মারুফ কামালকে হঠাৎ কেন অব্যাহতি?

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ এপ্রিল ২০২১, ২০:৫৩| আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৩:০২
অ- অ+

অনেক দিন ধরেই রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে আছেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। করোনায় আক্রান্ত হয়ে দলের অনেক শীর্ষ নেতা হাসপাতালে। আর করোনার কারণে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রমও পুরোপুরি স্থগিত। এরমধ্যেই হঠাৎ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি।

সোমবার অব্যাহতির বিষয়টি জানিয়ে বিএনপির দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে।

প্রায় এক যুগ ধরে খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব দায়িত্বে থাকা সাংবাদিক মারুফ কামালকে হঠাৎ কেন অব্যাহতি দেয়া হলো তা নিয়ে দলের ভেতরে ও বাহিরে চলছে নানা আলোচনা।

যদিও বিএনপির একাধিক সূত্র বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আগে থেকেই অনেকটা নিষ্ক্রিয় মারুফ কামাল খান। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নিজ দপ্তরেও আসতেন না। মাঝেমধ্যে পারিবারিক ঝামেলার কারণে মামলার মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাকে। এছাড়াও দলের শীর্ষ নেতাদের একটি পক্ষ তার ওপর নাখোশ ছিলেন।

এছাড়া করোনার কারণে যখন সবকিছু স্থবির তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে পড়েন মারুফ কামাল খান। সম্প্রতি বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। ব্যানারে বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার ছবি না রাখার সমালোচনা করে দেয়া পোস্টে বিএনপির অনেকে নেতাকর্মীও দলের সমালোচনা করেছেন।

এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় সিদ্ধান্ত ও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন একটি পোস্ট দেন মারুফ কামাল। তার এসব বক্তব্যে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। ফলে তাকে নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছিল বিএনপিতে। এজন্য স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শনিবার সবশেষ স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়্যাল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

২০০৯ সাল থেকে মারুফ কামাল খান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিবের দায়িত্বেও ছিলেন।

এদিকে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে মারুফ কামাল খানের পোস্টের সমালোচনা করে কয়েকদিন আগে পাল্টা ফেসবুক পোস্ট দেন প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্বে থাকা মুশফিকুল ফজল আনসারী।

বিদেশে অবস্থানরত মুশফিকুল ফজল আনসারী তার পোস্টে মারুফ কামাল খান সোহেলের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, ‘হিপোক্রেসি বাদ দেন। আর যাই হোক আপনার মুখে অন্তত: ‘নসিহত’ মানায় না। এক এগারো পরবর্তী নির্বাচন, মনোনয়ন, গুলশান অফিসের কর্তৃত্ব, ভারত সফরে ম্যাডামকে নিয়ে যাওয়া আবার প্রণব মুখার্জি এলে সময় দিয়ে দেখা না করা, সফরের সময় স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য তরিকুল ইসলামকে উপেক্ষা, শেখ হাসিনার সাথে ফোনালাপ, লন্ডনের নাম করে কমিটি চালিয়ে দেয়া, ২৯ ডিসেম্বর সারা দেশের আন্দোলন বন্ধ করে ঢাকায় এনে মানুষকে ঘরে তোলা, অমিত সাহার ফোনালাপ এসব প্রসঙ্গে আর মুখ খুলতে চাইনা। তাঁর প্রতি আমার মোটেই কোনো বিদ্বেষ নেই। শুধু হিপোক্রেসিটা মেনে নিতে পারছিনা। মানা যায় না।

অবশ্য মুশফিকুল ফজলের এই পোস্টেরও কেউ সমালোচনা করেছেন। কেউ আবার মারুফ কামাল খান সোহেলের পক্ষে মন্তব্য করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দল যা ভালো মনে করেছে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা নিয়ে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। কেউ তো আজীবনের জন্য এক পদে থাকবেন এটা তো হয় না। নিশ্চয়ই নতুন কেউ দায়িত্ব নেবেন।’

এদিকে মারুফ কামাল খান সোহেলের অব্যাহতিপত্রের চিঠি গুলশান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের দায়িত্ব পাওয়া এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, মারুফ কামাল খানকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি দলের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। আমি আদিষ্ট হয়ে অব্যাহতিপত্রটি গুলশান অফিসে পাঠিয়েছি।

চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে মারুফ কামাল খান সোহেল জানান তিনি এখানো চিঠি হাতে পাননি। অবশ্য ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি নিউজ শেয়ার দিয়ে ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘অব্যাহতি।’

পোস্টের নিচে বিএনপি নেতা সরোয়ার হোসেন লিখেছেন, ‘সত্য কথা বললেই অব্যাহতি। কেমন একটা অথর্ব দলে পরিণত হয়েছে বর্তমান বিএনপি। কোন ব্যাপারেই নেই কোন আলোচনা, সমালোচনা পর্যালোচনা। আছে শুধু চাটুকারিতা। এ অব্যাহতি আপনার ব্যক্তি ইমেজ ক্ষুণ্ন হবে না বরং বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি। বিএনপি ঘুরে দাড়াতে পারছেনা কেন, তা নিয়ে আরও লিখুন।’

জবাবে মারুফ কামাল লিখেছেন, ‘সময়ের দাবিতে আরও যোগ্য, মেধাবী, কর্মঠ, গতিশীল ও উপযুক্ত লোককে দায়িত্বে আনতে জায়গা খালি করতেই হয়।’

(ঢাকাটাইমস/০৫এপ্রিল/বিইউ/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সাজা মওকুফে আরও ২৯ বন্দির মুক্তি: ২০২৫ সালে মোট মুক্ত ১০৭ জন
আবু সাঈদ হত্যা ও ছয় মরদেহ পোড়ানোর মামলার আসামিরা ট্রাইব্যুনালে হাজির
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পাঠকের উদ্দেশ্যে লেখকের বার্তা
কাশিয়ানীতে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা