হযরত খানজাহান মাজারে কুমিরের অসুস্থতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ জুলাই ২০২১, ১৮:০৫

বাগেরহাটের ঐতিহাসিক হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারের দীঘির মিষ্টি পানির একটি পুরুষ কুমির অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মাজারের দায়িত্ব থাকা খাদেমদের নির্যাতনে কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। কুমিরটি যে মানুষের আঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তা নিশ্চিত করেছে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। প্রাণিসম্পদ ও বনবিভাগ অসুস্থ কুমিরটিকে দীঘি থেকে তুলে চিকিৎসা দেয়া শুরু করেছে।

হযরত খানজাহানের আমলে ছাড়া সব শেষ বংশধর ছিল ‘ধলাপাহাড়’ নামে একটি কুমির। ২০১৩ সালে বয়সজনিত কারণে ধলাপাহাড়ের মৃত্যু হয়। মিঠা পানির কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে প্রায় সাড়ে ৬০০ বছরের পুরানো হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারের দীঘির মিঠা পানি প্রজাতির কুমিরের বংশ রক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর ২০০৪ সালে ভারতের মাদ্রাজের ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে মোট পাঁচটি কুমির এনে এই দীঘিতে ছাড়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে একটি মহিলা ও একটি পুরুষ কুমির রয়েছে।

মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির অভিযোগ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, দেশ-বিদেশের খানজাহানের (অলি) যারা ভক্ত আছেন তারা এই মাজারের কুমির দেখতে আসেন। কুমিরের উপর যারা আঘাত করেন, তারা আমার বুকে আঘাত করছেন। একটি পক্ষ কুমির একপাড়ে আটকে রেখে দর্শনার্থীদের দেখিয়ে ক্ষতি করছে।

তিনি বলেন, দীঘিতে কুমির থাকবে উন্মুক্ত পরিবেশে। দীঘিতে ঘুরে বেড়াবে তারা। খাদেমরা নাম ধরে ডাক দিলে ঘাটে আসবে। মুরগি ও খাসির মাংস খাবে।

প্রতিপক্ষের নাম উল্লেখ না করে খাদেম আরও বলেন, এই দীঘির কুমির যেন আটকে না রাখে, কুমির দেখাবে মাজারের খাদেমরা। বাইরের কেউ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দর্শনার্থীদের কুমির দেখাবে তা খাদেমরা মেনে নেবে না। এই কুমির যারা আটকে রাখে এবং কুমিরের উপর যারা আঘাত করে প্রশাসনের কাছে আমি তাদের বিচার দাবি করছি।

প্রতিপক্ষ বিনা বেগম অভিযোগ অস্বীকার করে খাদেমদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই খাজা খানজাহানের দীঘিতে প্রভাবশালী খাদেমরা অবৈধভাবে জাল পেতে মাছ শিকার করেন। কোনো ঘাটে কুমির আটকে রেখে কেউ কোনো টাকা কামাই করে না। বরং মাজারের খাদেমরা এখানে আসা দর্শনার্থীদের কুমির দেখিয়ে দর্শনার্থীদের মানত করা মুরগি কুমিরকে খেতে না দিয়ে তা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’

‘দীঘির সব এলাকায় এতো বেশি জাল পেতে রাখা হয় তাতে কুমির দীঘিতে ভাসতেই পারে না। কুমিরের উপর নির্যাতন করা হয়। সাইবোর্ড টাঙিয়ে কেউ কুমিরকে আটকে রাখে না। দীঘির যেসব ঘাটে কুমির অবস্থান করে, দর্শনার্থীরা সেসব ঘাটে দেখতে এসে খুশি হয়ে পাঁচ-দশ টাকা করে দেয়। জোর করে কারও কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় না। এই দীঘিতে কুমির না থাকলে ঐতিহ্যই নষ্ট হয়ে যাবে।’ বলেন বিনা। তিনি দীঘিতে অবৈধভাবে জাল পেতে মাছ শিকার বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মাজারের কুমিরের অসুস্থতার খবর পেয়ে এখানে আসি। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে কুমিরটি পানি থেকে উপরে তোলা হয়। কুমিরটির ডান চোখ বেশ কিছুদিন আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। বাম চোখটিও মেলতে পারছে না। এই চোখটি ভাল আছে কিনা তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তার চোখ যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা তার চলাফেরা আচরণে বোঝা যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে তার চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে। কুমিরটিকে উপরে রেখে কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। কুমিরটির সুচিকিৎসার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা আমরা করব।’

কুমিরটির অসুস্থতার কারণ কী জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, তার অসুস্থতা স্বাভাবিকভাবে হয়নি। কুমির যদি কাউকে আক্রমণ করে তাহলে চোখে আঙুল দিলে সে দুর্বল হয়ে পড়ে আক্রমণকারীকে ছেড়ে দেয়। এই ধরনের হস্তক্ষেপে কুমিরটি আঘাত পেতে পারে। দীঘিতে পেতে রাখা জালে বেঁধে বা মানুষের আঘাতে কুমিরের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাগেরহাট প্রাণিসম্পদ বিভাগের জেলা কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৫ দিন আগে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কুমিরের অসুস্থতার খবর পেয়ে দীঘিতে আসি। এরপর অসুস্থ কুমিরটিকে উঠানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। বনবিভাগ ও স্থানীয় খাদেমদের সহযোগিতায় কুমিরটিকে পানি থেকে তোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, খেতে না পারার কারণে কুমিরটি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার শরীরিক দুর্বলতা দূর করতে ইতোমধ্যে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বেশ আগে থেকেই কুমিরটির ডান চোখ নষ্ট হয়ে আছে। বাম চোখটাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চোখটা না মেলার কারণে তা পরীক্ষা করা যায়নি। তার চিকিৎসার জন্য নিরাপদ স্থানে রেখে তাকে খাবার দেয়া হবে। তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এর পরেই জানা যাবে কী কারণে কুমিরটি অসুস্থ হয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, মাজারের দীঘিতে বর্তমানে দুটি কুমির রয়েছে। প্রায় ১৫ দিন আগে একটি পুরুষ কুমির অসুস্থ হয়ে পড়ে। কুমিরের অসুস্থতার খবর পেয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগকে কুমিরের চিকিৎসা দিতে বলা হয়। তারা কুমিরটিকে দীঘি থেকে তুলে চিকিৎসা দেয়া শুরু করেছে। কুমিরটি আগে সুস্থ হোক। কুমিরের অসুস্থতার প্রকৃত কারণ জানার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/৮জুলাই/এসএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

আমাদের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেন প্রধানমন্ত্রী: অর্থ প্রতিমন্ত্রী

সাতক্ষীরায় পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু

উপজেলা নির্বাচন: মির্জাপুরে ১২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল

চিরনিদ্রায় শায়িত পাইলট আসিম জাওয়াদ

বরিশালে মাদকসহ চার নারী-পুরুষ গ্রেপ্তার 

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লড়াইয়ে ছাত্রলীগ সর্বতোভাবে পাশে থাকবে: গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী

দিনাজপুরে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা: আহত ২৫

উপজেলা নির্বাচন: চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা

চাঁদপুরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা, বেনাপোলে আটক

মানিকগঞ্জে পৌঁছেছে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট আসিম জাওয়াদের মরদেহ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :