কিশোরীকে বশ করতে তাবিজ নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ২১:১১

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে একটি তাবিজকে কেন্দ্র করে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার শুরু উপজেলার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরীর ভালোবাসা পেতে তাকে তাবিজ দিয়ে বশিকরণ নিয়ে। অভিযোগ ওঠেছে, এক কিশোর ওই কিশোরীকে তাবিজ করে বশে আনতে স্থানীয় ইমামের কাছে যায়। একপর্যায়ে কিশোরী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ঘটনা সবার সামনে আসে।

পরে এই তাবিজ নিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। চলে মারধরের ঘটনা। মীমাংসার জন্য স্থানীয়ভাবে দফায় দফায় বসে বিচার-শালিশের বৈঠক। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া হয় নানা ভিডিও বার্তা। এ বিষয়টিকে ধর্মীয় ইস্যুতে নিয়ে গিয়ে এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। শেষ পর্যন্ত গেলো রাত শনিবার এ নিয়ে থানা পুলিশে পৃথক দুটি অভিযোগ দেয়া হয়।

রবিবার দুপুরে এ খবর লেখার সময় নালিতাবাড়ী থানার ওসি বাছির আহমেদ বাদল বলেন, তিনি এ ঘটনা তদন্ত করতে ওই কিশোরীর বাড়িতে অবস্থান করছেন। এছাড়া সম্পূর্ণ ঘটনা তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত চার মাস আগে উপজেলার বুরুঙ্গা গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কিশোরী কন্যাকে প্রেমের জালে আটকাতে তাবিজ দিয়ে বশিকরণ করতে পাশের আন্ধারুপাড়া গ্রামের শান্তির মোড় মসজিদের ইমাম সাইফুল ইসলামের সাথে ৫০০ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় ওই কিশোরীর ফুপাতো ভাই জামাল। ওই কিশোরী স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এক পর্যায়ে কিশোরী বশিভূত হওয়ার পরিবর্তে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। নানা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে স্বজনরা তাকে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। শেষে গ্রাম্য এক কবিরাজের শরণাপন্ন হলে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় ওই কিশোরীর অভিভাবক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ মিয়ার কাছে নালিশ করলে আজাদ মিয়া স্থানীয় ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম, মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার বাছির উদ্দিনসহ কয়েকজনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেন।

পরে শনিবার দুপুরে বারোমারী বাজারে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এ নিয়ে গ্রাম্য শালিশ বসে। শালিশে কিশোর জামাল তাবিজের কথা স্বীকার করার একপর্যায়ে মসজিদের ইমাম সাইফুল ইসলামও বিষয়টি স্বীকার করেন। পারিবারিক সম্মান রক্ষায় এ নিয়ে আর হৈচৈ না করে পাল্টা তাবিজের মাধ্যমে কিশোরীকে সুস্থ করার অঙ্গীকার করেন ইমাম সাইফুল।

পরে একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা তৈরি করে সাইফুলের বাবা, ইউপি সদস্য, মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ারসহ স্থানীয় লোকজনের জিম্মায় এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয়া হয়।

এর কিছুক্ষণ পর ইমাম সাইফুল ইসলাম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, তাকে গোপন কক্ষে নিয়ে চড়থাপ্পড় মারা হয়েছে। মুহূর্তেই চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বারোমারী বাজারে উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি করে। শালিশে উপস্থিত লোকদের বাড়িঘরে গিয়ে হামলা করে জিম্মি করে রাখে। এসময় আশপাশের বাড়িতে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করেন শালিশকারীরা। আশপাশের ইমাম-আলেমসহ প্রতিপক্ষের লোকজন জড়ো হতে থাকে বারোমারী বাজার ও শান্তির মোড়ে।

এদিকে ওই রাতেই শালিশে উপস্থিত ও হামলার শিকার বাছির উদ্দিন বাদী হয়ে ইমামের সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অন্যদিকে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও শালিশে উপস্থিত চারজনকে অভিযুক্ত করে পাল্টা অভিযোগ দেয়া হয়।

ইমাম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি কোনো তাবিজ করিনি। মিথ্যা অভিযোগ এনে চেয়ারম্যান তাকে গোপন কক্ষে নিয়ে গিয়ে টুটি চেপে ধরেন। তার গালে থাপ্পাড় দিয়েছেন।

তবে কিশোর জামাল জানায়, তার কথামতো ইমাম সাইফুল ৫০০ টাকার বিনিময়ে তাকে বশিকরণের তাবিজ বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাবিজ উল্টো রি-অ্যাকশন করায় ইমাম সাইফুল পুনরায় তাবিজ দিয়ে ঠিক করার কথা দিয়েছেন।

মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার ও শালিশকারী বাছির উদ্দিন জানান, সবার সামনে ইমামের দোষ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। কিন্তু বেরিয়ে গিয়ে পাল্টা অভিযোগ তুলে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং ধর্মীয় ইস্যু বানিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া বলেন, চড়থাপ্পড়ের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ইমাম সাহেব নিজের অপকর্ম আড়াল করতে এখন পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। অথচ অঙ্গীকারনামায় তার দোষের কথা উল্লেখ করে তাকে জিম্মায় নিয়েছে তারই বাবাসহ গণ্যমান্যরা।

অন্যদিকে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চড়থাপ্পড়ের অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও বার্তা ছড়িয়ে দেন ইমাম। ঠিক এর পরপরই শালিশ বৈঠকে ইমামের নিজের মুখের তাবিজ করার স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করেন শালিশে উপস্থিত ব্যক্তিরা।

এ সম্পর্কে উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি হাজী জামাল উদ্দিন বলেন, কোনো ঘটনা হয়ে থাকলে চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। কী হয়েছে সত্য জেনে বিষয়টি বুঝে সবাই বসে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত।

(ঢাকাটাইমস/২৫এপ্রিল/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

হরিণাকুন্ডুতে এসএসসিতে ফেল করায় কিশোরির আত্মহত্যা

পাবনায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলা,, আহত ১০

রাজশাহীর কোন আম কবে বাজারে আসবে

মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

রিভিউয়ের মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসা হবে: সিসিক মেয়র

এসএসসির ফলাফলে গোপালগঞ্জ জেলায় তৃতীয় রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ

নড়াইলে বজ্রপাতে স্কুলছাত্র ও গাভীর মৃত্যু

টানা দ্বিতীয়বার ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন মিরাজুল ইসলাম

সালথায় ১২ কেজি গাঁজাসহ তিন মাদককারবারি গ্রেপ্তার

সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সিরাজদিখান রিপোর্টার্স ইউনিটির মানববন্ধন 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :