিরন করে লোভের লাভা,

শার্দূল বাড়িয়ে দেয় নির্মম ছিনতাইর থাবা।

নাশ করে ইলিশের পেটে পোষা সম্ভাবনার ডিম,

যে যষ্টির ছায়া ভাসলেই দেহের উষ্ণ-স্রোত হয়ে আসে হিম।

সে দণ্ডের পাষাণ পর্বত প্রসব করে পেষণের পাথর ।

দণ্ডের শংকায় প্রেমের পুলক বাঁধে নির্বাসনে ঘর।

দর্জির দক্ষতা ছাড়াই তৈরি হয় সে দণ্ডের বিকৃত ভূষণ,

প্রেমিকের চিতার কাঠে গড়া হয় ময়ূর সিংহাসন।

অহমবোধের ঝাণ্ডা ওড়ায় অশণি সংকেত,

সে দণ্ডের বর্গীরা পঙ্গপালের মত ছত্রখান করে দেয় ফসলের ক্ষেত।

কূটিল কামান দাগে প্রাণবধের উদ্ধত সঙ্গিন,

সাদা-কালো জগতের সব কিছু যার কাছে নিত্যই রঙিন।

বিরোধের গলা টিপে শ্বাস রোধ করে ওর অদৃশ্য আসুরিক হাত,

ঘাতক তীরন্দাজেকে দেয় তোপদাগা শুভ সওগাত।

উন্নত শিরকে বাধ্য করে অনুগত দাস্যের কুর্ণিশে,

মড়কের জীবাণু ছড়ায় স্বপ্নের সোনালি শীষে।

অমৃতের মোড়কে নিপুণ চাতুর্যে জহর গিলায়,

ফন্দির ফরমানের ফাঁদে প্রজার আর্তি শূন্যে মিলায়।

পীড়নের কল বসায় দানবের একান্ত দোসর,

হাহাকার আহাজারি বিলাপ মাতমে

একাকার করে সাজায় আনন্দ আসর।

শুভবোধ নিপাতে নামায় গর্হিত গজব কিলবিলে নরকের কীট,

শকুনের রক্তাক্ত নখরে ছিন্নভিন্ন গ্রন্থ, জ্ঞানবৃক্ষ, বিদ্যাপীঠ।

যে প্রমত্ত প্রতাপ-যষ্টি অবিনশ্বর অজেয়

প্রচণ্ড নিনাদে নরক রচনায় দোর্দণ্ড

ব্রহ্মাস্ত্রের মধ্যযুগীয় সংস্করণ দুর্দম ‘রাজদণ্ড’।

সংবাদটি শেয়ার করুন

ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :