১৫ বছর ধরে মাটির গর্তে শেকলবন্দি রবিউল

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ জুলাই ২০২১, ২০:১৮
অ- অ+

হাসিখুশি ও করিতকর্মা রবিউলের জীবন ১৫ বছর ধরে মাটির গর্তে শেকলবন্দি। সামান্য জ্বর থেকে শরীরে নানা উপসর্গ, আর এখন সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন এই তরুণকে নিয়ে দিশেহারা তার নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার। মায়ের কান্না, বাবার ভাবনা কোনো কিছুই আর ছোঁয় না এই তরুণের হৃদয়-মনকে। পরিবারের অসহায়ত্ব আর রাষ্ট্রের সঠিক নজরদারির অভাবে এখানে বিপন্ন হয়ে পড়েছে মানবতা।

ফরিদপুরে বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের পশ্চিম চরবর্ণি গ্রামের বাসিন্দা এই তরুণের নাম মো. রবিউল মোল্লা (৩৫)। তিনি গ্রামের ভ্যানচালক মো. নুরুল মোল্লার তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়।

সরেজমিনে শুক্রবার এই তরুণের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মনভাঙা এক দৃশ্য। বাড়ির পরিত্যক্ত চৌচালা একটি টিনের ঘরে মাজায় তালাসহ শেকল লাগানো রবিউলকে পাওয়া গেলো প্রায় ছয় ফুট গভীর মাটির গর্তে। এখানেই আলো-বাতাস ছাড়া দিন-রাত কাটে তার।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত ১৫ বছরের শেকলবন্দি জীবনে ঘরটির মাটির মেঝে হাত দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে রবিউল নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন নিজের এই পৃথিবী। অর্থ্যাৎ চার দিকে প্রায় ১১ ফুট ব্যাসের ও ছয় ফুট গভীর গোলাকার মাটির এই গর্ত। রবিউলের হাতের নখ ও আঙুল ব্যবহার করে তৈরি বড়সড় গর্তটি যেন একটি বাংকারেই রূপ নিয়েছে। পরিবারের বসবাসে পরিত্যক্ত এই টিনের ঘর প্রায় ২৬ হাত লম্বা ও আট হাত চওড়া।

রবিউলকে দেখতে কৌতুহলী হয়ে আসে আশে-পাশের অনেকেই। এদের কেউ শিশু, কেউবা বৃদ্ধ। কিন্তু রবিউলের কোনো স্বাস্থ্যসুরক্ষার ব্যবস্থা হয়নি আজও। তাই এই মাটির গর্তে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তার হয়নি সুচিকিৎসার ব্যবস্থা।

রবিউলের মা আসমানী বেগম বলেন, রবিউলের সাত-আট বছর বয়সে জ্বর হয়েছিল। অসুস্থতার পর আস্তে আস্তে তার হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। পরিবারের সাধ্যমতো ডাক্তার-কবিরাজ সব দেখানো হলেও আর সুস্থ স্বাভাবিক হয়নি সে। এখন শীত-গরম কোনো অনুভূতিই তার শরীরে নেই। তাই শরীরে কখনোই কোনো কাপড় রাখে না রবিউল।

রবিউলকে দেখতে আসা লোকজন জানালেন, রবিউলের পরিবারের এই অসহায় অবস্থা দেখে ভালো লাগে না। সমাজের কেউ একটু এগিয়ে আসে না তাদের পাশে। তারা মনে করেন সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে হয়তো রবিউলও অন্যদের মতো জীবন-যাপন করতে পারবেন।

বোয়ালমারীর ময়না ইউপি চেয়ারম্যান নাছির মো. সেলিম এ বিষয়ে বলেন, ‘ওর পরিবার অসহায়। ওকে ছেড়ে দিলে দূরে চলে যায়, এ কারণে ওর পরিবার বাধ্য হয়েই বেঁধে রেখেছে। তবে এভাবে বেঁধে রাখা ঠিক হয়নি।’

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ জানান, ‘বিষয়টি সোস্যাল মিডিয়াতে রবিউলের বিষয়টি আসার পরে আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তার পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে (রবিউলকে) চিকিৎসার জন্য সহায়তা করবে।

মাটির গর্তে বেঁধে রাখার বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘কাজটি ঠিক হয়নি। এটা একটা মানুষের জন্য তার ওপর অন্যায় কাজ করা হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
"হাতে হারিকেন ধরিয়ে জাহান্নামে পাঠানো হবে!" — চাঁদাবাজি নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার হুঁশিয়ারি
মিডফোর্ডের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিএনপিকে দায় চাপানো অপরাজনীতি: সালাহউদ্দিন
মিডফোর্টে পাথর মেরে হত্যা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে: জামায়াত
মিটফোর্ড হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি বিএনপি মহাসচিবের
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা