বিষধর সাপ চিনবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৪৪ | প্রকাশিত : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৪২

সাপ সরীসৃপ নিরীহ প্রাণী এবং তার বিষ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে সব বিষাক্ত নয়। তবে কিছু রয়েছে যারা অত্যন্ত বিষাক্ত। তাই সময়মতো সাপের কামড়ের চিকিৎসা করলে অল্প সময়েই সুস্থ হওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশে থাকা সাপের মধ্যে সাত থেকে আট প্রজাতির অত্যন্ত বিষধর। এদের কামড়ে মানুষ মারা যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। মূলত দেশের গ্রামাঞ্চলেই সাপের উপদ্রব ও সাপের কামড়ে মানুষের মারা যাওয়ার সংখ্যা বেশি। এছাড়া দেশে ২৩ প্রজাতির সামুদ্রিক সাপও রয়েছে যারা সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের কামড় দেয় বা দংশন করে।

বাংলাদেশে থাকা অত্যন্ত বিষাক্ত সাপের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে শঙ্খচূড় বা রাজ গোখরা, কেউটে বা গোখরা, চন্দ্রবোড়া, শঙ্খিনী ইত্যাদি। বিষহীনদের তালিকায় রয়েছে জলঢোড়া, দাঁড়াশ।

শোনা যায়, বিষাক্ত সাপের চোখের মণি একটু লম্বাটে হয় এবং বিষদাঁত গুলোও বেশ লম্বা হয়। অন্যদিকে বিষহীন সাপের চোখের আকার গোল হয়। এদের দাঁত থাকলেও তাতে বিষগ্রন্থী থাকে না।

মূলত সাপের বিষ হলো এক ধরনের লালা জাতীয় পদার্থ। এর প্রধান উপাদান হলো প্রোটিন, যা সাপের বিষের সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদানও। প্রোটিন ছাড়াও সাপের বিষে রয়েছে এনজাইম। এই এনজাইম ক্ষতির একটি বড় কারণ হতে পারে। সাপের কামড়ে বিষের মধ্যে থাকা এনজাইম মানুষের দেহের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, নিউক্লিওটাইড ফসফোলিপিডকে ভাঙতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এই বিষ রক্তের লোহিত কণিকাকেও ভেঙে দেয় এবং রক্তচাপ কমিয়ে দেয় এবং পেশীর নিয়ন্ত্রণে বাঁধা প্রদান করে।

প্রোটিন ও এনজাইম ছাড়াও সাপের বিষে থাকে নিউরোটক্সিন ও জিংক সালফাইডের মতো অন্যান্য রাসায়নিক যৌগ। এর মধ্যে নিউরোটক্সিন খুবই বিষাক্ত ও ক্ষতিকর একটি উপাদান।

সাপের বিষের অন্যতম উপাদান হল প্রোটিন ও এনজাইম। এই এনজাইম নাকি মানুষের ক্ষতি করে। লোহিত কণিকাকে ভেঙে ফেলে। যার ফলে রক্তচাপ ভীষণভাবে কমে যায়। পেশি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এছাড়াও নিউরোটক্সিন নামের পদার্থ থাকে যা অত্যন্ত বিষাক্ত বলেই জানা গিয়েছে।

বিষ শরীরে প্রবেশ করলে কী হবে?

সাপের বিষ শরীরে ঢুকলে শরীর আস্তে আস্তে অবশ হতে থাকবে। যেখানে সাপ কামড়েছে তা প্রবল জ্বালা করতে শুরু করবে। আর এই জ্বালা বাড়তে থাকবে। ক্ষতস্থান ক্রমাগত ফুলে উঠবে। আশেপাশের সমস্ত কিছু ঝাপসা দেখতে শুরু করবেন। ঢোক গিলতে গেলে অসুবিধা হবে। মাথাঘোরা, বমি ভাব থাকবে।

সবার আগে সাপের কামড় খাওয়া মানুষকে আশ্বস্ত করবেন। সাপের কামড় মানেই মৃত্যু নয়, তা বোঝাতে হবে। ক্ষতস্থান খুব সাবধানে পরিষ্কার ভেজা কাপড় বা জীবাণুনাশক লোশন দিয়ে মুছে দেবেন। শরীরের বাকি স্থানে যাতে বিষ ছড়াতে না পারে, তার জন্য ক্ষতস্থানের উপরের অংশ বেঁধে দিতে হবে।

রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাছের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সম্ভব হলে কোন প্রজাতির সাপ কামড়েছে। তা জানার চেষ্টা করবেন।

সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে কী কী করবেন না?

ক্ষতস্থানটি বেশি নড়াচড়া করবেন না। এতে বিষ দ্রুত ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। ধারাল অস্ত্র দিয়ে কেটে ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত করানোর চেষ্টা করবেন না।

চুষে বিষ বের করার চেষ্টাও কখনও করবেন না। অ্যাসিড জাতীয় কিছু জিনিস দিয়ে ক্ষতস্থান পোড়ানোর চেষ্টা করবেন না। ক্ষতস্থানে চুন বা গাছ-গাছড়ার রসও দেবেন না। জোর করে বমি করানোর চেষ্টা করানোও উচিত নয়।

বিষধর হোক বা বিষহীন, সাপের কামড় খেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। অযথা ভয় পাবেন না বা না জেনে নিজে নিজে চিকিৎসা করতে যাবেন না।

বিষাক্ত বিষহীন সাপ চেনার উপায়

চোখের মণি দেখতে লম্বাটে। লম্বাটে বিষদাঁত রয়েছে। লম্বাটে বিষদাঁতের মাধ্যমে কামড় দিয়ে মানুষের দেহে বিষ ঢুকিয়ে দেয়।

বিষহীন সাপ চেনার উপায়

দাঁত আছে কিন্তু বিষগ্রন্থি নেই। চোখের মণি গোলাকার। লম্বাটে বিষদাঁত নেই।

সাপ তাড়ানোর উপায়

বিষাক্ত সাপের কামড় মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। আবার বিষহীন সাপকেও মানুষকে অনেক সময় না বুঝে ভয় পেয়ে মেরে ফেলে। তাই দুইদিক বিবেচনা করেই সাপকে মারার চেয়ে তাড়িয়ে দেওয়া ভালো। প্রাকৃতিক কিংবা এসিড দিয়ে দুইভাবেই সাপকে তাড়ানো যায়।

সাপ তাড়ানোর অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হল কার্বলিক এসিড। ঘরের চারপাশে কার্বলিক এসিড ছিটিয়ে রাখলে সাপ আসে না ঘরে।

যদি কার্বলিক এসিড না পাওয়া যায় তাহলে করণীয় কি? এসিড পাওয়া না গেলে কার্বলিক এসিড যুক্ত সাবান দিয়ে কাজ চালানো যায়।

এছাড়াও সালফারের গুঁড়া বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দিলে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। সালফারের গুঁড়া সাপের ত্বকের জ্বালার সৃষ্টি করে। তাই সাপ এ থেকে দূরে থাকে।

প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপায়েও সাপ তাড়ানো যায়। এবার সে বিষয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক।

রসুন একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান। রসুন পেস্ট করে এর সাথে যেকোনো তেল মিশিয়ে একদিন রেখে দিয়ে বাড়ির চারপাশে স্প্রে করে দেয়া যেতে পারে।

বাড়ির চারপাশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখলে সাপের আনাগোনা থাকবে না। বাড়ির চারপাশে কোনো ঝোপঝাড় হতে দেওয়া যাবে না এবং কোনো প্রকার পানি জমতে দেওয়া উচিৎ নয়।

সাপের চামড়া দামী হওয়ায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে সাপের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। এছাড়া পরিবেশ দূষণের কারণেও অনেক সাপ মারা যাচ্ছে। তাই সাপের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধ করা খুবই জরুরী।

(ঢাকাটাইমস/২৭ডিসেম্বর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :