বীরাঙ্গনা মায়া রানীকে ঘর দিচ্ছেন ফরিদপুর ডিসি

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২১, ১৭:২০
অ- অ+

বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির পর এবার মাথা গোজার ঠাঁই পেলেন অসহায় বীরাঙ্গনা মায়া রানী সাহা। ফরিদপুর বর্ধিত পৌরসভার শোভারামপুর এলাকার বাসিন্দা নিঃসন্তান এ৭র বছরের বৃদ্ধার বসবাসের কোনো ঘর ছিল না। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছিলেন তিনি। মায়া রানীর দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার তার থাকার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন।

শনিবার দুপুরে মায়া রানী সাহার ঘরের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে মায়া রানীর হাতে ১০ কেজি চাল, পাঁচ কেজি আলু, দুই কেজি তেল, লবণসহ নানা ধরনের খাদ্যসামগ্রী হাতে তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজ বাড়িতে ১৬ বছর বয়সে হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় দোসরদের দ্বারা নির্যাতিত হন মায়া রানী। তবে তার এতদিন স্বীকৃতি কিংবা ভরসার জায়গা ছিল না তার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছিলেন। পরে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির জন্য গণশুনানির সময় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সঙ্গে সাক্ষাত করেন মায়া রানী। এসময় তিনি অশ্রুভারাক্রান্ত কন্ঠে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই বিভীষিকাময় অধ্যায়ের কথা, তার অসহায়ত্বেতার কথা জানান জেলা প্রশাসককে।

তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজাকে মায়া রাণীর বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ জামুকায় প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দেন। পরে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা বীরাঙ্গনা যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত গঠিত বিশেষ কমিটি প্রতিবেদন জামুকা বরাবর প্রেরণ করা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে মায়া রাণীকে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এদিকে, বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও তার ছিলনা কোনো থাকার ঘর। তাই তার জরাজীর্ণ আবাসস্থল সেমি পাকা ভবনে রূপান্তরে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রেজা বলেন, ‘ফরিদপুরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পাঁচজন বীরাঙ্গনা রয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেবে সরকার। মায়া রানীর থাকার জায়গা না থাকায় জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে একটু আগেভাগেই আমরা তাকে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি।’

তিনি আরো জানান, মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সকল গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আবাসস্থল নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন মায়া রানীকে ঘরটি মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে দিচ্ছেন।

এদিকে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়ে খুশি বীরাঙ্গনা মায়া রানী। তিনি জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এমন ভালো মানুষ আর হয় না। তার কারণে আমার নাম তালিকায় উঠেছে। বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছি। এবার ঘর পেলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্না করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। সামনের দিনে আর হয়তো এই কাজ করতে হবে না। জীবনের শেষ বয়সে এই স্বীকৃতি আমাকে অনেক বেশি বাঁচার শক্তি জোগাবে।’

মাসুম রেজা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা রয়েছে, জেলার যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা আবাসস্থলের কষ্টে আছেন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। আমরা সেই নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি।’

এর আগে করোনাকালে জেলার মধুখালীতে দুজন ও ভাঙ্গা উপজেলায় একজন বীরাঙ্গনার অসুবিধার কথা জানতে পেরে তাদের পাশে দাঁড়ান জেলা প্রশাসক। তার নির্দেশে ওই দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বীরাঙ্গনাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন ও ভাঙ্গা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজীব আহমেদসহ কর্মকর্তারা বীরাঙ্গনা দেবী আরতি রানী ঘোষের গ্রামের বাড়ি চান্দ্রা ইউনিয়নের মালিগ্রামে যান। এসময় তার হাতে উপহার ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন ইউএনও।

এদিকে মধুখালীতেও করোনাকালে বীরাঙ্গনা আম্বিয়া বেগম ও ফুলজান বেগমের দুরাবস্থার কথা জানতে পারেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। তাদেরও সহায়তা দেন তিনি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তফা মনোয়ার তাদের হাতে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন।

প্রত্যেকের হাতে এক বস্তা চাল, পাঁচ কেজি আলু, তেল, চিনি, সেমাই, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, লবন, মালটা, তরমুজ, কলা, বাঙ্গী ও একটি করে শাড়ি তুলে দেওয়া হয়।

এছাড়াও, ১৯৭১ সালের ৭ মে জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের বালাডাঙ্গীসহ কয়েকটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে নির্মম অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অবর্নণীয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার হন চারুবালা বিশ্বাস। হানাদার বাহিনী চারুবালার স্বামী ও দুই মাসের কোলের সন্তানকে হত্যা করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়।

বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার তাৎক্ষণিক চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন গিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেন। পরে প্রতিবেদন পেয়ে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদিসহ চারুবালা বিশ্বাসকে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

ডিসি বলেন, ‘মায়া রানীকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি প্রদানে সহায়তা করা হয়েছে। বসবাসের কোন ঘর না থাকায় তার জন্য একটি ঘরও নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘করোনাকালে জেলার আরো তিন বীরাঙ্গনা অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছিলেন এমন খবর পেয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে খাদ্যসামগ্রী। জেলা প্রশাসন সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, ভবিষ্যতেও পাশে থাকবে।’

(ঢাকাটাইমস/৮মে/পিএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
"হাতে হারিকেন ধরিয়ে জাহান্নামে পাঠানো হবে!" — চাঁদাবাজি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার হুঁশিয়ারি
মিডফোর্ডের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিএনপিকে দায় চাপানো অপরাজনীতি: সালাহউদ্দিন
মিডফোর্টে পাথর মেরে হত্যা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে: জামায়াত
মিটফোর্ড হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি বিএনপি মহাসচিবের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা